নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
ভারতে আটক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ কক্সবাজারের ১৬ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। একই সঙ্গে সালাহ উদ্দিনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তৌফিক আজিজ এই আদেশ দেন।
কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহজাহান নুরী বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধা, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও জনসাধারণের চলাচলে বাধা দেওয়ার অপরাধে ২০১১ সালের ৪ জুন চকরিয়া থানার এসআই মো. ইয়াছিন মামলাটি দায়ের করেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার ১৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় ‘
তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ, মনজুর আলম, মো. সেলিম উল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, মৌলভী রফিক, আজিজুল হক, হেফাজতুর রহমান টিপু, এহছানুল কাদের সাগর, ইমরুল হাসান, জাহাঙ্গীর, জিয়াবুল কবির, জসীম উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিল কানন, জয়নাল ও আলী হোসেন।
এই ১৬ জনসহ রুবেল বড়ুয়া, নুরুল আমিন, আবদুর রহিম, জালাল উদ্দিন ও মো. বাবুল ছাড়াও আরো একজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে বলেও জানান শাহজাহান নূরী।
চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত সময় ইউপি নির্বাচন চলছিল। ৩ জুন বিকেল সাড়ে ৪টায় ফাঁসিয়াখালি ইউপির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী রাজারবিল ব্রীজের উত্তর পাশে মালেক ড্রাইভারের বাড়িতে উঠান বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাজারবিল নয়াপাড়া ব্রীজের কাছাকাছি পৌছালে বিপরীত দিক থেকে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রি সালাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একই ইউপির বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল হকের সমর্থনে দেড়-দুই হাজার লোক ব্রীজের কাছাকাছি এসে গিয়াস উদ্দিন ও তার লোকদের উপর হামলা করে।’
‘দুই পক্ষই মুখোমুখি হলে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ব্রীজ এলাকায় এসে উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তার লোকজন নিয়ে সরে গেলেও বিএনপি’র সালাহউদ্দিন ও তার লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের পর হামলা চালায়। এতে তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সেই সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর চালায়। ঘটনাস্থল থেকে টিপু, জিয়া ও জয়নাল নামের তিনজনকে আটক করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার জের ধরে বিএনপির লোকজন একই দিন রাতে ফাঁসিয়াখালির ভেন্ডিবাজারের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ি ভাঙচুর ও সঙ্গে থাকা পুলিশকে মারধর করে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এই সময় ঘটনাস্থল থেকে ইমরুল, রুবেল ও রফিক নামের তিনজনকে আটক করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরকসহ নাশকতায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও দ্রুতগতির গাড়ি জব্দ করা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়।
কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল বলেন, ‘২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর ঐ মামলায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেই সময় ২১ জন জামিনে ছিলেন । কিন্তু পরবর্তীতে আদালতে হাজিরা না দেওয়া ও আসামীপক্ষের বারবার সময়ের আবেদনের কারণে বিচার বিলম্বিত হয়। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে বিচারক তৌফিক আজিজ অভিযুক্ত ২২ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেন এবং ১৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলায় অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন ভারতে কারান্তরীণ রয়েছেন। এই কারণে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সময়ের আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত সময়ের আবেদন গ্রহণ করেননি। সালাহ উদ্দিন সহ ওই মামলার ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন এবং ১৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।’
পাঠকের মতামত: