অনলাইন ডেস্ক :: কয়লাভিত্তিক আরও ছয়টি প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কক্সবাজারের মহেশখালীতে এগুলো নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। সবমিলিয়ে এ ছয়টি কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৯২০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পিডিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত জুনে সরকার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছিল। সেগুলোর মধ্যে মহেশখালীতে প্রতিটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুইটি কেন্দ্র ছিল। মহেশখালী দ্বীপে সব মিলিয়ে আটটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় এখন সবগুলো বাতিল হচ্ছে। সব মিলিয়ে এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট। বাতিল হওয়া কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর কয়েকটি এলএনজি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে রূপান্তরিত হবে। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন পাওয়ার পরও কোম্পানিগুলো নির্মাণকাজ শুরু না করায় এবং পরিবেশগত ঝুঁকি কমানোর অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।
কয়লাভিত্তিক আটটি কেন্দ্র এবং ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতার একটি এলএনজিভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পিডিবি এখন পর্যন্ত মহেশখালী দ্বীপে ৫ হাজার ৫১৮ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। আরও ৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাতিল হতে যাওয়া ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ প্রকল্প।
গত ৭ অক্টোবর পিডিবির সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির দুইটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণের কথা ছিল বে অব বেঙ্গল পাওয়ার কোম্পানির। চায়না হুয়াদিয়ান হংকং কোম্পানি এবং পিডিবির যৌথ উদ্যোগে এ কোম্পানি গঠিত হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এছাড়াও রয়েছে—মালয়েশিয়ার টেনেগা ন্যাশনাল বারহাদ ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র, দক্ষিণ কোরিয়ার কেপকো ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র, চীনের সেপকো ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। টেনেগা ন্যাশনাল বারহাদ, কেপকো এবং সেপকোর সঙ্গে পিডিবির সমঝোতা স্মারক সই হলেও তা আর এগোয়নি। এখন সরকার এ কেন্দ্রগুলো নির্মাণ থেকে সরে এসেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগে দেওয়া ঐ চিঠিতে বলা হয়, যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি সেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে মহেশখালীতে পিডিবির পরিকল্পনাধীন অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোও বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এদিকে গত জুনে বাতিল হওয়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ৫২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের পরিবর্তে মহেশখালীতে ৭২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পিডিবি মতামত দিয়েছে। বেসরকারি কোম্পানি ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা লিমিটেডের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবি এ মত দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্তের পর পিডিবি মহেশখালীতে ওরিয়নকে ৩০ একর জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দিতে পারে।
গত জুনে বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো হলো—পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সুপার থারমাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা ২৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম ২৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনা ৫৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র (২), বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো বাতিল করা হলেও দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হবে না। কয়লার প্রকল্পগুলো গ্যাস, এলএনজি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।-ইত্তেফাক
পাঠকের মতামত: