ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সহজেই সনদ পাচ্ছে রোহিঙ্গারা

মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::  যাচাই বাছাই না করে রোহিঙ্গাদের দেদারছে সনদ দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। একটু জটিলতায় পড়লে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সংগ্রহ করছে জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, জাতীয়তা সনদ পরে এসব সনদ নিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করছে তারা। এতে অনেকে সফলও হচ্ছে ফলে রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাই যে কোন ধরনের সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে আরো যাচাই বাছাই করার দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল।

কক্সবাজার পৌর ৫ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মান্নান এর নামে একটি মৃত্যু সনদ ইস্যূ করা হয়েছে। আর যেখানে স্বাক্ষর করেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলার সাহাব উদ্দিন। মৃত্যু সনদ অনুযায়ী তিনি ১০ জানুয়ারী ২০০২ সালে মৃত্যু বরণ করেছেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার পিতা মৃত মনিরুজ্জামান একজন প্রকৃত রোহিঙ্গা। একই সাথে তার মাতা মৃত আমিনা খাতুনও রোহিঙ্গা। তারা দীর্ঘদিন এলাকায় থাকলেও সবাই তাদের রোহিঙ্গা হিসাবেই চিনে। বর্তমানে ভিন্ন কৌশলে তাদের ছেলে আবদুল্লাহ ভোটার আইডি কার্ড করছে।

একই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তার মেয়ে পারভীন আক্তার ভোটার হতেই বাবার মৃত্যু সনদ নিয়েছে। বর্তমানে তারা মৃত্যু সনদ নেওয়ার পরে ভোটার হওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে কাগজ পত্র সংগ্রহ করছে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলার সাহাব উদ্দিন জানান, আবদুল মান্নান রোহিঙ্গা কিনা জানিনা তবে মৃত্যু সনদ নেওয়ার পরে ভোটার হতে চাচ্ছে সেটা আমি জানি সেজন্য তাদের সব কাগজ পত্র আমার কাছে জব্ধ অবস্থায় আছে। আর মানবিক কারণে মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়েছে যেহেতু একটা মানুষ মৃত্যু হলে তার মৃত্যু সনদ পাওয়ার অধিকার আছে। এদিকে শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার পল্ল্যাইন্না কাটা এলাকার আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যু সনদ ইস্যূ করেছে পৌরসভা। সেই সনদে স্বাক্ষর করেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলার ইয়াছমিন আক্তার। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আবদুল করিম একজন প্রকৃত রোহিঙ্গা সে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করে আসছিল।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলার ইয়াছমিন আক্তার জানান, আমার পরিচিত এক সিএনজি চালক এসে সেই মৃত্যু সনদে স্বাক্ষর নিয়েছে যদি প্রয়োজন হয় সেই সনদ প্রত্যাহার করা হবে। এদিকে সেই মৃত্যু সনদ নিয়ে ইতি মধ্যে তারা বিভিন্ন দপ্তরে সরকারী সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের দাবী রোহিঙ্গারা বিভিন্ন কৌশলে পৌরসভা থেকে জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, জাতীয়তা সনদ সংগ্রহ করছে পরে এগুলো নিয়ে তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের মত সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে এবং পরবর্তীতে ভোটার হতে সুযোগ পাচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা বারের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক এড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, কক্সবাজার অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের রাজত্বে পরিণত হবে। কারণ এখানে ২০/২৫ বছর আগের রোহিঙ্গারা বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতি, সমাজনীতি নিয়ন্ত্রন করছে।
আগেই তারা বিভিন্ন প্রকার সনদ নিয়ে ভোটার হয়ে গেছে এখন তাদের ওয়ারিশরা ভোটার হচ্ছে। আর বর্তমানে অনেক রোহিঙ্গা পুরুষ স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে স্থানীয় হয়ে গেছে একই ভাবে অনেক স্থানীয় পুরুষ রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করছে।

তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরিচিত হয়ে গেছে সেই সুবাধে বিভিন্ন সনদ নিয়ে অবাধে বাংলাদেশী নাগরিক বনে যাচ্ছে। দ্রুত এই প্রকৃয়া ঠেকানো না গেলে আমরা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে যাবো। তাই আগে আসা সহ সকল রোহিঙ্গাদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা দরকার। আর কোন ভাবেই যেন কোন রোহিঙ্গা সনদ না পায় সে বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল হতে হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এম জাবের জানান, কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েরা সরকারি স্কুল কলেজে নিয়মিত লেখাপড়া করছে এতে তারা সরকারি শিক্ষা সনদ পেয়েছে তাই সেই সনদ ব্যবহার করে তারা সহজেই ভোটার হতে পারছে। আর জনপ্রতিনিধিদের উচিত কোন আবেগের বশবর্তী না হয়ে কোন রোহিঙ্গা যেন কোন ধরনের সনদ না পায় সেটা নিশ্চিত করতে।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, যে কোন নাগরিক ভোটার হওয়ার প্রথম শর্ত নাগরিক সনদ আর সেই সনদ প্রদানকারী একমাত্র জনপ্রতিনিধিরা। আর যথাযত ভাবে কাগজ পত্র নিয়ে আবেদন করলে কে রোহিঙ্গা সেটা বুঝা যায়। তাছাড়া বর্তমানে কোন রোহিঙ্গাদের সনদ প্রদান করেছে সেটা প্রমাণ হলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে তাই দেশের স্বার্থে কোন রোহিঙ্গা যেন সরকারি কোন সনদ না না পায় সেটা জনপ্রতিনিধিদের নিশ্চিত করতে হবে।

পাঠকের মতামত: