ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কারা আসছে ? ব্রান্ডের কালো গ্লাসের গাড়িকে ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ…

নিজস্ব সংবাদদাতা সীমান্ত থেকে ::roh kutuf

উখিয়ার বালুখালী কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য ক্যাম্পগুলোতে ঘটছে বহিরাগতদের সন্দেহজনক চলাফেরা। সকাল থেকে শুরু করে গভীররাত পর্যন্ত প্রতিনিয়ত তাদের আনাগোনা বাড়ছে। বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা এনজিওর ত্রাণবাহী গাড়ি ছাড়াও প্রতিদিন অসংখ্য দামি গাড়িতে করে আসাযাওয়া করছে নানা শ্রেণীর মানুষ। এসব গাড়ির মধ্যে বেশিরভাগের গ্লাস কালো রঙের। ভেতরে কারা কতজন আছেন বাইরে থেকে তা সহজে বোঝার উপায় নেই। তারা ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা ছাড়াও রাস্তার পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেউ কেউ তাদের অর্থ সহায়তায়ও দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গত প্রায় সপ্তাহ ধরে দিন যতই যাচ্ছে বহিরাগতদের আনাগোনা এলাকায় ততই বাড়ছে। এসব গাড়ির মধ্যে বিভিন্ন বিদেশি এনজিও দাতা সংস্থার গাড়িগুলো তারা শনাক্ত করতে পারছেন। কিন্তু অন্যান্য গাড়িগুলো নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বিগ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প তার আশপাশের মসজিদ মাদ্রাসাগুলোতেও বহিরাগতদের দেখা যাচ্ছে। দফায় দফায় তারা এসব মসজিদ মাদ্রাসায় বৈঠক করছেন বলেও স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা উখিয়া সদরের ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রতিদিন কক্সবাজারটেকনাফ আরাকান সড়ক দিয়ে অসংখ্য নামিদামি নোহা, ল্যান্ড ক্রুজার, প্রাইভেট কারে করে বিভিন্ন লোকজন আসছে। তারা এখানকার মানুষ প্রশাসনের কাছে পরিচিত নয়। তারা আসছে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে। কিন্তু তাদের চলাফেরা নিয়ে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, বহিরাগত লোকেরা বিভিন্ন পরিবহন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের নামে আসছেন। অনেকেই বিভিন্ন এনজিও দাতা সংস্থার লোগো ব্যানার গাড়ির সামনে লাগিয়েছেন। তাদের নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে অন্যান্য যে লাক্সারিয়াস গাড়িগুলো আসছে সেগুলো কালো গ্লাসের। এসব গাড়ির সামনে কোনো ব্যানার বা লোগো নেই। আসলে কারা গাড়ির ভেতরে আছেন, কতজন আছেন, এরা আসলে কারাতা বোঝার কোনো উপায় নেই। এতে করে আমাদের মধ্যে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনও তাদের খুব একটা চেনে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আমরা আতঙ্কিত। তার দাবি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর আশপাশের এলাকাগুলো আরও ভালভাবে মনিটরিং করা জরুরি। যেন অপ্রয়োজনে বহিরাগতরা বেশি আনাগোনা করতে না পারে। কারণ তারা রোহিঙ্গাদেরকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে কিনা, সেটা দেখা জরুরি।
ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রাণবাহী গাড়ি আসছে। তারা যেখানেই রোহিঙ্গা সদস্যদের পাচ্ছেন, তাদের হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ নগদ টাকাও দিচ্ছেন। আর রাস্তার দুই পাশে দাঁড়ানো রোহিঙ্গা সদস্যরা অপরিচিত অথবা পথচারীদের দেখলেই ছুটে আসছেন। হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের জন্য। এছাড়া ত্রাণ দিচ্ছে বা মানুষের ভিড় দেখলেই সব সদস্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ত্রাণ নিতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কুতুপালং নতুন ক্যাম্পের সামনের রাস্তায় ত্রাণ দিচ্ছেন শুনে শত শত নারীপুরুষ শিশু ছুটে আসে ত্রাণের জন্য। তাদের একজন নুরুল হাসিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, যখনই ত্রাণ দিতে মানুষ আসে তখন অনেকেই ভিড় জমায়। লাইন না থাকায় যে যার মতো করে পাচ্ছে, ত্রাণ নিয়ে দৌড় দিচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি বহিরাগতদের বেশি বেশি চলাফেরার ফলে এলাকার লোকজন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে একপ্রকার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান অনেকেই।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, লাখ লাখ রোহিঙ্গা এদেরকে ত্রাণ দিতে আসা বিভিন্ন এনজিও দাতা সংস্থা ছাড়াও সন্দেহজনক অনেক দামিদামি ব্রান্ডের গাড়ির চলাফেরা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ফলে যানজটও বেড়ে যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকেও হিমসিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর আশপাশের এলাকার মসজিদমাদ্রাসাগুলোতে বিভিন্ন বিলাসী টুপিওয়ালা শ্রেণীর মানুষের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন। দফায় দফায় তারা বৈঠকও করছেন। কিন্তু এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করেই ধরণের মানুষের আনাগোনা বৈঠক কেন, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা। এরকম চলতে থাকলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়দের অনেকেই।
বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, এই সড়কে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে আসা বিভিন্ন নামিদামি গাড়িগুলো আমাদের কাছে সন্দেহজনক হলেও যানজট ভিআইপিদের প্রটোকলেও কাজ করতে হচ্ছে। ক্যাম্প এর আশপাশেও আমাদের ফোর্স নিরাপত্তায় কাজ করছে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপরের নির্দেশনা পেলে এসব গাড়ি তল্লাশী করে দেখা হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার . একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প আশপাশে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। এছাড়া সাদা পোশাকেও পুলিশ রয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও রয়েছে। প্রশসানের পক্ষ থেকে সব কিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। সন্দেহজনক কিছুই হলে সাথে সাথে আটক করা হবে। এছাড়া গাড়িগুলো তল্লাশিরও ব্যবস্থা নেয়া হবে দ্রুতসময়ে। পূর্বকোণ

পাঠকের মতামত: