ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

রাখাইনে গণকবরের সন্ধান

অনলাইন ডেস্ক ::

রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে একটি বড় গণকবরের সন্ধান পেয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তরা বলেছে, ইন ডিন নামের গ্রামের একপাশে ওই গণকবর পাওয়া গেছে। তবে তাতে কি পরিমাণ মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা যায় নি। এ বিষয়ে সেনাবাহিনী তদন্ত করছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সোমবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইয় ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
তাতে বলা হয়েছে, ইন ডিন গ্রামের একটি কবরস্থানে ওই গণকবর পাওয়া গেছে। তাতে কি পরিমাণ মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে তা অনিশ্চিত। উল্লেখ্য, ওই গ্রামটি রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে। এতে আরো বলা হয়, প্রাথমিক তদন্ত করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। নাম প্রকাশ করতে চান না এমন একজন এ বিষয়ে রিপোর্ট করার পর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ওই তদন্ত করে। বলা হয়, মানুষ হত্যা করে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নৃশংসতা শুরুর পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর চালায় অকথ্য নির্যাতন। তাদেরকে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও গণহারে তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। অকাতরে হত্যা করা হয় সাধারণ মানুষ। এর জন্য দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ জন্য ওই নৃশংসতা যখন চরম আকারে তখন রাখাইনে কোনো সাংবাদিক, সাহায্যকর্মী বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। এ জন্য অনেকেই আশঙ্কা করেন, সেনাবাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে ওই সময়ে তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য এমন বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। মানুষ হত্যা করে তাদেরকে পুঁতে রেখে তা যখন নিঃশেষ হয়ে যায় তখনই হয়তো তাদেরকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হতে পারে। ফলে ওই গণকবরে যেসব মানুষকে সমাহিত করা হয়েছে তাদের পরিচয় বা তাদেরকে কে হত্যা করেছে তা নিয়ে বড় প্রশ্নের সৃষ্টি হতে পারে। সেনাপ্রধানের ফেসবুকের পোস্টে বলা হয়েছে, ইন ডিন গ্রামের ওই কবরস্থানের গণকবরে অজ্ঞাত সংখ্যক মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সত্য অনুসন্ধানের জন্য করা হবে বিস্তৃত তদন্ত। এ বিষয়ে সেনা মুখপাত্র কর্নেল মিয়াত মিন ও’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানা। উল্লেখ্য, ইন ডিন গ্রামটি মংডু এলাকায়। ওই এলাকাটি নৃশংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের অন্যতম। এমন নৃশংসতার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গা জাতি নিধন করছে। ২৫ শে আগস্ট পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। তার প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা নৃশংস নির্যাতন চালাতে থাকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর। মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষকরা এ জন্য দায়ী করেছে মিয়ানমারের সেনাদের। যুক্তরাষ্ট্রও জাতিসংঘের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছে, সেখানে জাতি নিধন করা হয়েছে। তবে অভিযোগের তদন্ত করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের নিজেদের করা নিজেদের মতো আভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নৃশংসতার অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু সব চাপ এসে পড়েছে মিয়ানমারের বেসামরিক শাসক স্টেট কাউন্সেল অং সান সুচির ওপর। আন্তর্জাতিক মহলের কড়া সমালোচনায় প্রতিনিয়ত জ্বলছেন তিনি। বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় কিছুই করতে পারেন নি তিনি। তাই তাকে দেয়া সম্মানসূচক একাধিক বৃটিশ পুরস্কার, পদক কেড়ে নেয়া হয়েছে। শান্তিতে পাওয়া নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবি জোরালো হয়েছে। কিন্তু নোবেল কমিটি বলেছে, কাউকে এ পুরস্কার দেয়া হয়ে গেলে তা ফিরিয়ে নেয়ার কোনো রীতি তাদের নেই।

পাঠকের মতামত: