কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে যেকোনো আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। ২০২৬ সালের মধ্যে বন্দরে পুরোদমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। বন্দরটির নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি।
রোববার (২২ জানুয়ারি) সকালে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখতে মহেশখালীর মাতারবাড়ি পরিদর্শনকালে সন্তোষ প্রকাশ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় দল। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অন্তত ১০ জন সংসদ সদস্য এই পরিদর্শন দলে ছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান তাদের পুরো এলাকা ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় দল কে পুরো কার্যক্রম ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে এবং বিস্তারিত তথ্যগুলো তুলে দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের কাজের অগ্রগতি দেখেছেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এম শাহজাহান বলেন, “সিডিউল অনুযায়ী আশা করছি, ২০২৬ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের টার্মিনালে প্রথম জাহাজ আনতে পারব। বর্তমানে যে বৈশি^ক অবস্থা রয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মহামারি যদি স্বাভাবিক হয়ে আসে তাহলে আশা করা যায়, ২০২৬ সালের মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের টার্মিনালটা অপারেশনে আনা সম্ভব।
সরজমিনে দেখা যায়, একসময়ের বিস্তীর্ণ লবণের মাঠ, কিংবা সাগরের নোনাজলে ডুবে থাকা কাদামাটির অঞ্চল এখন বালিমাটির ময়দান। বড় বড় লোহার পাইপ দিয়ে সাগর থেকে আনা মাটিতে গড়ে উঠছে একেবারে নতুন ভূমি। গড়ে উঠছে এশিয়ার বিজনেস হাব মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।
বৈশ্বিক নানা জটিলতায় বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছিল। মাতারবাড়িতে জাইকার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু হলে বন্দরের জট খুলে যায়। যেহেতু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজ ভেড়াতে জেটির দরকার, তাই এখানেই এখন বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে।
এখন পর্যন্ত মাতারবাড়িতে বন্দর হিসেবে কোনো স্থাপনাই গড়ে ওঠেনি। শুধু মাটি ভরাটের পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি অস্থায়ী জেটি। আর এর মাঝেই ১১১টি জাহাজ ভিড়িয়ে অনন্য রেকর্ড করেছে মাতারবাড়ি বন্দর। তাতে অন্তত ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। অর্থাৎ, বন্দর হিসেবে গড়ে ওঠার আগেই আয়ের পথ খুলে ছিল মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রথম জেটিটি নির্মাণ শেষে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি ভেনাস ট্রায়াম্প‘ প্রথমবারের মতো ভিড়েছিল। পরবর্তীতে নির্মিত দ্বিতীয় জেটিতেও ২০২১ সালের ১৫ জুলাই জাহাজ ভেড়ে। আর ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পাশেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ‘এমভি হোসেই ফরচুন’ নামের জাহাজটি ভেড়ে। যা নির্মিত জেটিতে শততম জাহাজ ছিল। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের আগে থেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আহরণ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের মতো পরিকল্পিত নগরে পরিণত হবে পুরো মহেশখালী দ্বীপাঞ্চল।
পাঠকের মতামত: