মাহবুবুর রহমান ও এম. বেদারুল আলম : প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ২৬ নভেম্বর। ফলাফল প্রকাশের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারিত হয়নি। ফলাফল ঘোষণার পূর্বেই জেলার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে নামতে হয়েছে। শহরের দু’ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হতে বরাবর মত এবারো শুরু হয়েছে ভয়ংকর কোচিং বাণিজ্য। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় কোচিং বানিজ্য বহুগুণে বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা রীতিমত আঁতকে উঠার মত। শহরের দু’ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শুধুমাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি কোচিং নিয়ে বাণিজ্য করছেন অন্তত ১৮ জন শিক্ষক। আগামী ২৩ ডিসেম্বর শনিবার দু’ স্কুলের ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করেছে সরকার। কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত দু’ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষক মাত্র ২২ দিনেই হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এই ১৮ জন শিক্ষক ভর্তি পরীক্ষার জন্য ২৭ নভেম্বর পিএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে) তালিকা প্রনয়ন সম্পন্ন করে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করে কোচিং কার্যক্রম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। ভর্তি কোচিং চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কোচিং বানিজ্যে এবছর গত বছরের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা হচ্ছে কক্সবাজার সরকারি বালিকা এবং বালক বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে। তবে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চেয়ে বানিজ্যে পিছিয়ে রয়েছে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
অন্যান্য বছরের চেয়ে এবছর কোচিং বানিজ্যে প্রথমে রয়েছে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল ফারুকের নেতৃতে¦ ৫ জনের সিন্ডিকেট। উক্ত সিন্ডিকেট পালা করে ২ ব্যাচে ৩শ জন করে ৬০০ জনের কাছ থেকে ফরম সহ ২৩০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোচিং করতে ও যে ফরম পুরণ করতে হয় তা চালু করে দেখিয়েছে উক্ত ৫ শিক্ষক। ইকবাল ফারুকের নেতৃত্বে কোচিং বানিজ্যে লিপ্তরা হলেন কক্সবাজার সরকারি বালিকার শিক্ষক যথাক্রমে আনসারুল হক চৌধুরী, উম্মে জাহেদা সুলতানা, এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফজলুল্লাহ। তাদের ভেন্যু ২টি হল গোলদিঘির পাড় সংলগ্ন কবরস্থান রোড এবং বার্মিজ মার্কেট সংলগ্ন ম্যালেরিয়া রোডের মডেল একাডেমি। আলাপ কালে সিন্ডিকেট প্রধান ইকবাল ফারুক বলেন আমরা কিছু সংখ্যক কোচিং করাচ্ছি। এটা সবাই করছে।
এবার কোচিং বাণিজ্যে খানিকটা পিছিয়েছে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তৈয়ব দিদার। বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তির জন্য কথিত তৈয়ব কোচিং সেন্টারে ৩শ শিক্ষার্থী অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে মোট ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন আবু তৈয়ব। তবে তিনি বলেছেন আমার এমনিতে নাম হয়ে গেছে কিন্তু কাজ করছেন অন্য শিক্ষকরা। এ শিক্ষক বৌদ্ধ মন্দির সড়ক এবং সিকদার মহলে ২ ব্যচ পড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। এরপরের অবস্থানে রয়েছেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জাকারিয়া মোঃ ইয়াহিয়া হাসান ও রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। যৌথভাবে গোলদিঘির পাড়ের বাসায় ৩শ জন পড়াচ্ছেন ২ হাজার টাকা করে। শহরের ঘোনার পাড়ায় বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সুমন দত্ত ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নারায়ন প্রসাদ দেব যৌথ ভাবে পড়াচ্ছেন ২ শ জন। ছাত্র প্রতি ২ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন ।
এছাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুরেশ বড়–য়া, জালাল উদ্দিন, আবদুল আমিন ৩ জনে মোহাজের পাড়ায় প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
শহরের রয়েল বোর্ডিং সংলগ্ন হুদা ম্যানশনে ২ জনে চালাচ্ছেন ভর্তি কোচিং বানিজ্য। এরা হলেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রিয়াজুদ্দীন ফারুক এবং আবু জোবাইর। ২শ জনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মছরুরুজ্জামান পড়াচ্ছেন ৪০ জন এমনটাই দাবি কয়েকজন অভিভাবকের।
অপরদিকে শহরের আলোচিত কোচিং বানিজ্যকারি সাহিত্যিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিন বছর জুড়ে কোচিং নিয়ে বেশ আলোচিত হলেও ভর্তি কোচিং করাচ্ছেন ২শ জনকে জানিয়েছেন কতিপয় অভিভাবক। সরকারি চাকুরী ছাড়তে রাজি তবু কোচিং ছাড়তে রাজি না এমন দম্ভোক্তিকারি জালাল উদ্দিনের হাত প্রশাসন পর্যন্ত থাকায় ৮ বছরে ও আছঁড় লাগাতে পারেনি প্রশাসন ,এমন বিশ্বাস কক্সবাজারের শিক্ষিত সমাজে।
তবে প্রসিদ্ধ কোচিং শিক্ষক শাহজাহান কুতুবী এ বছর ব্যতিক্রম। তিনি এবার ভর্তি কোচিং বাদ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি কোচিং এ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন করে কয়েকজন শিক্ষক মাঠে নেমেছেন। উক্ত শিক্ষকগণ প্রতিজনে দেড় হাজার টাকা হারে ৩ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহেদুর রহমান ২শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা হারে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া দু’ সরকারি বিদ্যালয়ের আরো ৪ জন শিক্ষক ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি কোচিং এর নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। অথচ শহরের দু’ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২ পালা করে ১ পালায় ১২০ জন করে মোট ৪৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। কোচিং বানিজ্যরত শিক্ষকগণ কে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রশ্ন প্রনয়ন, খাতা মূল্যায়ন ,ফলাফল প্রস্তুতের কোন দায়িত্ব প্রদান করেননি।তবু উক্ত শিক্ষকরা অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিবছর।
ভর্তির প্রশ্নপত্র প্রনয়নে দু’ সরকারি বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের কোন ধরনের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকা সত্বেও পছন্দের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে ৪৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে অর্ধকোটি টাকার মত ভর্তি বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। সরকার কোচিং বন্ধে নানা পদক্ষেপ আইন করলেও তা কার্যত ফাইলবন্দিই রয়েছে। মাত্র ২০ দিনে ২ হাজার টাকা অনেক অভিভাবক যোগাড় করতে না পেরে সন্তানের মানসিক অবসাদের জবাব দিতে পারছে না। ফলাফল ঘোষণার পূর্বেই ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং মানসিক চাপ কতটুকু সামাল দিতে পারে তা সচেতন মহলের ভাবা উচিত।
শিক্ষাকে প্রতি বছর উক্ত শিক্ষকগণ বাণিজ্যকরণ করলেও কোন ধরনের শাস্তি না হওয়ায় কোচিং বাণিজ্য নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১২ সালে উক্ত কোচিং বানিজ্যের বিরুদ্দে তৎকালিন শিক্ষা শাখার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সেলিনা কাজী অভিযান চালিয়ে ৪ শিক্ষককে আটক করলে ২ বছর কোচিং বানিজ্য হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু এবার নতুন করে যোগ হয়েছেন আরো ৫ জন। ফলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি নিয়ে কোচিং এ নতুন মাত্রা পেয়েছে। উক্ত অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লুৎফুন্নেছা বলেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোচিং বিষয়ে সুনির্দিস্ট ভাবে বারন করা হয়েছে সেটা আমরা স্কুলের শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছি। আর এখন কেউ কোচিং করাচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। একইভাবে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামু মোহন সেন বলেন প্রশাসনের কড়া বার্তা আমার সকল শিক্ষকের কাছে পৌছে দিয়েছি।এবং সবাইকে লিখিত ভাবে নিষেধ করা হয়েছে এর পরও কেউ কোচিং বানিজ্যে জড়ালে সেটা দুঃখ জনক।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ হোসেন বলেন ৫ম শ্রেনী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং এ জড়ানো সত্যি খুবই দুঃখ জনক। এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকাশ:
২০১৭-১২-০১ ১০:৫৫:৩৪
আপডেট:২০১৭-১২-০১ ১০:৫৫:৩৪
- কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি প্রত্যাহার
- কক্সবাজারের বনে ১২ হনুমান উদ্ধারের ১০ দিন পর ৫৮টি বন্য পাখি উদ্ধার
- আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে গায়েবি মামলার আসামি এবি পার্টির নেতা
- শান্তি-শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজন আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন -চকরিয়ায় মাসুদ সাঈদী
- চকরিয়া শহর পরিস্কারের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের ১০১ দিবস উদযাপন
- চকরিয়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাচার বন্ধে বনবিভাগের অভিযান, দুইটি ট্রাক জব্দ
- চকরিয়ায় প্যারাবন নিধনের মামলায় আসামি নিরীহ মানুষ
- পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
- চকরিয়ায় সেনাবাহিনীর হাতে নারীসহ তিনজন গ্রেফতার
- মেরিন ড্রাইভ সড়কে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিহত
- চকরিয়ায় সাবেক এমপি জাফর সাঈদি সহ আওয়ামী লীগের ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় নতুন মামলা
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
- শান্তি-শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজন আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন -চকরিয়ায় মাসুদ সাঈদী
- চকরিয়া আসছেন চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম
- মেরিন ড্রাইভ সড়কে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিহত
- চকরিয়ায় সেনাবাহিনীর হাতে নারীসহ তিনজন গ্রেফতার
- চকরিয়ায় আওয়ামিললীগ ক্যাডার নজরুল সিণ্ডিকেটের দখলে ৩০ একর বনভুমি:
- রামুতে ল্যাপটপ পেলেন ৮০ নারী ফ্রিল্যান্সার
- চকরিয়া শহর পরিস্কারের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের ১০১ দিবস উদযাপন
- চকরিয়ায় সাবেক এমপি জাফর সাঈদি সহ আওয়ামী লীগের ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় নতুন মামলা
পাঠকের মতামত: