নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :::
নতুন করে মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন অংশে দুষ্কৃতকারীর দল বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরছে। এতে নদীর মৎস্যভাণ্ডার তছনছ হতে চলেছে। আবার বিষ প্রয়োগের পর জাল ফেলে ধরা মাছ বাজারেও বিক্রি করছে অসাধু চক্রটি। গত কয়েকদিন ধরে নদীর বিভিন্ন অংশে রাতের আঁধারে বিষ প্রয়োগের পর ভোরের আলো ফুটতেই নেমে পড়ছে চক্রটি। এদিকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মাছ খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
নদীর পাড় সংলগ্ন লোকজন অভিযোগ করেছেন, প্রতিবছর শীত মৌসুম শুরুর পর নদীর পানি কমে গেলে এক শ্রেণির লোভী মৎস্য শিকারী নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন শুরু করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত একসপ্তাহ ধরে নদীর চকরিয়া অংশের অন্তত ১০টি স্থানে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে মাছ ধরার জন্য। কাকারা ইউনিয়নের মাঝেরফাঁড়ি এলাকার ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে জানান, গত একসপ্তাহ ধরে নদীর উজান অংশে রাতের আঁধারে বিষ প্রয়োগ করছে দুষ্কৃতকারীর দল। ভোরের আলো ফুটতেই প্রয়োগকৃত বিষে আক্রান্ত হয়ে নদীতে ভেসে উঠছে মরা মাছ। আর সেসব মাছ কেউ জাল ফেলে ধরছে, আবার কেউ ভেসে উঠা মাছ সংগ্রহ করার পর নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে।
তিনি আরো জানান, এই অবস্থা এখনকার নয়, গত একযুগ ধরে এই পন্থায় মাতামুহুরী নদীতে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। নদীতে বিষ প্রয়োগের ফলে ভেসে উঠা মরা মাছ ধরতে নদীতীরের অনেক মানুষও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে নদীতে। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার অব্যাহত থাকায় নদীর মিঠাপানির মাছ অনেকটা কমে এসেছে।
সুরাজপুর–মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুরের রহিম উল্লাহ চকরিয়া নিউজকে জানান, ভোর রাতে নদীর উজানের অংশে বিষ প্রয়োগ করলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাটির অংশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পানিতে ভেসে উঠতে থাকে। এসময় দুর্বৃত্তরা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মাছগুলো ধরে ভোর রাতেই চলে যায়। এরপর শুরু হয় ভেসে উঠা মাছ ধরার জন্য নদীর দু’পাড়ের মানুষের প্রতিযোগিতা। এ অবস্থা বেশ ক’বছর ধরে অব্যাহত থাকায় এ নদীর মিঠা পানির মাছ অনেকটা কমে গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি চকরিয়া নিউজকে জানান, চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর–মানিকপুর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া, দিগরপানখালী, হাজিয়ান ও পৌর এলাকার বিভিন্ন অংশে প্রতিনিয়ত বিষপ্রয়োগ করে মৎস্য শিকার অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে নদীর মৎস্য ভাণ্ডার তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেঁচে থাকা মাছের বংশ বিস্তারও দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। একসময় এ নদীতে শত শত পেশাদার জেলে ও সৌখিন মৎস্য শিকারীরা মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে এ নদীতে মাছের আকাল শুরু হওয়ায় সিংহভাগ পেশাদার জেলে মৎস্য শিকার বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম উপজেলায় পূর্ব সীমান্ত কুরুপপাতা ইউনিয়নের শেষ প্রান্ত হতে এই নদী উৎপত্তি হয়ে আলীকদম, লামা, চকরিয়া ও পেকুয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিলিত হয়েছে। এ নদীর দৈর্ঘ্য ২৮৭ কিলোমিটার। ৪টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষের আশীর্বাদ এ নদীর মিঠা পানিতে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদ হয়ে আসলেও বর্তমানে মানবসৃষ্ট নানা অপকর্মের কারণে মাতামুহুরী নদীর অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হয়ে নদীর সিংহভাগ অংশ ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। মাতামুহুরী নদীতে হরেক প্রজাতির মিঠা পানির মাছ বিচরণের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠলেও বর্তমানে সে ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। হুমকিতে পড়েছে মাতামুহুরীর মৎস্যভাণ্ডার।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন অংশে বিষপ্রয়োগের ঘটনা সত্য। বিষ প্রয়োগের কারণে মাছ যেমনি মরে যাচ্ছে, তেমনি মাছের বংশ বিস্তারও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষ প্রয়োগকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সহায়তা না করলে আমাদের পক্ষে কিছুই করার থাকে না’। মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মাছগুলো বাজারে বিক্রি করলে সেই মাছ ক্রয় না করার জন্য সর্বসাধারণকে সচেতন করা অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মাছগুলো মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি করবে।
পাঠকের মতামত: