খালেদ হোসেন টাপু, রামু ::
কক্সবাজারের রামুতে কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। দু’দিন ধরে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
বাঁকখালী নদীর পানি এবং পাহাড়ী ঢলের পানিতে রামু নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার টেকনাফ সড়ক, শাহসুজা সড়ক তলিয়ে গেছে। এসব সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
গর্জনিয়া চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণে তার ইউনিয়নের ক্যাজর বিল, পশ্চিম পাড়া, পশ্চিম বোমাংখিল, পূর্ব ও পশ্চিম জুমছড়ি ও জাউস পাড়ার পশ্চিমাংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া উজানি ঢলে বাঁকখালী নদীর ব্রিজের ১১০ ফুট ব্রিজের এপ্রোচ নদীতে তলিয়ে গেছে। খবর পেয়ে রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেছে বলে তিনি জানান। তাদের নির্দেশে ভাঙন রোধে এপ্রোচ মেরামতের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।
কচ্ছপিয়া চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মো. নোমান জানান, প্রবল বর্ষণে শাহসুজা সড়ক ও রামু নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ছোট জামছড়ি নদীর তীর এলাকা এবং বড় জামছড়ির ব্রিজের এপ্রোচ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যায় তার ইউনিয়নের আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
কাউয়ারখোপ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান, প্রবল বর্ষণে বাঁকখালীতে উজানি ঢল নেমে আসায় রামু নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের জাদিমুরা থেকে ফরেস্ট অফিস বৈলতলি পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও মনিরঝিল, চরপাড়া, পূর্ব কাউয়ারখোপ, মধ্যম কাউয়ারখোপ এলাকার ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে।
ঈদগড় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভূট্টো জানান, টানা বর্ষণে ঈদগাঁও খালের প্রবল স্রোতে হাবিব উল্লাহ (৩০) নামের এক ব্যক্তি ভেসে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও রেনুরকুল, লেইঙ্গাপাড়ার শতাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
দক্ষিণ মিঠাছড়ির চেয়ারম্যান ইউনুছ ভূট্টো জানান, কয়েক দিনের বর্ষণে তার ইউনিয়নের চরপাড়া, সিকদার পাড়া, উমখালী, কালা খোন্দকার পাড়া, চেইন্দা কাড়ির মাথা এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বাঁকখালী নদীর প্রবল স্রোতে ৪ টি বাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
রামুর তেমুহনী এলাকায় দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপকারী (ওয়াটার রিডার) রুহুল আমিন রোহেল বুধবার সন্ধ্যায় জানান, তখন বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। তখনো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চাকমারকুল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার জানান, ভারী বর্ষণে তাঁর ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বুধবার কাউয়ারখোপ, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, দোছড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং গর্জনিয়ার বাঁকখালীর ঝূকিপূর্ন সেতুর এপ্রোচ সড়ক পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান, টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়াও রামুর গর্জনিয়ার বাঁকখালী ব্রিজের এপ্রোচ সড়ক ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: