পর্যটননগরী ককসবাজার শহরের কয়েকটি মার্কেটে বিপুল পরিমান সরকারি অফিসের সব গুরুত্বপুর্ন জাল সিল,জাল দলিল ও সার্টিফিকেট তৈরির কারখানা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
তথ্যসুত্র আরো জানা যায়, বিভিন্ন ভুমি খতিয়ান, পর্চা, জমি ক্রয়-বিক্রয়ের অন্যান্য নথি ও ম্যাজিস্ট্রেট সহ ভূমি অফিস, সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নকল জাল সিল ও দলিল তৈরির রমরমা গোপন ব্যবসার মাধ্যমে, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানান এক শ্রেণীর অসাধু প্রতারক চক্র।
গোপন সংবাদের ভিক্তিতে আমাদের অনুসন্ধানী টিম শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতা সেজে জাল দলিল, নাম জারি খতিয়ান, খতিয়ান সহ অন্যান্য খতিয়ানের খালি ফরম, জমির উপর আদালতের আদেশ কপি, উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, কানুনগো সহ বিভিন্ন কর্মকর্তার ভূয়া সিল তৈরির অস্থিত্ব খুজে পান। অন্যদিকে এ সমস্ত কাজগুলো ফৌজদারি আইনের অপরাধে গন্য হলেও বেশি টাকার লোভে প্রতিনিয়ত শরের ৬টি বড় বড় মার্কেটে কম্পিউটারে দোকানে ভূয়া ন্যাশনাল আইডি,এসএসসি সার্টিফিকেটের মুডিপাই কপি অনায়সে তৈরি করে কাঁচা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা যায়।
এসব প্রতারক চক্রের বিভিন্ন সদস্য কম্পিউটার অপারেটর বা দলিল পরামর্শ এবং সিল তৈরির বাহনা নিয়ে সাইনোবোর্ড লাগিয়ে বসে রয়েছে শহরের কোর্ট বিল্ডিং ভবনের মৌসুমী হোটেল, জজ কোর্টের আশেপাশের ছোটবড় কম্পিউটার দোকান, বিলকিস মার্কেট,সালাম মার্কেটে দুপাশের গলি,মিষ্টিবন মার্কেটের দুপাশ,জিয়া কমপ্লেক্স ভবনের ডান পাশ,খানকাহ্ মসজিদ রোডের ফার্মেসী মার্কেট,পান বাজার সড়কের পিকাশো সাইট,কালুর দোকান,বদরমোকাম মার্কেট,থানা রোডের প্রেস মার্কেট সহ শহরের অলিগলিতে অবৈধ পশরা সাজিয়ে বসে রয়েছে নিরীহ মানুষদের হয়রানি করার উদ্দ্যশ্য নিয়ে।
তাদের তালিকায় রয়েছে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস-দপ্তর থেকে শুরু করে মন্ত্রী সচিবের সিলমোহর পর্যন্ত। সত্যিকার অর্থে এসব নকল সিল ও জাল স্বাক্ষর সংবলিত দলিলের কারনে আদালতে নানা মামলায় জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ককসবাজার বার কাউন্সিলের সাঃসম্পাদক ও সিনিয়র এডভোকেট মোঃ তারেক।
দীর্ঘদিন যাবৎ শহরে এ বিষয়ে কার্যকর কোন ভুমিকা বা অভিযান পরিচালনা না হওয়াতে দিন দিন বেপরোয়া আকারে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে এসব অবৈধ ডিজিটালিস ব্যবসা,যেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেশের নানা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে খারাপ ছবি পোস্ট করে। এমনি অনেকে নানা তথ্য প্রযুক্তি আইন তোয়াক্কা নানা করে, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি জাল দলিল ও দলিল তৈরির স্ট্যাম্প, এমনকি উপজেলার বিভিন্ন সহকারী কমিশনার (ভূমি), সাব-রেজিস্ট্রার, সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপুর্ন জাল দলিলে সিল স্বাক্ষর করে কাগজপত্র মামলায় জমা দিচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত জটিল করছে আদালতের নিয়ম আর বিচারকদের পড়তে হচ্ছে নানা দ্বিধা দ্বন্দ আর অনিশ্চয়তায়।
প্রাচীন তথ্যসুত্র জানা যায়, ১৯৭১ সালে ফুলবাড়ি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পুড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে ১৯৬৫ সাল থেকে স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের জাল দলিল তৈরির কাজ বাংলাদেশে শুরু হয় বলে জানা যায়। চক্রটি জাল দলিল, নাম জারি খতিয়ান, জমাবা খতিয়ান, পর্চা সহ জমির অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে তাতে ম্যাজিস্ট্রেটের ভুয়া স্বাক্ষর ও নকল সিল দিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি করে আসছিলো বলে স্থানীয় সুত্র জানা যায়।
ককসবাজার শহরের জিপিতে চাকরিজীবি এমরান মাহমুদ জানান, যারা কম্পিউটারে এসব অবৈধ সার্টিফিকেট,ন্যাশনাল আইডি,জাতীয়তা সনদ,জম্মনিবন্ধন তৈরি করে তারা নিজেদের ড্রয়ারে বা পকেটে ৮/১৬/৩২জিবি প্যানড্রাইভ লুকিয়ে রাখে, কাস্টমার বুঝে দরদাম করে এসব তৈরি করে দেয়। তবে তিনি জানান তাদের কম্পিউটার হার্ডকপিতে সব জমা থাকে। অন্যদিকে রাসেল নামে ককসবাজার আদালতের এক ক্লার্ক জানান, আদালত ভবনের মৌসুমী হোটেলের আশে পাশের সব দোকানে জাল দলিল এবং সিলের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হয় তবে সব গোপন রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ককসবাজার ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানীর (সিপিসি-৩) ককসবাজার ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ডিএডি আব্দুল মালেক এবং সিনিয়র অফিসার সোহরাফ হোসেন জানান, জাল ডকুমেন্ট তৈরি করা বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক এবং সরকার বিরোদী কাজ । র্যাবের গোয়েন্দারা এটা নিয়ে কাজ করতেছে, সঠিক তথ্য প্রমান পেলে এ বিষয়ে ভবিষ্যতে অভিযান পরিচালনা করবেন।
ককসবাজার মডেল থানার ওসি মোঃ আসলাম হেসেনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মোবাইল ফোনে তদন্ত ওসি বখতিয়ার জানান,সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমানের অভাবে দীর্ঘদিন এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হচ্ছেনা, এ বিষয়ে শীঘ্রেই অভিযান পরিচালনা হবে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: