শাহীন মাহমুদ রাসেল :: যে বয়সে শিশু বই-খাতা-কলম নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা কিংবা পেনসিল দিয়ে খাতায় বা দেয়ালে আঁকিবুকি করার কথা, সেই বয়সে তারা বেছে নিচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। নানা বাস্তবতায় শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ। যখন কল্পনার ডানায় ভর করে স্বপ্নের দেশে চলে যাওয়ার কথা, তখন তারা নাজিরারটেক, খুরুশকুল ও চৌফলদন্ডীর শুঁটকি পল্লীতে হাড়ভাঙা খাটতে খাটতে ক্লান্ত।
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকসহ বিভিন্ন শুঁটকি পল্লীতে কাজ করছে ৩ হাজার শিশু। এরা শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুশ্রম এখনও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শিশুশ্রম বন্ধে ‘শিশু অধিকার সনদ’ বাস্তবায়ন ও বিদ্যমান আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে শিশু সুরক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলো।
উইনরক ইন্টারন্যাশনাল নামের বেসরকারি সংগঠনের সহযোগীতায় ক্লাইম্ব প্রকল্পের আওতায় শহরের কলাতলীর বিচওয়ে হোটেলের হলরুমে এ্যালায়েন্স ফর কোঅপারেশন এন্ড লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ (একলাব) এর আয়োজিত একদিনের কর্মশালায় সরকারি ও বেসরকারি পরিসেবা সরবরাহকারীদের সাথে নেটওয়ার্ক বিল্ডিং কর্মশালা অনুষ্টিত হয়।
গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) সোমবার দুপুরে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডেপুটি ডাইরেক্টর হাসান মাসুদ। তিনি বলেন, শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। কিন্তু কুঁড়ি হয়েই শুকিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি শিশুর জীবন। শ্রম আইন অনুযায়ী, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুকে কাজে নেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখা যায়, উৎপাদন ও কলকারখানার কাজে শিশুর আধিক্য। তবে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলে ভবিষ্যতে দ্রুতগতিতে দেশে শিশুশ্রম বন্ধ হবে। আসুন আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রুখে দাঁড়াই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে।
কর্মশালায় বলা হয়, কক্সবাজার শহরতলির নাজিরারটেকে বিশ্বের বৃহত্তম শুঁটকি পল্লীতে কর্মরত তিন সহস্রাধিক শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের পেশায় শুঁটকি পল্লীতে কাজ করা শিশু শ্রমকে নথিভুক্ত করা হয়নি। শুঁটকি সেক্টরে কর্মরত এসব শিশু দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এখানে শ্রম বিক্রি করে। এতে শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পতিত হচ্ছে তারা, যা শিশু অধিকার লঙ্ঘন। এসব কারণে শিশু অধিকার বিষয়ে যেসব আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে সেসব আইন বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
কর্মশালায় উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিনিধি তানভীর শরীফ ও প্রোগ্রাম অফিসার আসমা আক্তার, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ক্রেডিট অফিসার রমজান আলী, কর্মশালা সম্বনয়কারী একলাব এর প্রতিনিধি রাশেদুল হাসান রাশেদ, ক্লাইম্ব প্রকল্পের প্রোগ্রাম কোঅডিনেটর মাহবুব উল আলম ও টি এ অফিসার মোশারফ হোসেন ও ইফসার প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ ভৌমিক কর্মশালায় শিশুশ্রম বন্ধে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
এসময় একলাব ও এস টি টিসির মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এতে এস টি টিসির প্রতিনিধি একে আজাদ উপস্থিত ছিলেন। শিশুশ্রম বন্ধে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে বৈঠকে মত দেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একলাব ক্লাইম্ব প্রকল্পের একটি বাস্তবায়নকারি সহযোগী সংস্থা হিসেবে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে প্রকল্প এলাকা কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে আসছে।
পাঠকের মতামত: