ছালাম কাকলী, মাতারবাড়ী, মহেশখালী ::
কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প এরিয়া মাতারবাড়ীতে গত ১৫ আগষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত যুবলীগ নেতা জিয়াবুলের হত্যার পর থেকে এলাকা নিরব হয়ে পড়েছে। পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৮ আগষ্ট পর্যন্ত এজাহার ভুক্ত ৮ জন নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল ১৮ আগষ্ট জিয়াবুলের স্ত্রী মুক্তা নয়ন বাদী হয়ে মাতারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ কে প্রধান আসামী করে ২০ নাম উল্লেখ করে আরো ১০-১২ জন আছে বলে মহেশখালী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন। চেয়ারম্যান কে আসামী করায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে এলাকার লোক জনের মুখে মুখে।
নিহত জিয়াবুলের পরিচয় ঃ
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, মহেশখালী উপজেলা মাতারবাড়ী ইউনিয়নের হংস মিয়াজীর পাড়ার বাসিন্দা মতৃ ফরিদুল আলমের পুত্র জিয়াবুল দীর্ঘ দিন ধরে যুবলীগের সাথে সস্পৃত্ত ছিল। পেশায় একজন লবণ ও চিংড়ী চাষী। তিনি মরহুম সাবেক ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক ও সাবেক ইউপি সদস্য ফিরুজ আহমদের ছোট ভাই ও বর্তমান ইউপি সদস্য মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ ছরওয়ার মেম্বারের বড় ভাই হয়। তার বর্তমানে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে ২য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।
মইন্যার ঘোনা নিয়ে এ হত্যা কান্ড ঃ
মাতারবাড়ী মগডেইল বাজারের পূর্ব পাশে ২৩০ কানি জমি নিয়ে মইন্যার ঘোনা নামক একটি ঘোনা রয়েছে। ঐ ঘোনায় প্রায় ৩০ কানি জমি মাইজ পাড়ার বাসিন্দা মোস্তাক, শামসুল আলম, মাস্টার নুরুল ইসলাম ও বকসুসহ তাদের আত্মীয়- স্বজনদের। উক্ত ঘোনাটিসহ পার্শ্ববর্তী সূসন্না ঘোনার জমিনের মালিকদের হালসনের টাকা দিয়ে চিংড়ী প্রকল্প করে আসছিল হংসমিয়াজীর পাড়ার মরহুম ফরিদুল আলমের পুত্র চিংড়ী ও লবণ ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা জিয়াবুল হক। এরই মধ্যে ৩ বছর পূর্বে শামসুল আলম গং এর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে, জিয়াবুলের কাছ থেকে মাস্টার নুরুল ইসলাম ও মোস্তাক হালসনের লাগিয়তের টাকা নিলেও শামসুল আলম ও তার ভাই বকসু ইজারাদার জিয়াবুলের কাছ থেকে হালসনের টাকা নিচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে বিরোধের সুচনা ঘটে। সর্ব শেষ গত ২ বছর পূর্বে ঘোনার ইজারাদার জিয়াবুলের সাথে শামসুল আলম ও বকসু মধ্যে বাঁক বিতন্ডতা ঘটার কারণে উভয়ের মধ্যে ২টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ২ বছর পূর্বে কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার রুহুল আমিনের মাতার মৃত্যুর ঘটনার রাতে ঐ বিরোধপূর্ণ ঘোনায় লবন মাঠের পলথিন পাহারা দিচ্ছিল মাইজ পাড়ার শামসুল আলমের ভাইপোত ওয়াজ উদ্দিন, পার্শ্ববর্তী আত্মীয় আবু ছৈয়দের পুত্র মো: নাছির উদ্দিন ও সিরাজের পুত্র মোনাফ। ঐ দিন রাতে তৎকালীন মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি শাওন দাশের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ ঐ ৩জন কে রহস্য জনক ভাবে একটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। পুলিশ কে সহযোগীতা করেছিল বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ, হামেদ হোছাইন খোকা ও রিয়াজ উদ্দিন মেম্বার। গ্রেপ্তারের ঐ রাতে ক্রসফায়ের ঘটনাও ঘটে। এ সময় নাছির ও ওয়াজ উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়। দীর্ঘ দিন জেলে থাকার পর তারা জামিনে এসে বিভিন্ন ভাবে হাঁকা-বাঁকা করতে থাকে। এ ঘটনা নিরসনের জন্য শামসুল আলম তার স্ব-পক্ষের কাজগ পত্র নিয়ে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া (কক্সবাজার-২) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের স্বরনাপন্ন হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক নিরসনের জন্য ফোন করে জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার রুহুল আমিনের কাছে প্রেরণ করেন। মাস্টার রুহুল আমিন এ বিচার সম্পূর্ণ করার জন্য কাল-বিলম্ব করায় ২ পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ গত ২ সপ্তাহ পূর্বে মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এস.এম আমিনুর রহমান কে ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে নিয়ে ২ পক্ষ কে শান্ত রাখার জন্য অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যানের এ কথা শুনে মাতারবাড়ী পুলিশ দিন ও রাতে ঐ এলাকায় টহল জোরদার করেন। এরই ফাঁকে গত ১৫ আগষ্ট উশৃঙ্খল এক দল যুবক প্রকাশ্যে বাংলা বাজারস্থ ফরুক আহমদের বাড়ীর আঙ্গিনায় তাকে মাইজ পাড়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী শামসুল আলম, ওয়াজ উদ্দিন, কাইছার, নাছির মোনাফসহ ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী নেতৃত্বে ধারালো দা দিয়ে কোঁপিয়ে হত্যা করে। তাকে হত্যা করার পর থেকে মাতারবাড়ীতে চলছে থমথমে ভাব।
চেয়ারম্যানকে আসামী করার কারণ ?
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বিচার কার্য বেশী ভাগই নিহত যুবলীগ নেতা জিয়াবুলের ছোট ভাই ছরওয়ার মেম্বার কে দায়িত্ব অর্পন করতো। কারণ ছরওয়ার মেম্বার চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহর বিশস্থ একজন ইউপি সদস্য ও কাছে লোক ছিলেন। এ ছাড়া নিহত জিয়াবুলের পরিবার গেল নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যানকে সার্বিক সহযোগীতা করেছিল। এ কারণে উক্ত পরিবার ছিল চেয়ারম্যানের কাছের লোক। অথচ যারা জিয়াবুল কে হত্যা করেছিল তারাই চেরম্যানের চির শত্রুু। কিন্তু ছরওয়ার মেম্বারের এলাকা মাইজ পাড়ার দানু নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা কে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও মেম্বার ছরওয়ারের মধ্যে বাঁক বিতন্ডতার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মধ্যে দু’দফা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও এলাকা বাসীর হস্তক্ষেপে নিরসন হয়ে যায়। তবে ছরওয়ার মেম্বার রাগ- অভিমান করে ইউনিয়ন পরিষদ বর্জন করে। তা আদৌ বিদ্যমান। এলাকা বাসী ও সুশীল সমাজ মনে করেন চেয়ারম্যান কে এ ঘটনার জের ধরে চেয়ারম্যান কে আসামী করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: