ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচন

আজ চেম্বার জজ আদালতে ভাগ্য নিধারণ হবে চকরিয়া উপজেলার সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়বের

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
আগামীকাল ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচন। অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনের একদিন আগে আজ ১৬ অক্টোবর সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী আলহাজ আবু তৈয়বের। দুইটি ফৌজদারি মামলায় আসামি হবার পরও সদস্য প্রার্থী আবুৃ তৈয়ব দাখিলকরা নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন, এমন অভিযোগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আপীল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন অপর সদস্য প্রার্থী এডভোকেট জাহাংগীর আলম। গত ২২ সেপ্টেম্বর শুনানীতে আপীল কর্তৃপক্ষের প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড.প্রকাশ কান্তি চৌধুরী চকরিয়া উপজেলার সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়বের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষনা করেন।
জানা গেছে, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের ওই আদেশের বিপক্ষে হাইকোটে আপীল করেন সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়ব। শুনানীতে উচ্চ আদালত আবু তৈয়বের প্রার্থীতা বহাল ঘোষনা করেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোটের চেম্বার জজ আদালতে আপীল করেন অপর সদস্য প্রার্থী এডভোকেট জাহাংগীর আলম। এরই প্রেক্ষিতে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম এর নেতৃত্বে চেম্বার জজ আদালত সর্বশেষ শুনানীতে সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়বের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষনা করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন এবং বিষয়টি নিয়ে ১৬ অক্টোবর পুনার্ঙ্গ শুনানীর দিনধার্য্য করেন।
চেম্বার জজ আদালতের ঘোষনা মোতাবেক আজ ১৬ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়বের প্রার্থীতা নিয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে আপীল মামলার বাদি ও চকরিয়া উপজেলা সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী এডভোকেট মো.জাহাংগীর আলম বলেন, বিজ্ঞ আদালতের শুনানীতে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি। কারণ সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়ব হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আমি সেই সত্য ঘটনাটি আদালতের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার সম্মাণিত ভোটাররা একজন শিক্ষিত সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিজয়ী করবেন ইনশাল­াহ।
অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলা সাধারণ ওর্য়াড (নং ৬) থেকে মোট প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া (বৈদ্যুতিক পাখা), জেলা পরিষদের চকরিয়া মাতামুহুরী অঞ্চল থেকে নির্বাচিত সাবেক সদস্য আলহাজ্ব আবু তৈয়ব (টিউবওয়েল), জেলা পরিষদের চকরিয়া বমুবিলছড়ি ডুলাহাজারা ফাসিয়াখালী অঞ্চল থেকে নির্বাচিত সাবেক সদস্য অধ্যাপক সোলতান আহমদ (ঘুড়ি), চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক প্রকাশ নুরু চেয়ারম্যানের বড়ছেলে ও সুরাজপুর মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিমের ভাতিজা এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (তালা) ও উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফয়সল চৌধুরী (হাতি)।
আইনী জটিলতার কারণে সদস্য প্রার্থী আবু তৈয়ব প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা থেকে বিরত থাকলেও প্রতিদ্ব›িদ্ব অপর সদস্য প্রার্থীরা গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ভোটার (চেয়ারম্যান মেম্বারদের) সঙ্গে দফায় দফায় কুশল বিনিময় ও মতবিনিময় সভা চালিয়ে গেছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামাজিক পরিমণ্ডলেও ভোটের আবহ নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।
অপরদিকে চকরিয়া উপজেলা (চকরিয়া পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত) ৭নং সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তারা হলেন কক্সবাজার ১ (চকরিয়া পেকুয়া) আসনের সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলমের বড়মেয়ে তানিয়া আফরিন (দোয়াত কলম), কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পাটি কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি আসমাউল হোসনা ( টেবিল ঘড়ি), জেলা পরিষদের সাবেক নারী সদস্য চকরিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রেহেনা খানম রাহু (ফুটবল) ও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি ছাদেকুর রহমান ওয়ারেসীর পুত্রবধু শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার (উটপাখি)।
সরেজমিনে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকরিয়া পেকুয়া কুতুবদিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ৭নং ওয়ার্ডে চারজন প্রার্থীর মধ্যে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন সাংসদ জাফর আলমের মেয়ে তানিয়া আফরিন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ও বাবার ব্যক্তিগত ইমেজ তাকে জয়ের ব্যাপারে এগিয়ে নিয়েছেন। আবার লেখাপড়ায় ডিগ্রিধারীও তিনি। সবমিলিয়ে তানিয়া ভোটারদের বেশ উৎসাহও পাচ্ছেন।
ভোটারদের অভিমত, চকরিয়া উপজেলার সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মুলত ভোটযুদ্ধে হবে দুইজনের মধ্যে। তাদের মধ্যে একজন তানিয়া আফরিন, অন্যজন জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আসমা উল হোসনা। কক্সবাজারে নারী নেতৃত্বে অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র স্বভাবে অধিকারী হিসেবে আসমা উল হোসনা সবার কাছে পরিচিতি। ভোটার (জনপ্রতিনিধি) এবং সাধারণ জনগনও তাকে ভালো জানেন। কিন্ত সেই তিনি এবারের নির্বাচনে কঠিন সমীকরণের মুখোমুখি হয়েছেন সাংসদ জাফর আলমের মেয়ে তানিয়া প্রার্থী হবার কারণে।
তবু জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি জেলা পরিষদের সদস্য প্রার্থী নারী নেত্রী আসমা উল হোসনা। তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে পাঁচবছর নির্বাচনী এলাকার জনগনের সু:খ দু:খে পাশে ছিলাম। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। চলার পথে সবাইকে সম্মাণ দিতে চেষ্ঠা করেছি। আশাকরি সম্মাণিত ভোটাররা কর্মকাণ্ডের মুল্যায়ন করবেন, আমাকে বিজয়ী করবেন।
নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার সাধারণ ওয়ার্ড (নং ৬) ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড (নং ৭) এর চকরিয়া উপজেলা অংশের ভোটাররা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন মোহনায় স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সহায়তায় ভোট কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকাল দুইটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট ভোটার ২৪৭জন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে মোট দুইশত ৫০জন ভোটার।
তবে ভোটারদের মধ্যে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রমজান আলী পরিষদের সচিব ও গ্রাম পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলার আসামি হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রানালয় কর্তৃক বরখাস্ত হবার কারণে ভোট দিতে পারবেনা বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়।

পাঠকের মতামত: