ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরীতে তীব্র ভাঙন।। চকরিয়ায় শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন, আশ্রয়হীন মানুষ

matছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বৃষ্টিপাত কমে আসায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলে এখনো রয়েছে পানি। এতে কম করে হলেও অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। তারা তীব্র সংকটে পড়েছেন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। এদিকে মাতামুহুরী নদীতে বিপদসীমা কেটে গিয়ে উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি প্রবাহিত হলেও তীব্রতর হয়েছে দুইতীরের ভাঙন। এতে গত তিনদিনে শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্র্ভে বিলীন ছাড়াও বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এতে বাড়িঘর ফেলে চলে যাওয়া এসব পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন নতুন করে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।

অবশ্য জেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া চার টন জিআর চাল বন্যাদুর্গত খেটে খাওয়া মানুষদের মাঝে বিলি করছেন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন। বৃষ্টিপাত একেবারে বন্ধ থাকায় বন্যা পরিস্থিতিরও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তবে পেকুয়াতে বন্যা তাণ্ডব চালালেও সেখানে কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, গত তিনদিনে পৌরসভার হালকাকারা, আবদুল বারীপাড়াসহ নদীতীরে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এতে কম করে হলেও পৌরসভার ৩০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। বসতবাড়ি হারানো এসব পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ায় তাদেরকে নতুন করে পুনর্বাসনসহ সরকারীভাবে যথাযথ সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম জানান, চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বন্যা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত একেবারে কমে যাওয়ায়। কোন কোন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে এখনো বানের পানি অবস্থান করলেও তা দু-একদিনের মধ্যে নেমে যাবে।

তিনি আরো জানান, চকরিয়ার বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিলি করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিক চার টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব চাল বন্যাদুর্গত বিশেষ করে যারা একনাগাড়ে কয়েকদিন ধরে কাজ-কর্ম করতে পারবেন না তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে যাতে দু-বেলা খেতে পারে সেজন্য তাদের মাঝে এসব চাল বিলি করা হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘সরকারীভাবে বন্যার্তদের মাঝে জিআর চাল বিলির পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্নস্থানে শুকনো খাবার হিসেবে চিঁড়া, মুড়ি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।’

সরেজমিন বন্যাদুর্গত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা ছাড়াও কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, খুটাখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বানের পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠছে তাণ্ডবের চিত্র। এতে এসব ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কে বড় খাদ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

যেসব এলাকা থেকে এখনো বানের পানি নেমে যেতে পারেনি সেসব এলাকার বাসিন্দারা উঁচু ভবন, সড়কের ধারে পলিথিনের ঝুঁপড়ি ঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে স্ব স্ব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুলতান আহমদ সিরাজী জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ১৯টি মেডিক্যাল টিম মাঠে কাজ করছে। এসব টিম বন্যার্তদের নানা চিকিৎসা ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরবরাহ দিচ্ছে।

পাঠকের মতামত: