ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা ফেরাতে টালবাহানা করছে মিয়ানমার -রয়টার্সকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে টালবাহানা করছে মিয়ানামার। মঙ্গলবার রাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। আর কোনো অবস্থাতেই এত অধিক সংখ্যক শরণার্থীর বাংলাদেশের মত বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে পাকাপাকিভাবে থেকে যাওয়া সম্ভব না বলেও জানান তিনি।

মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনের মুখে গত বছর ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে এখানে আশ্রয় নেয়া মোট শরণার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।

রয়টার্স জানতে চায়, রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে এদেশে রেখে দিতে তার সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। আমার পক্ষে আর অতিরিক্ত কোনো দায়িত্ব নেয়া সম্ভব নয়। এই অতিরিক্ত জনগোষ্ঠীর ভার বইতে পারবে না আমার দেশ।’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউ ইয়র্ক অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মঙ্গলবার রাতে রয়টার্সকে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ সময় তাই শরণার্থী ইস্যুতে মিয়ারমারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়াতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী।

গত বছর রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা। তাদের দেশে ফেরাতে গত নভেম্বরে দু দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে দু মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেযার কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (মিয়ানমার) চুক্তিতে রাজি হলেও তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে না। আর এটাই হচ্ছে আসল সমস্যা। যখনই এ নিয়ে কথা হয় তখনই তারা কোনো না কোনো নতুন ছুতা খুঁজে বের করে।’

কিন্তু মিয়ানমার বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত এবং তাদের জন্য সীমান্তে ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করেছে। তাদের উল্টো অভিযোগ, বাংলাদেশ এখনও তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের সঠিক সংখ্যার কাগজপত্র দিচ্ছে না। কিন্তু তাদের এই অভিযোগ নাকচ করেছে ঢাকা। অন্যদিকে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, এখনও রোহিঙ্গাদের সেখানে ফিরে যাবার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

এ অবস্থায় প্রত্যন্ত দ্বীপ ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন বাসস্থান নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর আশঙ্কা রোহিঙ্গাদের এই নতুন আবাসস্থল নিরাপদ নয়। কেননা এটি বন্যা উপদ্রুত এলাকা।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মূল ভূখণ্ডে বাসস্থান নির্মাণ করা ‘কোনোভাবেই সম্ভব নয়’। কেননা ‘তারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই ফেরত যেতে হবে।’

রোহিঙ্গারা নিজেদের রাখাইন রাজ্যের জনগোষ্ঠী বলে দাবি করলেও মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা তাদের বহিরাগত বলে মনে করে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর হিসাবমতে ২০১৭ সালের আগস্টে এই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। তবে এ ধরনের প্রতিবেদনকে কখনই মেনে নেয়নি মিয়ানমার।

এদিকে আগামী ডিসেম্বেরে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে দেশের পরিবহন খাতের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাপক শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে কিছুটা কোণঠাসা শেখ হাসিনা ও শাসক দল আওয়ামী লীগ। ঢাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে পড়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত আগস্টে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই আন্দোলন। এর আগে কোটা বাতিল নিয়েও বড় ধরনের আন্দোলন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরা। নির্বাচনে আগে তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো রকম ঝামেলায় জড়াতে চায় না বাংলাদেশ।

সূত্র: রয়টার্স

পাঠকের মতামত: