সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার :: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহালসহ সকল পর্যটন স্পট বন্ধ থাকছে। এছাড়াও বন্ধ থাকছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ।
সোমবার (২৪ মে) রাতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ।
গণপরিবহন চালু ও শর্ত সাপেক্ষে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে ৩০ মে পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ বাড়িয়ে গত রোববার এক প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এই প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহন চালু ও শর্ত সাপেক্ষে হোটেল-রেস্তোরা খোলা রাখার নির্দেশনায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল, পর্যটন স্পট ও হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশনায় এখন পর্যটন ব্যবসায়ীরা হতাশা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, করোনা সংক্রমণ কক্সবাজারে বেড়েছে। তাই রোববার রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমুদ্র সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকাসহ সকল পর্যটন স্পট ও সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস এবং কটেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
মো. আমিন আল পারভেজ আরও বলেন, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবকিছু আগের মতই চলবে। পর্যটন স্পট ও হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকবে। তবে শুধুমাত্র রেস্তোরাঁগুলো শর্ত সাপেক্ষে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে।
এদিকে সোমবারও পুরো সৈকত ছিল ফাঁকা। সৈকতের সুগন্ধা, কবিতা চত্ত¡র, কলাতলী পয়েন্টে প্রতিদিনের মতো কড়া পাহারা ট্যুরিস্ট পুলিশের। আগত দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিরুসাহিত করছে ট্যুরিস্ট। আর লাবণী পয়েন্টে অবস্থানরত বীচ কর্মীরাও মাইকিং করছে সৈকতে প্রবেশ নিষেধ।
আর কলাতলীস্থ হোটেল মোটেল জোনে দেখা গেছে; কয়েকটি রেস্তোরা খোলা রয়েছে। আবার অনেক রেস্তোরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবকিছু আগের নিয়মেই থাকছে। শুধুমাত্র রেস্তোরা খোলার বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে।
সৈকতে প্রবেশে দর্শনার্থীদের নিরুসাহিত করা হচ্ছে। প্রবেশদ্বারে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাহারা ও সৈকতের টহল আগের নিয়মেই চলছে।গেল বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। পরে সংক্রমণ কমলে সরকার বিধি-নিষেধ শিথিল করে খুলে দেয়।
কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এপ্রিলের শুরুতেই ফের লকডাউন আসে, আবার বন্ধ হয়ে যায় সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। যা এখনো জারি আছে।
এদিকে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে চরম হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে হলেও সৈকতে পর্যটকদের আসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ চকরিয়া নিউজকে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে সৈকতে পর্যটক সমাগম নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন। ঘোষণার কারণে এখনো অধিকাংশ হোটেল মোটেলের কর্মচারীর মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতনভাতা পরিশোধ করেনি মালিকরা। বেশির ভাগ কর্মচারী এখন কষ্টে রয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার ঘোষণায় কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও এখন সবাই হতাশ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ চকরিয়া নিউজকে বলেন, সংক্রমণ রোধে ২৩ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত উখিয়া উপজেলাকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। আগের দিন লকডাউন দেওয়া হয় টেকনাফ উপজেলাতেও। একই সময় উখিয়ার চারটি, টেকনাফের একটিসহ পাঁচটি রোহিঙ্গা শিবিরে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং সকলকে করোনার সংক্রমণ রোধে সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মারা গেছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা রয়েছে ১৩ জন।
পাঠকের মতামত: