বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরজুড়ে অনুমোদনহীন সমিতির ছড়াছড়ি হয়ে গেছে। পথে ঘাটে সমিতির নামে গড়ে উঠেছে ‘হায় হায়’ প্রতিষ্ঠান। নেই কোন অফিস, সাইনবোর্ড। ইচ্ছেমতো চলছে আর্থিক লেনদেন। ঋণের নামে ঠকানো হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। আদায় করা হচ্ছে উচ্চহারে সুদ। অথচ তাদের ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথাই নেই প্রশাসনের- এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
অভিযোগ রয়েছে, সমিতির টাকায় গুটি কয়েক ব্যক্তি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে। পরের টাকায় তারা কোটিপতি। অন্যদিকে বিনিয়োগ করে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনুমোদনহীন এসব সমিতিতে সঞ্চয়কারীরা সঠিক সময়ে অর্থ ফিরিয়ে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে প্রতি বছর কোটি টাকার রাজস্ব। তারা কিসের ভিত্তিতে লেনদেন করছে, তা-সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অজানা। সাধারণ ব্যবসায়ীরা সমিতির নামে এসব ‘হায় হায়’ কোম্পানীর তদারকসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছে।
অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে, শুধু কক্সবাজার শহরের বড়বাজার কেন্দ্রিক রয়েছে অনুমোদনহীন অন্তত ৫টি সমিতি। তারা লোভনীয় শর্তে বিনিয়োগ করছে। ফাঁদে পড়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিতে যাচ্ছেনা। অভিযোগ রয়েছে, বিনিয়োগ গ্রহীতাদের লিখিত-অলিখিত দুইভাবেই জমা দিতে হয় স্ট্যাম্প ও চেক। অন্যথায় মিলেনা কাঙ্খিত ঋণ। তাদের কারণে সরকার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতি বছর।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, ২০১৪ সমিতি, ২০১৫ সমিতি, ২০১৬ সমিতি ইত্যাদি নামে বিভিন্ন সমিতি শহরে ছড়িয়ে গেছে। তারা সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করছে।
জানা গেছে, বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতিতে প্রায় দেড়শত গ্রাহক রয়েছে। এই সমিতির বিনিয়োগ প্রায় ৩ কোটি টাকা। মো. সেলিম নামে এক ব্যক্তি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে থাকেন।
মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির মূল হর্তাকর্তা মাহবুবুল আলম। তিনি একাই সব করে থাকেন। বুলু ও শাহাদাত নামে আরো দুইজন এই সমিতিতে কাজ করেন। তাদের সমিতির বিনিয়োগও প্রায় ৩ কোটি টাকা। গ্রাহক সংখ্যা দুই শতের কাছাকাছি। অথচ আর্থিক লেনদেনে তাদের কোন বৈধতা নেই।
এ বিষয়ে মাহবুবুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমিতির কোন পদে নেই বলে দাবী করেন। তবে, এক সময় ‘সদস্য’ ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
মাছ বাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, কিছু নেতার কাছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে তাদের ঋণ নিতে হয়। সমিতিকে দিতে হয় ১২ শতাংশ সুদ। আর সমিতির নাম ব্যবহার করে চিহ্নিত কয়েকজন ‘জিরো থেকে হিরো’ হয়েছেন। এসব সুবিধাবাদীদের অর্থের উৎস্য অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী ভুক্তভোগীদের।
এ প্রসঙ্গে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধুরী বলেন, অনুমোদনছাড়া সঞ্চয়-বিনিয়োগ করার সুযোগ নেই। যারা বিধি তোয়াক্কা না করে মানুষ ঠকানোর ফাঁদ বসিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এ সময় তিনি তদন্তপূর্বক এসব সমিতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখবেন বলে জানান।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। পাশাপাশি গণমাধ্যমের কাছ থেকে এসব বিষয়ে সঠিক তথ্যও চান জেলা প্রশাসক।
পাঠকের মতামত: