ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মেয়র মুজিবের বিরুদ্ধে মামলাঃ বিক্ষোভ, দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ

 

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও জেলা যুবলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশ দাতা হিসেবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান কে প্রধান আসামী করে সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।

মামলার প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যা থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন মিছিল সমাবেশ করে ও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। কক্সবাজার শহরে সকল দোকান পাট বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। বিপাকে পড়েছে কয়েক হাজার পর্যটক সহ দুর পাল্লার যাত্রীরা।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদার (৩২) কে গুলি করা হয়। ব্যস্ততম একটি সড়কে রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় অতি নিকট থেকে তাকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তাঁকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি চমেক হাসপাতালে চিকৎসাধীন রয়েছেন।
এই ঘটনায় রবিবার দুপুরে মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন আহত মোনাফ সিকদারের বড় ভাই মো: শাহজাহান। ওই মামলায় আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নারী নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে। মামলার অন্যান্য আসামীরা হচ্ছেন শহরের বাদশা ঘোনা এলাকার মো. সরওয়ার কামাল প্রকাশ সবুজ, একই এলাকার সাদেক উল্লাহ ছিদ্দিকী, শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার খায়রুল আমিন ও তাঁর পিতা নুরুল আমিন, টেকপাড়া এলাকার আবদুল জব্বার এবং নতুন বাহারছড়া এলাকার আবু ছিদ্দিক খোকন। আসামীরা সবাই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মী বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে মেয়র মুজিবুর রহমান কে আসামী করে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার দিকে তাঁর কর্মী সমর্থক এবং বিক্ষুব্দ লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। মিছিল সমাবেশ ও সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে তারা প্রতিবাদ জানায়। এরপর কক্সবাজার শহরের সকল দোকান পাট ও বাস কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের মাঝখানে পৌরসভার ময়লা গাড়ি রেখে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে পৌর সভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বিক্ষুব্দ লোকজন। এতে বন্ধ হয়ে গেছে দুর পাল্লার বাস সহ সকল ধরণের যান চলাচল। শহরে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার পর্যটক। চরম আতংক বিরাজ করছে শহর জুড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে বুধবার রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আহত মুনাফ সিকদারের একটি ভিডিও রেকর্ড করেন কেউ একজন।
ওই ভিডিওতে মোনাফ সিকদার বলেন, ‘আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে।’ এই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই বিষয়ে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন- ‘ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে এই মামলা দায়ের হয়েছে। মোনাফ সিকদার শহরের চিহ্নিত একজন সন্ত্রাসী। হত্যা সহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি মোনাফ তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শহরের কলাতলী এলাকায় এক ব্যাক্তির জমি দখল করে নিয়েছে। তার এসব অপকর্ম আড়াল করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার ঘটনায় কারা জড়িত তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত মোনাফ সিকদারের ভাই বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি আজ রেকর্ড করা হয়েছে। এতে মেয়র মুজিবুর রহমান কে এক নম্বর আসামী করা হয়েছে। তিনি বলেন- পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করে দেখবে। এই ঘটনায় কার কি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: