মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ::
বান্দরবানের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল উপজেলা লামা। প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এই উপজেলায়। যে উপজেলার উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা ও বান্দরবান সদর উপজেলা, দক্ষিণে নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলা, পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা ও পূর্বে রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলা অবস্থিত।
লামা উপজেলার মোট আয়তন ৬৭১.৮৪ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের মধ্যে নদী এলাকা ৭৮.১৭৩ বর্গ কিলোমিটার, সংরক্ষিত বনভূমি ৩৩২.৮২৭ বর্গকিলোমিটার ও চাষাবাদযোগ্য ভূমির আয়তন ২৬০.৮৪৫ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে যার অধিকাংশই জায়গায় আবাদ করে গড়ে উঠেছে বসতি। উপজেলাটি ২১.৩৬ হতে ২১.৫৯ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২.০৪ হতে ৯২.২৩ পূর্বদ্রাঘিমাংশ ও সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২৯.৮৭ মিটার উপরে অবস্থিত।
এই উপজেলার পূর্ব সীমান্তে রয়েছে রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলা। এই সীমানা অঞ্চলটি অনেক দূর্গম ও পাহাড়ি এলাকা। কিছু নৃ-গোষ্ঠী লোকজন ছাড়া নেই তেমন কোন বসবাস। লামার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আলীয়াং বাবু পাড়া থেকে শুরু করে পোপা, ছোট বমু, বড় বমু হয়ে লেমুপালং ও লুলাইং পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পাহাড়ি সীমানা পুরোই রয়েছে অরক্ষিত। যে এলাকায় নেই সেনা বা সরকারী অন্য কোন বাহিনীর ক্যাম্প। এতে করে ফাঁকা পেয়ে এই অঞ্চল দখলে নিয়েছে কিছু পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপ। স্থানীয়দের কাছে শুনা যায় জে.এস.এস, ইউ.পি.ডি.এফ, এম.এন.পি ও টি.পি.পি সহ অনেক সংগঠন রয়েছে এই জনপদে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সরকারী বিভিন্ন বাহিনীর সাথে হয়েছে গুলি বিনিময়। ঝড়েছে প্রচুর তাজা প্রাণ।
রুপসীপাড়া ইউনিয়নের নাইক্ষ্যংমুখ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা অন্য কোন দেশে আছে। যেখানে নেই কোন সরকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ। নাইক্ষ্যংমুখ থেকে সরই ইউনিয়নের লুলাইং পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় চলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে। কখনও কোন ঘটনা ঘটলে মিলে সরকারী বাহিনীর দেখা। অপারেশন শেষ হলে তারা ফিরে যায় তাদের ক্যাম্পে আর বরাবরের মত আমরা রয়ে যাই অরক্ষিত। এই অঞ্চলটির নিরাপত্তার কথা ভেবে নাইক্ষ্যংমুখ, পোপা ও লুলাইং এলাকায় তিনটি ছোট ছোট সেনা ক্যাম্প স্থাপনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই এলাকার পাহাড়ি বাঙ্গালী শান্তি প্রিয় জনগণ। তাছাড়া এই জনপদটির সুরক্ষা সম্ভব নয় বলে তারা মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে লুলাইং বাজারের কয়েক বাসিন্দা জানান, সামান্য কিছু বাঙ্গালী চাষাবাদ, গাছ-বাশঁ সংগ্রহ বা ব্যবসার কাজে যায় ওই এলাকায়। দূর্গম এই জনপদে নেই কোন প্রশাসনের টহল বা তদারকির ব্যবস্থা। কখনও কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে সেনা ও সিভিল প্রশাসনকে প্রায় ৩০/৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে এসে নিতে হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসার আগেই নিরাপদে সরে যায় সন্ত্রাসীরা। প্রশাসন চলে গেলে আবার ফিরে আসে তারা। অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখিয়ে প্রকাশ্যে চলে চাদাঁবাজি। না দিলে পোহাতে হয় তাদের অমানবিক নির্যাতন। ৩৫ কিলোমিটার সীমানা সুরক্ষায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের কোন বিকল্প নেই।
সরই লুলাইং সড়কে কয়েকজন মোটর সাইকেল ড্রাইভার জানায়, আমাদের সরাসরি হুমকি দিচ্ছে, চাদাঁ না দিলে গাড়ি পুড়িয়ে দেবে। গত ১২ জুলাই বুধবার মেরাইত্তা বাজারে মোঃ কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে চাদাঁ না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা মেরেছে।
সরই চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন ও রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, লামা উপজেলার পূর্ব সীমানায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনে নিরাপত্তা বাড়বে। তবে তিনি সরকারী উপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
অরক্ষিত সীমানা বিষয়ে লামা-আলীকদম সেনা জোনের দায়িত্বরত অফিসার বলেন, সেনাবাহিনী সরকারী সিদ্ধান্তে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করছে। সেনা ক্যাম্প বর্ধিত করার বিষয়টি সরকারের উপর মহলের বিষয়। সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের নিরাপত্তায় বিধানে কাজ করে।
পাঠকের মতামত: