আলীকদম প্রতিনিধি :: লামা বন বিভাগের আওতাধীন মাতামুহুরী রিজার্ভ ভূমিতে চাইম্প্রা মৌজার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বনভূমি জবর দখলের পায়তারা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বনবিভাগ এতে বাধা দিলে ফেসবুকে অপপ্রচার ও গীর্জা ভাঙ্গার অজুহাত সৃষ্টি করে অপপ্রচার নেমেছে একটি মহল। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে প্রকাশ, ১৯২০ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা ঘিরে ১ লক্ষ প্রায় ৩ হাজার পাহাড়ি ভূমিকে ‘মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট’ ঘোষণা করে। স্বাধীনতা পরবর্তী এ রিজার্ভ ফরেস্ট কক্সবাজার বন বিভাগের আওতাধীন ছিলো। ২০০১ সালের ১৯ জুলাই কক্সবাজার বন বিভাগ এ রিজার্ভ ফরেস্টকে লামা বন বিভাগের আওতায় হস্তান্তর করে। ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর প্রশাসনিক পুণর্বিন্যাসের আওতায় তৎকালীন সরকার লামা থানার বৃহত্তর ইউনিয়ন ‘আলীকদম’ এলাকাকে ‘থানা/উপজেলা’য় উন্নীত করে। আলীকদম উপজেলার মোট আয়তনের ৪০ শতাংশ ভূমি রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাভূক্ত।
২০১৪ সালের ২৪ জুলাই সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সদিচ্ছায় মাতামুহুরী রিজার্ভের মধ্যে ‘কুরুকপাতা ইউনিয়ন’ সৃষ্টি হয়। এ সময় কুরুকপাতাকে প্রশাসনিক ইউনিয়ন সৃষ্টি করলেও এ ইউনিয়নটিভূক্ত এলাকাকে ডিফরেস্ট ঘোষণা করা হয়নি। অপরদিক, ২০১৭ সালের দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) কর্তৃক ৫শ’ কোটি ব্যয়ে মাতামুহুরী রির্জার্ভের অভ্যান্তরে ৩৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক তৈরী করছে। সড়কটির নির্মাণ কাজ এখনো চলমান।
২০১৪ সালে ইউনিয়ন সৃষ্টি এবং ২০১৭ সাল থেকে রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যে রাস্তা তৈরীর ফলে এখানকার ভূমিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে অনেকের। ফলে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাহাড়ি লোকজন রিজার্ভের মধ্যে নতুন নতুন স্থাপনা সৃষ্টি করছেন। এসব স্থাপনা ভাঙ্গতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন লামা বন বিভাগের স্টাফরা। সাম্প্রতিক সময়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ বনবিভাগ সংশ্লিষ্টদের।
লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ মিনার চৌধুরী জানান, বিশাল আয়তনের এ রিজার্ভ ফরেস্টকে সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে। নির্মাণাধীন আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক ঘিরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। বন বিভাগ সম্প্রতি এ ধরণের স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়ায় এসব স্থাপনাকে ‘গীর্জা’ নাম দিয়ে অপপ্রচার করছে কতিপয় লোকজন।
বিট কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বন বিভাগের জায়গায় চাইম্প্রা মৌজার জমি মর্মে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে মেনরুম, মেনয়া, রাইবাহাদুর, সাংখাম, সিংয়ক, লেকত আলী, কাইনপ্রে, মংএখ্যাই, মাংঅং, অভিরাম, লংসান, উরওয়াই নামের বহিরাগত লোকজন।
তিনি বলেন, রিজার্ভের জমিতে দীর্ঘকাল ধরে মুরুংসহ অন্য জাতী গোষ্ঠীর লোকেরা বসবাস করছে। কিন্তু কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এসব জমি তাদের দাবী করেনি। কুরুকপাতা এলাকার ঝিরা পাড়ায় এসব লোকেরা চাইম্প্রা মৌজার জমি দাবী করে টাঙানো সাইনবোর্ড জব্দ করে বন বিভাগ।
বিট কর্মকর্তা বলেন, ঠান্ডা ঝিরি সাথীরাম পাড়াটি রাতারাতি গড়ে উঠেছে। সেখানে গীর্জার নাম দিয়ে মূলত: এসব লোকেরা নিজেদের পাকা বসতবাড়ি তৈরী করছিল। খবর পেয়ে বন বিভাগ সেটি ভেঙ্গে দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জানতে চাইলে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কাইচার জানান, মাতামুহুরী রিজার্ভ অভ্যন্তরে সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস করা এবং বৃক্ষ নিধন ও পাথর পাচার বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পাঠকের মতামত: