ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপির সমাবেশ কাল : রাজধানীতে শতাধিক গ্রেফতার, বাসায় বাসায় তল্লাশি

অনলাইন ডেস্ক ::

ঐতিহাসিক ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল গণসমাবেশ করবে বিএনপি। ২৩ শর্তে এ সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে দলটি।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতারা বলছেন, কালকের এ সমাবেশে জনতার ঢল নামবে।

এদিকে সমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক পদধারী নেতাকে। এমন পরিস্থিতিতে উস্কানি দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাধাগ্রস্ত না করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি জানিয়েছে, দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন খালেদা জিয়া। তিনি তার বক্তব্যে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ফের আলোচনার আহবান জানাবেন।

গত দুই বছর ধরে বড় কোনো সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছিল না বিএনপি। ১৯ মাস পরে রাজনৈতিক কোনো সমাবেশে আসছেন বিএনপি প্রধান। আর এর ফলে সমাবেশে বিপুল সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ঢাকা ও এর পাশের জেলাগুলো থেকেও নেতা-কর্মীরা এ সমাবেশে যোগ দেবেন।

২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার কথা জানিয়ে আজ দুপুরে নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য বিএনপিকে পুলিশ সম্মতি দিয়েছে। এই গণসমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোপূর্বে আমরা ১২ ঘণ্টার নোটিশেও সমাবেশ সফল করেছি। অতীতের চেয়ে এবার একটু আগে সম্মতি দেয়ায় ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। সমাবেশ সফল করতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতাও চান তিনি।

তিনি বলেন, আশা করি আপনারা সহযোগিতা করবেন। সমাবেশে বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক যে পরিবেশ আছে তার বিঘ্ন ঘটাবেন না। উস্কানি দিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি করবেন না। কারণ ইতোমধ্যে কয়েকদিনের যেসব ঘটনা আপনারা ঘটিয়েছেন সেগুলো কিন্তু একটা ভিন্ন অর্থবহন করে। এ পর্যন্ত যে তথ্য আমরা পেয়েছি, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্নস্থানে নেতা-কর্মীদের রিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারসহ পুলিশি তাণ্ডব চলছে।

চরম উস্কানির মধ্যেও ধৈর্য ধরে সমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, গণসমাবেশ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, শুধু জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনই এই গণসমাবেশের মূল লক্ষ্য নয়। সেই সাথে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবার জন্যে চলমান যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে সুসংহত করবার ক্ষেত্রে, জনগণের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার যে ম্যাসেজ সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র নেতা নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আতাউর রহমান ঢালী, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুনুর রশীদ, ফজলুল হক মিলন, রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশের শর্তে যা যা আছে : বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসে’ এমন কোনো ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, ব্যক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। লাঠি-সোটা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না। মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসা যাবে না। উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না। রাষ্ট্রবিরোধী আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি বা জননিরাপত্তা বিরোধী কার্যকলাপ করা যাবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন সংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের আগে উদ্যান বা তার আশপাশের রাস্তা-ফুটপাটে সমবেত হওয়া যাবে না। যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়- এমন কিছু করা যাবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান স্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনুমোদিত স্থানের বাইরে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না।

গ্রেফতার-তল্লাশি-মামলা
এদিকে সমাবেশকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেফতার ও বাসায় বাসায় তল্লাশির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন করে মামলা হয়েছে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদল সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা জামাল রিয়াদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম রাহিমী, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ভিপি হানিফ, সাবেক কমিশনার আব্দুল মজিদ, রমনা থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হক মাসুম, যুবদল নেতা শাহীন, টুটুল ও কাকনসহ বেশ কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

গত ৪৮ ঘণ্টায় গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি আতিক উল্লাহ আতিক, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মিন্টু, আশরাফুর রহমান বাবু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোঃ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ শুক্কুর আলী (কোম্পানী), দক্ষিণখান থানা বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক এস এম ইমরান হোসেন, যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন, দক্ষিণ খান থানা বিএনপি নেতা হাজী আশরাফ উদ্দিন, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের, শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন ভূঁইয়া, শ্যামপুর থানা বিএনপি সহসভাপতি মাইনুল ইসলাম মুক্তার, আদাবর থানা বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান দীপ্তি, ছাত্রদল নেতা রবিউল ইসলাম রবি, ইয়াসির আরাফাত লিয়ন, চকবাজার থানা ছাত্রদল নেতা ইমরান খান, ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, কামরুল ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল নেতা রুবেল, আল আমিন, ইব্রাহিম, ওয়ারী থানা ছাত্রদল নেতা মোঃ রাব্বী, মোঃ রাসেল, নোয়াখালী জেলা ছাত্রদল নেতা মোঃ আবুল হাসান, রমনা থানা শ্রমিক দল নেতা মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দল নেতা হাবিব উল্লাহ মাহবুব, নিজাম উদ্দিন এবং ক্রীড়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুনীর হোসেন, গেন্ডারিয়া থানা বিএনপি নেতা বাবলু, বাসেদ, পল্টন থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি নাছির, শাজাহানপুর থানা যুবদল নেতা নাছিম, মোঃ সেলিম, পল্টন থানা যুবদল নেতা মাসুদ হোসেন, খিলগাঁও ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন, সবুজবাগ থানা বিএনপি নেতা লিটন খান, কামরুজ্জামান উৎপল, কলাবাগান বিএনপি নেতা নিজাম, মিজু, বিমানবন্দর থানা যুবদল নেতা বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া, মান্ডা ইউনিয়ন যুবদল নেতা নবী হোসেন, সুত্রাপুর থানা বিএনপি নেতা কাজী সালেহ উদ্দিন, যাত্রাবাড়ী থানা যুবদল নেতা আমির হোসেন, শ্যামপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা রহমত উল্লাহ ও তার ভাতিজা ফয়সাল, যুবদল নেতা মানিক দত্ত, মজিবুর রহমান আনুর ছোট ভাই মুনির ও যুবদল নেতা ভিপি হানিফের ছোট ভাই।

এছাড়া শুক্রবার রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের ধানমন্ডির বাসভবন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা জামাল রিয়াদ, সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম রাহিমী, কদমতলী থানা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি সুমন আহমেদ, সুত্রাপুর থানা বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান আনু, নুরুল ইসলাম সেন্টু, মান্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোঃ আলমাস, কদমতলী ছাত্রদল নেতা রাকিব সরদার, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ভিপি হানিফসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশী চালিয়েছে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিনকে বাসায় না পেয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নি:শর্ত মুক্তি এবং বাসায় বাসায় পুলিশী তল্লাশী বন্ধের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

ঢাকায় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ জনসভা হয়েছিল গত ৫ জানুয়ারি, নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। আর সোহরাওয়ার্দীতে খালেদার সর্বশেষ সমাবেশ হয় ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি। তার মাত্র ১৫ দিন আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

পাঠকের মতামত: