নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর বেঁধে ছিলেন সুখী হওয়ার হওয়ার জন্য। কিন্তু সেই বিশ্বাসের মানুষটিই একদিন দেখিয়ে দিলেন ভালোবাসার উল্টোপিট। ভালোবাসা ভুলে যৌতুকের জন্য কেমন নিষ্ঠুরভাবে করেছেন নির্যাতন! নির্যাতন সয়েও মানুষটির সাথে থাকতে ছিলেন জনমভর। তাও সম্ভব হয়নি। নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি ওই মুখোশধারী নিষ্ঠুর পুরুষটি। যৌতুক না দেয়ায় কেমন নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলেন ভালোবেসে বিয়ে করা স্ত্রীকে।
কিন্তু এতেও শেষ ছিলো না। সাথে তাড়িয়ে নিজের ঔরষের তিন সন্তানকেও। নিরুপায় জননী তিন সন্তান নিয়ে চলে আসলো বাপের বাড়ি। এই দু:খী ভালোবাসাময় নারীটির নাম শহীদা আকতার। মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের মাঝের পাড়া গ্রামের কবির আহামদের মেয়ে। তবে সত্যিকারের ভালোবাসা যেমন হয়- নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে স্বামী তাড়িয়ে দিলেও স্বামীকে কোনো মতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। কিন্তু স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চালাচ্ছে তোড়জোড়। তবুও সব কিছু ভুলে আবার স্বামীর সংসারে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে আছেন শহীদা। এই জন্য তিনি নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, ১০ বছর আগে কুতুবজোম ইউনিয়নের দইলাপাড়ার নূরুল আমিনের পুত্র মোহাম্মদ নুরুল হাকিম ও শহীদ আকতার দু’জন-দু’জনেক ভালোবেসে বিয়ে করেন। সংসারে শান্তিও ছিলো। এই সময়ে তাদের সংসার আলো করে আসে দু’মেয়ে এক ছেলে। এতদিন সুখে সংসার করলেও ১০ বছর পর সংসারে হানা দেয় দুখের থাবা। বিয়ের সময় যৌতুক না দেয়ার দোহাই দিয়ে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন এবার বিয়ের যৌতুক দাবি করে বসে। তারা শহীদাকে বাপের বাড়িতে থেকে ২ লাখ টাকা নিতে বলে। এই নিয়ে সংসারে অশান্তি বাড়তে থাকে। সাথে বাড়ে শহীদার উপর নির্যাতন। স্বামী ও শ্বাশুড়ী এবং ননদসহ সবাই মারধর করতে থাকে শহীদাকে। তারপরও তিন ছেলে-মেয়ের মুখে দিকে চেয়ে সব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে সংসার আঁকড়ে থাকে শহীদা। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
শহীদ জানান, গত ৩ রমজান মাসে যৌতুকের দাবিতে সন্তানসহ শহীদাকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় স্বামীসহ অন্যরা। নিরুপায় হয়ে শহীদা থানায় গেলে পুলিশ গিয়ে তাকে বাড়িতে তুলে দেয়। কিন্তু এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় স্বামী ও অন্যরা। ওই দিনই স্বামী, শ্বাশড়ী ও ননদসহ অন্যরা মিলে শহীদাকে বাড়ির উঠোনে ফেলে ব্যাপক মারধর করে। এমনকি তার চোখে মরিচের গুড়া মারা হয়। এতে শহীদা গুরুতর আহত হয়। তারপরও তাকে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে এই নিয়ে কুতুবজোম ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকনের কাছে বিচার হয়। বিচার না মানায় চেয়ারম্যান খোকনের পরামর্শে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন শহীদা। ওই মামলায় গ্রেফতারও হয় স্বামী।
শহীদা আরো বলেন, গ্রেফতারের কিছুদিন পর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির অন্যরা তাদের কৃতকর্মের অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চান। সবকিছু ভুলে আমাকে বাড়িতে তুলে নেবে ওয়াদা করে স্বামীকে জামিন নিতে বলেন। সরল বিশ্বাসে আমি আদালতে গিয়ে আপোষনামা মুলে স্বামীর জামিন নিই। এর মধ্যে আসার পথেই তাদের চক্রান্ত প্রকাশ হয়। তারা মূলত আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে স্বামীর জামিন নিয়েছে। তার প্রমাণ হলো বাড়ি আসার পথে গোরকঘাট জেটিতে তারা আমাকে সন্তানসহ তাড়িয়ে দিয়ে স্বামীকে নিয়ে চলে যায়।
শহীদা অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি যাওয়ার দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগে আমার স্বামী মোহাম্মদ নুরুল হাকিম। কিন্তু নানাভাবে এর বাধা দিই। সেই সাথে আমি আবার স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করি। এই স্বামীসহ অন্যদের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় বউ দেখেনে। সর্বশেষ একটি প্রায় হয়ে যাচ্ছে বলে জেনেছি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদা বলেন, আমার তিনটি ছেলেমেয়ে। আমি তাদের নিয়ে কোথায় যাবো? আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বাপেরও আমাদের চারজনকে টানার মতো সামর্থ নেই। এখন বাপের বাড়িতে থেকে নিজে দর্জি কাজ করে সন্তান ও নিজের খাবার যোগাড় করছি। আমাকে যা নির্যাতন করেছে আমি সব কিছু ভুলে আমি আমি সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সংসারে ফিরতে চাই। এই জন্য আমি প্রশাসনের কাছে সহযোগিতার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কুতুবজোম ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন খোকন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। স্বামীর পক্ষ বিচার না মানায় স্ত্রী আদালতে মামলা করেছে। ভবিষ্যতে তাকে আমরা সহযোগিতার করবো।’
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। তবুও যদি করতে চায় পুলিশ ওই ব্যক্তি বিরুদ্ধে এ্যাকশানে যাবে। তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
পাঠকের মতামত: