ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

সোনাদিয়ায় প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণে উদ্বেগ, দখলবাজদের শাস্তি দাবী

DC-Office-Pic-2ইমাম খাইর :::
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়ায় অবাধে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়। একই সঙ্গে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজে জড়িত লোকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী ওঠে প্রশাসনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী এই সভায়। রবিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজী মোহাম্মদ আবদুর রহমান।

সভায় সরকারী বিভিন্ন দপ্তরভিত্তিক আলোচনার এক পর্যায়ে ওঠে আসে উপকূলের বনবিভাগের ভূমিকার কথা। এ সময় উপেন হাউজে কথা বলেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী। তিনি বলেন, মহেশখালীর সোনাদিয়া উপকূলে গত কয়েক দিন ধরে নির্বিচারে প্যারাবন কাটা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। ঘটনার মূল হুতাদের আড়ালে রেখে সাধারণ শ্রমিকদের নামে মামলা করা হচ্ছে। তাতে বনকর্মকর্তাদের রহস্যজনক আচরণ প্রস্ফূটিত হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক নেতা আবু তাহের চৌধুরীর বক্তব্যের সঙ্গে একাতœতা পোষণ করেন সভায় উপস্থিত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন। তারা প্রকাশ্যে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণে তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত সকলেই এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানায় এবং এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

সভায় একই বিষয়ে কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। বনকর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় ফ্রি-স্টাইলে প্যারাবন কেটে শেষ করে ফেলা হচ্ছে। অথচ এতে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে আপনাদের কোন এ্যাকশান নেই কেন? রাঘববোয়ালদের নাম ধরতে কিসের ভয়? সঠিকভাবে সরকারী দায়িত্ব পালন করুন। জনগণের অধিকার নিয়ে ভাবুন। প্রতিদান অবশ্যই পাবেন।

এ সময় উপকূলীয় বনকর্মকর্তা গোলাম কবির জানান, তাদের লোকবল কম। বাঁধা দিতে গেলে দখলবাজরা স্বশস্ত্র মহড়া দেয়। অনেক সময় অভিযানে যাওয়ার আগেই প্যারাবন নিধনকারীরা পালিয়ে যায়। এরপরও চিহ্নিত লোকজনের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি সভাকে অবহিত করেন। তবে, মূল হুতাদের বাদ দিয়ে চুনোপুড়িদের নামে মামলা করায় সন্তষ্ট নন উপকূলের বাসিন্দারা। তারা প্যারাবন নিধনে মূল হুতাদের তালিকা প্রকাশ করার দাবী জানান।

উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা দুঃখ করে বলেন, অনেকে কক্সবাজারকে দেওয়ার জন্য অসেন না, নেওয়ার জন্য আসেন। এ কারণে আমি প্রশাসনিক অনেক সভায় ইচ্ছে করে যোগদান করিনা। তিনি বলেন, পানি সম্পদমন্ত্রী মজার কথা বলেন। কিন্তু কক্সবাজার নিয়ে ভাবেন না। কক্সবাজারের প্রতি তাঁর মায়া-মমতা নেই। তার কাছে ৪/৫ বার গিয়েছি। উপকূলবর্তী এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। তিনি আমাদের কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বারবার। কোন কাজ হয়নি। কথায় আমাদের পেট ভরেনা। আমরা কাজ চাই। কারণ, প্রধানমন্ত্রী কাজে বিশ্বাসী।

সভায় কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, তার এলাকায় সরকারীভাবে পোষ্টিং পাওয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছেন না। সকাল ১১টার দিকে গিয়ে ৩টায় চলে যান। হাসপাতালে থাকেন না। আওটডোরে চিকিৎসা করেন। যে কারণে দ্বীপের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ বলেন, ঈদগাঁওতে ২১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল অনেক আগে থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিও হয়েছে। কিন্তু কাজ এগুচ্ছেনা। তিনি বৃহত্তর ঈদগাঁওবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী একটি হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুত ত্বরান্বিত করার আহবান জানান।

রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম তার এলাকাকে অগ্নি দূর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে ঝুলে থাকা ফায়ার স্টেশনটি অনতি বিলম্বে চালু করার দাবী তুলেন। এ জন্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। সমন্বয় সভায় তিনি ২০১৫ সালে জুন মাসে বয়ে যাওয়া বন্যায় রামু তেমুহনি জাদিমুরা রাস্তা এখনো সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল।

মহেশখালী হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স সংকটের কারণে মানুষের তীব্র দূর্ভোগের বর্ণনা দেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব মকসুদ মিয়া। আগামী এক মাসের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের জোর দাবী জানান তিনি। এ সময় চালকের বেতন পৌরসভার তহবিল থেকে দেওয়া হবে বলেও জানান মেয়র মকসুদ মিয়া। প্রস্তাবে সমর্থন জানান সিভিল সার্জন ডা. পু চ নো। তিনি দ্রত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করা হবে বলে সভাকে অবহিত করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, কক্সবাজার বিশ্বের একটি অন্যতম প্রসিদ্ধ এলাকা। সবার আন্তরিক সহযোগিতা থাকলে কক্সবাজার সারা বিশ্বের রোল মডেল হবে।

তিনি জানান, পর্যটন গলফ মাঠে যে শিশুপার্ক হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছেনা। এই জায়গা বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। সরকারী প্রয়োজনে এই জমি ব্যবহার হবে।

জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এই সভায় সরকারী জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ, পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা, পাহাড়ে বসবাসকারী জনগণ, অরক্ষিত বেড়িবাঁধ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সভায় স্বাস্থ্য বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, পানি উন্নয়ন বিভাগ, বনবিভাগ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, কক্সবাজার পৌরসভা, জেলা তথ্য অফিস, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারী সকল দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাদের কার্যক্রমের উপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

পাঠকের মতামত: