কক্সবাজার প্রতিনিধি :: হরতাল-অবরোধে মৌসুমের শুরুতেই কক্সবাজারে পর্যটন খাতে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলার ডাকা হরতাল ও অবরোধে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার।
এমন পরিস্থিতিতে বেশি ছাড়ের পাশাপাশি নানান সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও পর্যটনের ভরা মৌসুমে আশানুরূপ সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। এতে প্রত্যাশিত পর্যটক না থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা।
এদিকে পর্যটন খাতকে হরতাল ও অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় হতাশ কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, গেল এক সপ্তাহে কক্সবাজারের পর্যটন খাতে কয়েকশ’ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বুধবার বিকালে সরজমিন সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকশূন্য কক্সবাজার সৈকত, চারদিকে নীরবতা। সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। নভেম্বর-ডিসেম্বরে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে সাগর সৈকত। কিন্তু পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার সৈকত। এতে বিপাকে পড়েছে সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, ঘোড়াওয়ালা ও কিটকট ব্যবসায়ীরা।
সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার মনিয়া বলেন, বছরের কয়েকমাস পর্যটন মৌসুম। এ কয়েকমাসের জন্য আমরা আশায় বুক বেঁধে থাকি। কিন্তু এখন দেখি ভরা মৌসুমও পর্যটকশূন্য। গেল ১ সপ্তাহ ধরে সৈকতে আসছি আর যাচ্ছি কোনো আয় হচ্ছে না। কারণ হরতাল ও অবরোধের কারণে সৈকত এখন পর্যটকশূন্য।
বিচ বাইকচালক করিম বলেন, অক্টোবরে কয়েকটা দিন ভালো গেছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় হামুন, বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধের কারণে গেল এক সপ্তাহ ধরে পর্যটক না থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না। কিটকট ব্যবসায়ী জসিম বলেন, বালিয়াড়িতে ২০টি চেয়ার রয়েছে। গত ৫ দিনে ধরে ২০০ টাকার বেশি আয় করতে পারিনি। হরতাল-অবরোধে আমাদেরকে একদম শেষ করে দিয়েছে।
সৈকতপাড়ে রয়েছে সহস্রাধিক বার্মিজ পণ্যের দোকান। পর্যটকশূন্যতার কারণে ব্যস্ততা নেই এসব দোকানদারেরও। তারা বলেছেন, পর্যটন মৌসুমে শুরুতেই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। ছাতা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন দুলাল বলেন, ছাতা মার্কেটে ২০০’র মতো দোকান রয়েছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার বার্মিজ পণ্য বেচাবিক্রি হতো। কিন্তু এখন বেচাবিক্রি একদম নেই বললেই চলে। প্রতিদিনই ৩ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
পর্যটনের সুবাদে কক্সবাজারে রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস ও কটেজ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যটক না থাকায় নেমে এসেছে নীরবতা। হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, হরতাল- অবরোধের প্রভাব পড়েছে হোটেল ব্যবসায়। যা বর্ণনা করার মতো নয়।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে হোটেল ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। তিনি পর্যটন শহর কক্সবাজারকে হরতাল অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।
হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, ভরা মৌসুমে পর্যটক না থাকাটা হতাশার বিষয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ হলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। মূলত কক্সবাজার পর্যটন নির্ভর জেলা। এখানকার অনেকেই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করবো তারা যাতে পর্যটন খাতকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে কক্সবাজারের পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় কক্সবাজার এখন পর্যটকশূন্য। যার ফলশ্রুতিতে কক্সবাজারের পর্যটনের সবখাতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন হরতাল ও অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি যাতে আর না দেন।
পাঠকের মতামত: