মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আসিয়ান ও বাংলাদেশ, ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি। প্রয়োজন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঐকমত্য। এক্ষেত্রে দিল্লিকে আরও নিবিড়ভাবে অগ্রসর হতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদে প্রবেশের ঝুঁকি বাড়বে। এরই মধ্যে প্রমাণ মিলেছে, রোহিঙ্গাদের দলে ভেরাচ্ছে ইসলামপন্থি জঙ্গি গ্রুপগুলো। এ জন্য সরাসরি দায়ী মিয়ানমারের পলিসি বা নীতি। দেশটিতে সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তাদের বাড়িঘর, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুতে এসব কথা লিখেছে ভারতের দ্য হিন্দুস্তান টাইমস। এর শিরোনাম ‘রোহিঙ্গাস: ইট ইজ এ কেস অব স্টেট পলিসি-ফিডিং টেরর’। অর্থাৎ রোহিঙ্গা: এটা হলো রাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্ত্রাসের যোগান দেয়া বা সন্ত্রাস জন্ম দেয়া। এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে মানবিক সঙ্কটের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু তার মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও উপেক্ষিত বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি। এটা শুধু রাষ্ট্র সমর্থিত নির্যাতনই নয়। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো নৃশংসভাবে এই জাতিটিকে শেষ করে দেয়া। এটা যে পুরো মাত্রায় গণহত্যায় রূপ নিতে পারে তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। এরই মধ্যে গণহত্যা, শারীরিক নির্যাতন ধর্ষণ ও পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার মতো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্তমান সহিংসতা সম্পর্কে সতর্কতা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন। হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ নির্যাতনের কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসছে। তবে আর যাতে কোনো শরণার্থী প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সম্প্রতি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। সম্ভবত আরও অনেক রোহিঙ্গা অতীতে যেমনটা করেছে তেমনি সাগরকে বেছে নিয়েছে। মিয়ানমারে সর্বশেষ এই সহিংসতা শুরু হয় একটি হামলাকে কেন্দ্র করে। ধরে নেয়া হয় এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে রোহিঙ্গাদের একটি উগ্র গ্রুপ। গত মাসে তাদের হামলায় মিয়ানমারের সীমান্ত প্রহরীদের ৯ সদস্য নিহত হন। এ হত্যা অবশ্যই নিন্দনীয়। একই সঙ্গে এ হামলার জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে সহিংসতা চালাচ্ছে তাও সর্বোতভাবে নিন্দনীয়। তারা সামগ্রিকভাবে একটি পুরো জাতিকে শাস্তি দিচ্ছে। সীমান্ত প্রহরীদের ওপর হামলার জন্য দায়ী কে তা খুঁজে দেখার কোনো উদ্যোগই নেই তাদের। ফলে তাদের এ কর্মকা- পুরোপুরি বৈষম্যমুলক। মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিড যেন মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বা নিষ্পেষণের জন্য অজুহাত প্রস্তুত রাখে সব সময়। অথবা মাঝে মাঝে তারা কোনো অজুহাত বা কারণ উল্লেখ করে না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দৃশ্যত সবটুকু আশা রেখেছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, বৈশ্বিক মানবাধিকারের আইকন, বর্তমানে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী অং সান সুচির ওপর। কিন্তু সুচি হয়তো বলতে চাইবেন রোহিঙ্গাদের প্রতি দেশবাসীর ক্ষোভের কথা, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার তিক্ত সম্পর্কের কথা। তিনি হয়তো বলতে চাইবেন এক্ষেত্রে তার জন্য উত্তর পন্থা হলো নীরবতা অবলম্বন করা ও নিষ্ক্রিয় থাকা। এ অবস্থায় মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টির অন্যান্য উপায় খুঁজতে হবে বিশ্বকে। তাদেরকে বোঝাতে হবে এটা হলো তাদের নিজস্ব সমস্যা। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের জন্য যখন প্রতিদ্বন্দ্বী বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে তখন সেক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে মিয়ানমার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে চীন উত্তর-দক্ষিণ পরিকল্পনা করেছে। তার জবাবে ভারত ও জাপানের মতো দেশ পূর্ব-পশ্চিম সংযুক্তি বা কানেক্টিভিটির দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এসব ইস্যুতে মিয়ানমার হচ্ছে সতর্কমুলক অবস্থান। কোনো দেশে মানবাধিকার ইস্যুতে চীনের কোনো আগ্রহ নেই। এক্ষেত্রে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বাস জন্মেছে যে, এশিয়ার পরবর্তী অর্থনীতির বাঘ হতে যাচ্ছে মিয়ানমার। এর ফল যাচ্ছে মিয়ানমারের পক্ষে। ফলে তারা স্বস্তিতে আছে। ভূ-রাজনৈতিক এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে কাটিয়ে তা নিষ্ক্রিয় করার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এক্ষেত্রে এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং হয়তো ভারত ও বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে একীভূত হতে পারে এবং তারা এক্ষেত্রে একটি ঐকমত্যের প্রস্তাব তুলে ধরতে পারে ন্যাপিডর প্রতি। এরই মধ্যে অধিক হারে সমালোচনামুলক অবস্থান নিতে শুরু করেছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু মিয়ানমারের ইস্যুটিকে শুধু ইসামোফোবিয়া হিসেবে দেখার কারণে এ নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। নয়া দিল্লির উচিত আরও স্পষ্ট কথা বলা উচিত। যদি কিছুই করা না হয়, তাহলে এখন বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট তথ্য মিলছে যে, ইসলামপন্থি জঙ্গি গ্রুপগুলোতে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর জন্য সরাসরি দায়ী মিয়ানমারের নীতি বা পলিসি।
পাঠকের মতামত: