নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজারে ভুলে ভরা জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এক ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করলে ঠিকানা দেখাচ্ছে অন্য ইউনিয়নে। মাসের পর মাস এই ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে ঘুরাঘুরি করেও সুরাহা করতে পারছেন না অনেকে। ফলে ভোটার হওয়া ও চাকরির আবেদন করতে সমস্যায় পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।
কক্সবাজারে দীর্ঘদিন জন্মনিবন্ধন অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুনরায় শুরু হলেও বেকায়দায় পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। জন্মনিবন্ধন অনলাইন সম্পন্ন করে দেখা যায় সর্বত্র ভুলে ভরা। এছাড়া নিজ ইউনিয়নে আনলাইন করে সনদ তুলে দেখা যায় আবেদনের অফিস হিসেবে দেখাচ্ছে অন্য ইউনিয়ন। তা সংশোধন করতে কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। অন্য ইউনিয়নে সংশোধন করতে গেলে মোটা অংকের টাকা দাবী করছেন ইউপি সচিব ও ওয়ার্ড মেম্বার।
কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াছমিন জানিয়েছেন, তিনি মহেশখালীর নিজ ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইন করার পর আবেদনের অফিস হিসেবে দেখা যাচ্ছে চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়ন। পরবর্তীতে ওই ইউনিয়নের সচিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তদন্ত করে দেখতে হবে বলে জানান। এর এক সপ্তাহ পরে পুনারায় যোগাযোগ করলে তিনি এসব তাদের বিষয় নয় বলে জানিয়ে দিয়ে ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। ওই মেম্বারের সাথে যোগাযোগে করলে তিনি এটি সচিবের কাজ বলে ফিরিয়ে দেন। পুনরায় সচিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কৌশলে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। তিনি আরো জানান জন্ম নিবন্ধনের কারণে এখন ভোটার ও চাকরির জন্য কোন প্রকার আবেদন করতে পারছি না।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শুধু একজন নয় অসংখ্য মানুষ জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে গিয়ে এই সমস্যায় পড়েছেন। খুটাখালী ইউনিয়নে আরো কয়েকজন ভুক্তভোগী এসেছেন অভিন্ন সমস্যা নিয়ে। চকরিয়া বরইতলী থেকে আসা শামসুল আলম জানান, আবেদনের অফিস খুটাখালী আসায় এখানে আসতে হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত ১০ বার পরিষদে এসেছি কিন্তু ঠিক করে দেওয়ার কথা বললেও নানা ভাবে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন ইউপি সচিব। এছাড়া দালাল মারফত কৌশলে টাকাও দাবী করেছেন। জন্মনিবন্ধন সনদ ভুল হওয়ার কারণে চরম বেকায়দায় আছি। দ্রুত সুরাহা না হলে অনেক বড় সমস্যায় পড়তে হবে।
এদিকে অনেকের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ ভুলে ভরা। কিন্তু ওই ভুলের দায় কেউ নিচ্ছেন না। আবার সমাধানের পথও দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিকদের নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপত্র বাধ্যতামূলক।
সনদে কারো কারো ক্ষেত্রে জন্ম তারিখ, নারীর ক্ষেত্রে পুরুষ, পুরুষের ক্ষেত্রে নারী, নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, কারো কারো ক্ষেত্রে বাবার চেয়ে ছেলের বয়স বেশি, আবার জন্মনিবন্ধন নম্বরে ১৭টি ডিজিট থাকার কথা থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৩, ১৪ ও ১৫টি কোড রয়েছে। এসব জটিল ভুল সংশোধন করার জন্য ভুক্তভোগীরা স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও তথ্য সেবাকেন্দ্রের শরণাপন্ন হলেও সন্তোষজনক জবাব মিলছে না।
জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর সঙ্গে সংশ্রিষ্টরা বলছেন, সনদের ভুল সংশোধনের এখতিয়ার তাঁদের নেই। আবার অনেকে সংশোধনী ফরম পূরণ করে ইউপি সচিব, চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে ই-মেইলে ও ডাকযোগে পাঠাচ্ছে জন্ম নিবন্ধন কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক বরাবর। কিন্তু এসব সংশোধনী কতদিনে সম্পন্ন হবে তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছে না। এ কারণে অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে
পাঠকের মতামত: