ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

যার রোগী তাকেই টানতে হয় : সহায়তায় এগিয়ে আসে না কর্মচারীরা

1কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জরুরি সহয়তা দিতে এগিয়ে আসে না কর্তব্যরত কর্মচারীরা। জরুরি বিভাগের গেইট দিয়ে ঢুকা থেকে শুরু করে হাসপাতালের বিছানায় নিয়ে যাওয়া এছাড়া বিভিন্ন প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য আনা নেওয়া পর্যন্ত খুব কম কর্মচারীই রোগীর গায়ে হাত দেন। সব কাজ করতে হয় রোগীর স্বজনদের। অর্থাৎ যার রোগী তাকেই টানতে হয়। সাধারণ মানুষের দাবী মুমূর্র্ষু রোগিদের সহায়তায়ও কাউকে পাওয়া যায় না। আর কেউ কিছুটা সহযোগিতা করলে কিছুক্ষণ পরে সে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে টাকা চাইতে আসে। অথচ এইসব কাজের জন্য ১শ’ র বেশি কর্মচারী আছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দাবী করেছে সচেতন মহল।
গতকাল ১ আগস্ট কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সকাল ১১ টার দিকে জরুরি বিভাগের সামনে নিজের  স্বামীকে নিয়ে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিএমখালী থেকে আসা গৃহীনি সেতারা বেগম। স্বামীর পায়ে পানি জমে ফোলার কারণে হাটতে পারে না, এর বাইরে পেটে ব্যাথা তাই কোনভাবেই হেঁটে হাসপাতারে ঢুকতে পারছে না। সেতারা বেগম বেশ কয়েকবার কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ডদের সহযোগিতা চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। আর জরুরি বিভাগ থেকে কেউ এগিয়ে আসার আশাই করা যায় না। পরে পাশ্ববর্তী আরেক রোগির স্বজনের সহযোগিতায় কোন প্রকার স্ট্রেচার দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেও ভর্তি হয়ে ওয়ার্ডে যাওয়া পর্যন্ত তার জন্য বড় এক ভোগান্তির মত ছিল বলে জানান তিনি। রোগী শামসুল আলমের দাবী হাসপাতালের কোন কর্মচারী তাদের সহয়াতায় এগিয়ে আসে নি। এমন কি বিছানায় নামানো সময়ও কেউ গায়ে হাত দেয় নি। দিয়েছে কিছু রোগির স্বজনরা।
মহেশখালী পুটিবিলা থেকে আসা রশিদ আহাম্মদ বলেন, আমি মাকে নিয়ে এসেছি, উনি বয়স্ক মহিলা, ভর্তি করানোর সময় গেইট থেকে আগে টিকিট নিয়ে আমি নিজে ঢুকে স্ট্রেচার নিয়ে এসেছি। পরে আমি নিজে ঠেলে নিয়ে গিয়ে জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে আবার স্ট্রেচার করে ভর্তি হওয়া ৪ তলার ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে বিছানায় নিয়ে গেছি কেউ সামান্য হাত পর্যন্ত লাগায়নি। পরে সেখানকার ২ জন মহিলা নার্সদের সাথে মিলে কিছু বিছানার চাদর দিয়েছে একটু পরিচর্যা করেছে। সে জন্য তারা নাস্তার টাকা বলে আমার কাছে ৫০ টাকা নিয়েছে। পরের দিন মাকে ২ টি পরীক্ষা করতে দিয়েছে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি জানতে চাইলে কেউ সহযোগিতা করছে কিনা ? তখন নার্সরা বলেন এখানে কেউ কাউকে সহযোগিতা করার সময় নাই। যার কাজ তাকে করতে হবে। একটি স্ট্রেচারও পায়নি, তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজে স্ট্রেচার ছাড়াই কোলে নিয়ে পরীক্ষাগারে নিয়ে গেছি। মোটকথা এখানে কর্মচারীরা কেউ সহযোগিতা করে না।
খুরুশকুল মনুপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, আমি বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এসেছি ৩ দিন হচ্ছে। চিকিৎসা খারাপ সেটা বলা যাবে না, কারণ আগের চেয়ে ডাক্তার এখন বেশি পাওয়া যায়, বিশেষ করে ইন্টার্ন ডাক্তাররা মোটামুটি দেখে। এ সময় তাদের কোন কর্মচারীরা সহযোগিতা করে কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন এখানে যার রোগি তাকেই টানতে হয়। জরুরি বিভাগ দিয়ে ঢুকার সময় আমি নিজেই অনেক কষ্ট করে স্ট্রেচারে তুলেছি কেউ সামান্যতম হাতও দেয়নি। ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পর ভাল চাদর দিয়েছে সে জন্য সেখানকার কর্মচারীকে টাকা দিতে হয়েছে। আর সেখানে আমরাই রোগির সব কাজ করি, তিনিও বলেন বাবাকে পরীক্ষা করাতে প্যাথলজিতে নিয়ে গিয়ে সব কাজ করতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। সেখানে কারো সহযোগিতা পাইনি। এটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। বেশ কয়েকজন রোগির সাথেও কথা বলে জানা গেছে রাতে বা কঠিন কোন বিপদের সময় সেখানে কর্তব্যরত ব্রাদারদের সহযোগিতা চাইলে পাওয়া যায় না। আর ভেতরে আমাদের কোন আত্মীয়-স্বজনও থাকতে দেয় না।
এব্যাপারে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সোলতান আহাম্মদ সিরাজী বলেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ব্রাদার, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার, সিকিউরিটি গার্ড আছে ১শ’র বেশি। রুটিন অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব থাকে বিভিন্ন জায়গায়। তাদের পেছনে সরকার প্রতি মাসে ব্যয় করছে বিপুল পরিমান টাকা। তবুও তাদের ভেতর মানবিকতা সৃষ্টি না হওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা সদর হাসপাতালের নবাগত তত্ত্ব¡াবধায়ক ডাঃ এসএম আবু সাঈদ বলেন, বিষয়টি আমি নিজেও লক্ষ্য করেছি। রোগিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। সেখানে রোগিরা সেবা পাবে না সেটা মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি আমি কঠোরভাবে নির্দেশনা দেব তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য। এর পরও যারা দায়িত্ব পালন করবে না তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: