ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন : বাদ পড়ছেন ৭০ এমপি!

অনলাইন ডেস্ক :: 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সর্বশেষ জরিপ রিপোর্ট ও বর্তমান এমপিদের আমলনামা এখন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। মনোনয়ন চূড়ান্তের আগে এসব প্রতিবেদন চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন তিনি। কোন আসনে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, সেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। এমনকি গ্রিন সিগন্যালও দেয়া হয়নি কাউকেই।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হলে, পরের সপ্তাহেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। জানা গেছে, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের অন্যান্য শরিকদের জন্য এ বছর ৭০টি আসন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আওয়ামী লীগের। বাকি ২৩০টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবেন। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারো তিনটি আসনে নির্বাচন করবেন। দলের সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রীরা প্রত্যেকেই একটি করে আসনে প্রার্থী হবেন। তবে শরিকদের ছেড়ে দেয়া আসনের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ পর্যন্ত যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; প্রতিটি নির্বাচনেই ৬০ থেকে ৭০টি আসনে দলের প্রার্থিতা পরিবর্তন করা হয়েছিল।

এবছরও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। বার্ধক্য, নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক, সন্ত্রাস, দলীয় কোন্দল সৃষ্টি ও অনৈতিকভাবে বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন এমন সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় প্রধান। বিতর্কিত এসব ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে ফলাফল নৌকার বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি- এমনটি ভাবা হচ্ছে তীক্ষèভাবে। তবে এসব অভিযোগের কারণে শেষ পর্যন্ত শতাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলেও ধারণা করছেন কেউ কেউ।

এসব আসনে নতুন প্রার্থী দেয়া হবে, যাদের তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা ও বিজয়ী হয়ে আসার সক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতা, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনে যাদের সুখ্যাতি রয়েছে এমন প্রার্থীকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। জানা গেছে, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় সরকারদলীয় বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই নানাভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকের মধ্যে স্বেচ্ছাচারী আচরণ, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, বিএনপি ও জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা, চাকরি ক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতি, নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব, এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা, দীর্ঘদিন নিজ এলাকায় না যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের সম্পর্কে কয়েকদফা খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। এসব প্রার্থী এবার কোনোভাবেই নৌকার মনোনয়ন পাবেন না। সেক্ষেত্রে কোনো লবিংও আমলে নেয়া হবে না। তৃণমূলের মতামত ও জনপ্রিয়তায় যিনি এগিয়ে আছেন তিনিই নৌকার মনোনয়ন পাবেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, পাঁচ বছর পর পর অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনে নানা কারণে প্রার্থিতা পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। এ বছরও সেটির ব্যতিক্রম হবে না। রাজনীতিতে নতুনদের জায়গা করে দিতেই সাধারণত এ ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তবে বর্তমান সংসদ সদস্যদের কয়েকজন ছাড়া মোটামুটি সবার অবস্থান নিজ নিজ এলাকায় এখন ভালো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বা যারা জনবিচ্ছিন্ন; তারা কোনোভাবেই মনোনয়ন পাবেন না। তবে নতুনদের মধ্যে এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণির জনপ্রিয় ব্যক্তিরা মনোনয়ন পেতে পারেন।

মনোনয়নে গ্রিন সিগন্যালের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমার জানামতে কোনো প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়নি। তবে হ্যাঁ, অনেক প্রার্থীকে সংশোধান ও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে যেসব তালিকা প্রকাশ হতে দেখা গেছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা চাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় থেকে প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত নিয়ে জেলা কমিটি কেন্দ্রের কাছে তালিকা পাঠিয়ে দেবেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সুত্র: ভোরের কাগজ

পাঠকের মতামত: