ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

সরকারি হলো জেলার পাঁচ কলেজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

নতুন করে কক্সবাজার জেলার পাঁচ উপজেলার পাঁচটি কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন করে সরকারি হওয়া কলেজগুলো হলো, কুতুবদিয়া কলেজ, চকরিয়া ডিগ্রি কলেজ, টেকনাফ ডিগ্রি কলেজ, রামু ডিগ্রি কলেজ ও মহেশখালীর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ। এখন সরকারি হওয়া শিক্ষকদের অবস্থান, বদলি ও পদোন্নতির বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হবে নতুন বিধিমালা অনুযায়ী।
এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সরকারি কলেজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭টি। এর আগে জেলা সরকারি কলেজ ছিল দুইটি। সেগুলো হলো, কক্সবাজার সরকারি কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ। এই দু’টো কলেজেরই অবস্থান জেলা সদরে। জেলার আট উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলাতেই ইতোপূর্বে কোন সরকারি কলেজ ছিল না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনের পর সরকারি কলেজ নেই বর্তমানে কক্সবাজারের পেকুয়া ও উখিয়া উপজেলায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন করে জেলার পাঁচ উপজেলায় পাঁচটি কলেজ সরকারি হওয়ায় উৎফুল্ল সচেতন নাগরিক সমাজ। তাঁরা সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
মহেশখালীর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, ‘আমি আনন্দে দিশেহারা। অনুভুতি প্রকাশের ভাষা নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের আর কোন কলেজ নেই। এই কলেজটি সরকারি হওয়ায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ অর্জন পুরো মহেশখালীবাসীর।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কলেজের জন্য একটি ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু কন্যা দ্রুত এটিরও ব্যবস্থা করে দেবেন। ভবিষ্যতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই কলেজকে আমরা পুরো জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।’
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রোববার দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের সরকারি আদেশ (জিও) জারি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব নাসিমা খানম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশটি জারি হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে সরকারি স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে ৩২৯টি স্কুল ও ২৯৯টি কলেজ জাতীয়করণে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) কর্মকর্তারা সরজমিন পরিদর্শন করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক সব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের সব সম্পত্তি সরকারকে ডিড অব গিফট (দানপত্র) দলিল করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। স্কুলগুলো ধাপে ধাপে জাতীয়করণ করা হলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির চাপে আটকে যায় কলেজ সরকারিকরণ।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিপ্রাপ্ত ২৯৩টি কলেজ সরকারি করতে অর্থ ছাড়ের সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতি বছর ১০০ কলেজ জাতীয়করণের প্রস্তাব দিয়ে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছিল। তিন ধাপে জাতীয়করণ হলে অসম প্রতিযোগিতা ও ঘুষ দুর্নীতির আশঙ্কায় একসঙ্গে জাতীয়করণ করতে পাল্টা চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ালে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে অর্থ মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণে অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো বরাদ্দ রাখেনি। জাতীয়করণসহ চার হাজার ৯৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ৩২৯টি স্কুল ও ২৯৯টি কলেজ সরকারিকরণের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে সরকারিকরণ কার্যক্রমের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন সরকারিকরণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ শুরু হচ্ছে। এজন্য আগামী অর্থবছরে সরকারিকরণকৃত ৩২৭টি স্কুলের জন্য ৩৪৯ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার এবং ২৯৯টি কলেজের জন্য ৬২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। দেশে বর্তমানে ৩৩৫টি সরকারি কলেজ রয়েছে। ৩১৫টি উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ নেই।

পাঠকের মতামত: