ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সাফারি পার্কে ৩ ভাল্লুক শাবকে বাড়তি আনন্দ, চকরিয়ায় জ্যাকবেল-মৌসুমী-পূর্ণিমার সংসার

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া ::

দেশে বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীদের অন্যতম হচ্ছে ভাল্লুক (আরসাস থিওবিটেনাস)। আবাসস্থল ধ্বংস ও শিকারিদের খপ্পরে পড়ে বিলুপ্তির পথে এই প্রাণী। পুরুষ জাতের জ্যাকবেল ও তার দুই নারী জাতের সাথী মৌসুমী ও পূর্ণিমার ঘর আলো করে পৃথিবীতে এসেছে তিনটি শাবক। এই নবাগত ভাল্লুক শাবক ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আনন্দের বন্যা। আর এই তিন শাবককে বিশেষ যতœ ও লালন পালন করতে ব্যস্ত পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ চিকিৎসক টিম।
সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠাকালে পুরুষ ভাল্লুক জ্যাকবেলকে সংগ্রহ করে আনা হয়। পরে ২০১৩-১৪ সালের দিকে পাহাড় থেকে নারী ভাল্লুক শাবক মৌসুমী ও পূর্ণিমাকে এনে লালন-পালন করে পার্কের নিদিষ্ট বেস্টনিতে রাখা হয়। আস্তে আস্তে দুই নারী ভাল্লুক শাবক বড় হতে থাকে। গত ২০১৭ সালের প্রথম দিকে জ্যাকবেলের ঔরসে মৌসুমী ও পূর্ণিমা গর্ভধারণ করে। প্রায় ৮মাস গর্ভধারনের পর ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বরে পূর্ণিমা দুটি এবং চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি মৌসুমী একটি বাচ্চা প্রসব করে। তিন শাবকের মধ্যে দুটি তাদের মায়ের সাথে থাকলেও অপর একটি শাবক মায়ের কাছ থেকে দুধ পান করতে না পারায় পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালে রেখে তরল জাতীয় খাবার দিয়ে সার্বক্ষণিক পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। বিলুপ্তের পথে থাকা ভাল্লুকের প্রসব করা তিন শাবককে দর্শনার্থীসহ সংবাদ কর্মীদের অগোচরে রাখা হয়েছিল প্রায় দুই মাস। ওই শাবক তিনটির প্রাণ সংশয় ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে পার্ক সংশ্লিষ্টরা জানান।
সূত্র আরো জানায়, ভাল্লুক সাধারণত নিশাচর প্রজাতির প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম আরসাস থিওবিটেনাস। ভাল্লুক ম্যাচুর্ট হয় ৪ থেকে ৫ বছর বয়সে। মেয়ে ভাল্লুক গর্ভধারণের ৮ মাস পর বাচ্চা প্রসব করে। এরা সাধারণত এককভাবে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত। ভাল্লুক ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। মেয়ে ভাল্লুকের ওজন ৪০ থেকে ১২৫ কেজি এবং পুরুষ ভাল্লুক ৬০ থেকে ২২০ কেজি পর্যন্ত হয়। ভাল্লুক সর্বভোগী প্রাণী।
সাফারি পার্কের ফরেস্টার ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভাল্লুক শাবক প্রসব হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। এই তিনটি শাবককে মায়ের দুধের পাশাপাশি প্রতিদিন খাওয়ানো হচ্ছে দুধ, কলা, পাউরুটি, গাজরসহ তরল জাতীয় খাবার।
তিনি আরো বলেন, পার্কে প্রথমে চারটি ভাল্লুক ছিল। পরে বিভিন্নস্থান থেকে উদ্ধার করা আরো ছয়টি ভাল্লুক আনা হয়। তিনটি শাবক প্রসবের পর বর্তমানে ভাল্লুকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩টি। ভাল্লুক বেড়ে যাওয়ায় ভাল্লুক রাখার এনক্লোজার সংকট দেখা দিয়েছে। কৃত্রিমভাবে রাখা অবস্থায় ভাল্লুক সহজে বাচ্চা প্রসব করে না। পার্কের এই তিনটি বাচ্চা প্রসবের ঘটনা দেশে দ্বিতীয় বলে মাজহার চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।

পাঠকের মতামত: