ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন উপজেলায় যুক্ত হচ্ছে চকরিয়া

এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::L মুজিব শতবর্ষের অঙ্গিকার, আশ্রয়ণের অধিকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার- এই স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত গৃহায়ন (ঘর) কক্সবাজারের প্রথম উপজেলা হিসেবে চকরিয়া উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে খুব শীর্ঘই ঘোষণা করতে যাচ্ছেন সরকার। নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব ঘর প্রস্তুত পরবর্তী উপকারভোগী হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করার মধ্যদিয়ে অতি সহসা চকরিয়া উপজেলাকে শতভাগ গৃহহীন ও ভুমিহীন উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাই জানালেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে কক্সবাজারের সর্ব বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে সুপরিচিত চকরিয়া উপজেলা। আঠারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী চকরিয়া উপজেলার আঠার ইউনিয়নের মোট ৮৭৪ টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আওতায় এনে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে উক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৮২ টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আরও ২৫০ টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত ঘর সমূহ নির্মাণ শেষে ভূমিহীন ও গৃহহীন উপকারভোগীদের মাঝে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট ১৯২ টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তৎমধ্যে ১১৫টি ঘরের কাজও শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৭৭টি ঘরের কাজ এখনো (চলমান) নির্মাণাধীন রয়েছে।

খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত ঘরসমূহ উদ্বোধন করবেন। চকরিয়াতে চলমান ৭৭টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই উপজেলায় মোট ৮৭৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ভূমিহীন ও গৃহহীনকে সম্পূর্ণ ভাবে পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার নিমিত্তে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে এক যৌথ সভা উপজেলা প্রশাসনের হলরুম মোহনা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী, ১৮ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গ চকরিয়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

এছাড়াও ইতোমধ্যে পেকুয়া উপজেলার সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার মধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা তথা কক্সবাজার-১ সংসদীয় আসনটি সর্বপ্রথম ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

ডুলাহাজারা ইউপি’র মালুমঘাট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের নিহত ৬ ভাইয়ের মধ্যে দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নিহতদের ছোট ভাই প্লাবন শীল বলেন, কখনো ভাবতেই পারিনি সরকার এত সুন্দর ৮টি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেবেন। সেই ঘরে শান্তিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করব।

পাকা ঘর পেয়ে কেমন লাগছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি এবং সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। সরকার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে পাশে এসে সহযোগীতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারবোনা।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন, আশ্রয়হীন থাকবে না। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে সারা দেশের মতো চকরিয়ায় ভূমিহীন, গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

প্রথম পর্যায় থেকে তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলায় সর্বমোট ৬শত ৮২টি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে গৃহ হস্তান্তর করা হয়। এসব গৃহায়ণ (ঘর) সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ভূমিহীন ও গৃহহীন উপকারভোগী পরিবার বাছাই করে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৯২টি গৃহ নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৭৭টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলেই উপজেলায় মোট ৮৭৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা সক্ষম হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চকরিয়াকে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে শিঘ্রই ঘোষণা দেবেন বলে আশা রাখছি। চতুর্থ ধাপের ১৯২টি গৃহ হস্তান্তরের মাধ্যমে উপজেলার মোট ৮৭৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতক জমির মালিকানার সাথে এই বাড়িতে থাকছে দু’টি করে শোয়ার কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচাগার, বারান্দা ও সুপেয় পানির জন্য নলকূপ। পাশাপাশি সহসা এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেওয়া হবে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন। #

 

পাঠকের মতামত: