নিজস্ব প্রতিবেদক :: পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা ১৪৪ রোহিঙ্গাকে মহেশখালীর সোনাদিয়া ও আশপাশের এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। উদ্ধারকৃতদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে একটি দালালচক্রের মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ট্রলারে উঠেছিলেন। পরে তাদেরকে মালয়েশিয়া বলে সোনাদিয়া দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের বহনকারী ট্রলার ও দালালচক্রের কোনো সদস্যকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
মহেশখালী উপজেলার কুত্বুজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা জানান- ২১ মার্চ (সোমবার) সকালে সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমপাড়া উপক‚লে একটি বড় জেলে নৌকা এসে নোঙ্গর করে। পরে ওই নৌকা থেকে একাধিক রোহিঙ্গা (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক) সোনাদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, ভাটার সময় তারা প্যারাবনের ঝোপেও আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের সাথে কথা বলে রোহিঙ্গা হিসেবে নিশ্চিত হয়ে পুলিশে খবর দেন। দুপুর থেকে পুলিশ ওই এলাকায় রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করেন।
রোহিঙ্গারা সোনাদিয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়েছেন- তারা প্রায় ১ সপ্তাহ আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য টেকনাফ থেকে এ ট্রলারটিতে উঠে, পরে এক সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে ট্রলারটি চালানোর পর সোমবার সকালে মালয়েশিয়া পৌঁছেছে বলে জানিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম পাড়া উপক‚লে নামিয়ে দেয়। তাদের নামিয়ে দেওয়ার পর ট্রলারটি দ্রæত সটকে পড়ে। ওই ট্রলারে মোট ১৬৮ জন রোহিঙ্গা ছিল বলে তারা জানান। মালয়েশিয়া পৌছিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে প্রতিজন হিসেবে দালালরা তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা গ্রহণ করে।
কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ কামাল জানিয়েছেন-সোমবার রাত পর্যন্ত একাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আব্দুল হাই জানিয়েছেন- রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সোনাদিয়া থেকে ১৩৮ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে, আরও কিছু রোহিঙ্গা ছড়িয়েছিটিয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের বহনকারী বোটটি ঠিক কবে সোনাদিয়া এসেছে নিশ্চিত নয় এবং এ ঘটনায় কোনো দালাল ও বোট আটক করা যায়নি। এ সব রোহিঙ্গাদের টেকনাফ ও উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্প পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওসি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিদের জানিয়েছেন- প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য তাদেরকে সোনাদিয়া দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাচারের আগেই তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে কক্সবাজার শহরে নেওয়া হবে। এরপর তাদেরকে উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে সোনাদিয়া থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে -রাত ১০টা পর্যন্ত ১৬২ জনের মধ্যে ১৪৪ জনকে স্থানীয় ভাবে উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: