ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

স্বাধীনতা যুদ্ধে ককসবাজার-বান্দরবানের সম্মুখযুদ্ধের একমাত্র শহিদ শহিদ লাপ্রে মুরুং পরিবারকে ৪৫ বছর পর হদিস : তোলপাড়

pic-24-3-218x300মাঈনুদ্দিন খালেদ :
ঊনিশো একাত্তর সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে  ককসবাজার ও বান্দরবান জেলায় সম্মূখ যুদ্ধের একম্াত্র শহিদ লাপ্রে মুরুং পরিবারের হদিস পেয়েছেন তার সহযোদ্ধারা। মিয়ানমার সীমান্তের দূর্গম ও গহীনঅরণ্য ঘেরা পাহাড়ী গ্রাম কুরুপপাতা ঝিরি এলাকা থেকে উদ্ধারের পর এ পরিবারের একমাত্র সদস্য সিনতন মুরুং কে  নিয়ে এনে গতকাল বৃস্পতিবার বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছান এ মুক্তিযোদ্ধা দলটি। নাইক্ষ্যংছড়ি ইউএনও  শহিদ মুক্তিযোদ্ধার এ সন্তানকে পেয়ে যথাযথ সম্মান দিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন সাথে সাথেই। তিনি এ মুরুং সদস্যকে সাথে নিয়ে ২৬ মার্চ রাতে উপজেলা স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন বলে ঘোষনা দেন এ সময়। আর একই দিন দুপুরে তাকে সহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সংর্বধনাও প্রদান করবেন বলে জানিয়ে দেন এ সময়। রাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে এভাবে তৎক্ষনাৎ একজন শহিদ পরিবারের প্রতি সম্মান দেখানোর তৎপরতায় নিজেকে সম্মানিত মনে করছেন সিনতন মুরুং।
অনুসন্ধানকারী দলের প্রধান সাবেক রামু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার  মুজাফ্ফর আহমদ ও মুক্তিযোদ্ধা রমেশ বড়–য়া জানান, ককসবাজার ও বান্দরবানের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটি ছিল বর্তমান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের আলিক্ষং নতুন মুরুং পাড়া এলাকায়। প্রায় অর্ধ-শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা এখানে অবস্থান করে পাকিস্থানি হানাদার ও তাদের দোসরদের উপর সুযোগ বুঝে হানা দিতেন লামা থেকে ককবাজার-রামু-টেকনাফ পর্যন্ত। তারা সে রকম এক আঘাত হানেন ককবাজারের  ঈদগাঁওতে। দিনটি ছিল বুধবার। ১৯৭১ সালের শেষ সপ্তাহের বুধবার রাতের এ ঘটনার পর শুক্রবার ভোর রাতেই হানাদার বাহিনী স্বশস্ত্র অবস্থায় অতর্কিত হামলা শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের এই অ্ঞ্চলের একমাত্র এ  ঘাঁটিতে। সেদিন এ ঘাটিতেঁ অবস্থান করছিল ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। যেখানে ছিল শহিদ মুক্তিযোদ্ধা লাপ্রে মুরুংও। তিন শতাধিক হানাদারের সদস্য সেদিন এ আলিক্ষ্যং ঘাঁটিঁ ধ্বংসের মিশনে অংশ নিয়েছিলো।  তারা আরো জানান, ২ ঘন্টার সম্মুখ যুদ্ধে হানাদারের দলে মারা যায় ১০ জন আর মুক্তিবাহিনীর পক্ষে মারা যান একজন। আর তিনি হলেন এই লাপ্রে মুরুং। সেদিন তাকে নির্মমভাবে শহিদ করে পাষানের দল।
লাপ্রে মুরুং এর একমাত্র পুত্র সিনতন মুরুং জানান, তার পিতাকে হানাদার বাহিনী অন্তত ৫ টি গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে ২৫  ঘরের পুরো পাড়াটি জ্বালিয়ে দেয় তারা। তাদের ৬ শ’ আরি সহ মোট ২ হাজার আরি ধান পুড়ে ছাই হয়ে যায় সেদিন। ধ্বংসষজ্ঞ চালানোর পর হানাদার বাহিনী ফিরে গেলেও এ গ্রামের মুরুং’রা সে গ্রামে আর ফিরে আসে নি।  তিনি আরো জানান, পিতাকে হারিয়ে পুরো পরিবার গ্রামছাড়া হয়ে পাহাড়ের পর পাহাড় শুধু ঘুরে বেড়িয়েছেন ৪৫ বছরে। স্বাধীনতার জন্যে বাবা কে হারিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবার প্রথমে যান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৮২ নম্বর কামিরছড়া মৌজার রেয় পাড়ায়, ’৯৮ সালের পর এখান থেকে যান সেই মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আলীকদম উপজেলার চাইম্প্রা মৌজার ক্রিওয়াই পাড়ায়। এরও কয়েক বছর পর তারা আবার ও স্থান বদল করে যান বর্তমান কুরুপ পাতা ঝিরি গ্রামে। এ প্রক্রিয়ায় মা’কে,৩ বোনকে হারিয়ে এখন নিজের স্ত্রী ও ২ সন্তানকে নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।  তিনি আরো জানান, এ লম্বা সময়ে তার পরিবার জুম চাষের সাধ গ্রহন করে জীবন বাচিয়েছেন শুধু-স্বাধীনতার সাধ কী জিনিস এখনও বুঝতে পারেননি কোনভাবেই। তার বাবা স্বাধীনতার জন্যে জীবন দিলেও এখনও রাষ্ট্রের কোন সুযোগ সুবিধা তারা গ্রহন করেননি স্বাধীনতার ৪৫ বছরে। রামুর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজ্ঞামিত্র ভান্তের সহায়তায় এবং নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকজন সাংবাদিকের মাধ্যমে তিনি এখন রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশা করছেন বর্তমানে।

পাঠকের মতামত: