নিজস্ব প্রতিবেদক, টেকনাফ :: টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে পর্যটকবাহী জাহাজ। পর্যটকদের অভিযোগ, ঝুঁকি নিয়ে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অব্যবস্থাপনা ও টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। অবশ্য অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: আশরাফুল আফসার।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝের এ দ্বীপ নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণের কোন শেষ নেই। তাই পর্যটন মৌসুমে প্রতিনিয়ত দ্বীপে ছুটে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এসব পর্যটকদের বহন করতে টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ঘাট থেকে যাতায়াত করে প্রায় ৬টি জাহাজ। এসব জাহাজের মোট ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন সেন্টমার্টিনে যাওয়ার কথা ১ থেকে ২ হাজার পর্যটকের। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে পর্যটক যাচ্ছে ৫ হাজারের বেশি। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে সমুদ্রপথে যেমন রয়েছে ঝুঁকি, তেমনি পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে নানা দুর্ভোগে। তারা বলেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি লোক নেয়া হয়। টিকেটের বাইরেও প্রচুর লোক জাহাজে ওঠেন। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে লঞ্চের ছাদে পর্যন্ত দাঁড়ানো যায় না। এদিকে সরকারের নজরদারির দরকার। এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ জাহাজ কর্তৃপক্ষ। এ রকম ক্রুটির কারনে ১৯ ডিসেম্বর দমদমিয়া ঘাট থেকে দ্যা আটলান্টিক ক্রুজ নামের একটি জাহাজ সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি। যার কারনে অতিরিক্ত যাত্রীসহ প্রায় ১ হাজার পর্যটক স্বপ্নের সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি। ফেরত আসতে হয়েছে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায়। অনেক পর্যটক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে প্রবালদ্বীপে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং এসব লক্করঝক্কর জাহাজের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহবান জানান।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজে মাথাপিছু ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা মানেনা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে জাহাজমালিকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এ ছাড়া পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ) জাহাজগুলোতে বহন করা হয় অতিরিক্ত যাত্রী। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভাড়া বাড়ানোর ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে পর্যটকদের সাথে প্রতারণনা করেন। এরকম আটলান্টিক জাহাজের মালিক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে তিন দফা টাকা দিয়ে একমাসের মধ্যে তিনবার জাহাজের টিকেটের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। দেখা গেছে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। প্রতিদিন সকালে টেকনাফের জেটিঘাট থেকে পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ৫টি জাহাজ। বিকেলে পর্যটকদের নিয়ে নৌযানগুলো আবার টেকনাফে ফিরে আসে।
বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফের নাফ নদীর দমদমিয়া জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি জাহাজে ধারণক্ষমতার বেশি পর্যটক তোলা হয়েছে।
ঢাকার বনানী থেকে আসা সাংবাদিক আলমাস বলেন, তিন বছর আগে তিনি ৫৫০ টাকা ভাড়ায় এই জাহাজে করে আগের নাম এলসিটি কুতুবদিয়া (আটলান্টিক ক্রুজ) সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলেন। এবার টিকিট কিনতে হয়েছে ৯০০ টাকায়। তারপরও বসার জন্য জাহাজে কোনো আসন পাননি তিনি। এরপর কিছুদুর গিয়ে জাহাজ বিকল হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে চলে আসতে হয়েছে কক্সবাজারে। এভাবে আরও হাজারো পর্যটককে ফিরে আসতে হয়েছে।
পর্যটকেরা বলেন, জাহাজভাড়া নির্ধারিত সঠিক না হওয়ায় কতিপয় জাহাজ মালিক পর্যটকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এ ছাড়া জাহাজগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে।
তবে, আটলান্টিক ক্রুজের কক্সবাজার অফিসের ব্যবস্থাপক মো. নাসির উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানান, জাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যাত্রা বাতিল করে কিছু যাত্রীকে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। বাকী যাত্রীদের টিকিটের টাকা রিটার্ন দেয়া হয়। কেউ হয়রানীর শিকার হয়নি।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে প্রবাল দ্বীপ। নিয়ন্ত্রণহীন সেন্টমার্টিনে চলাচলরত জাহাজ গুলো, নির্দিষ্ট আসনের চাইতে অতিরিক্ত বিক্রি করছে জাহাজের টিকেট। একারনে যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। প্রশাসনের এখনই উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবুল মনসুর চকরিয়া নিউজকে বলেন, পর্যটকদের যানমাল ও নিরাপত্তা সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব। তবে কিছু জাহাজ অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি জাহাজের ধারণক্ষমতার অনুসারে লাইফ জ্যাকেট রাখার জন্য জাহাজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সতর্ক করা হয়েছে। এ নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: