বাঁকখালী নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলন। রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সভাপতি সরওয়ার আলমের নের্তৃত্বে সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, কক্সবাজারের মানুষ কক্সবাজারের জন্য কাল হয়েছে। তাদের আন্তরিকতা ও সৎ মানসিকতার অভাবে কক্সবাজার তথা বাঁকখালীর আজকের এই অবস্থা। দখলদারিত্বের মানসিকতা পরিবর্তন পূর্বক এখই সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। অন্যতায় কক্সবাজারবাসীর অস্থিত্ব হুমকি মুখে। তিনি বলেন, আমিও আপনাদের লোক, বাঁকখালী নদীকে বাঁচাতে তাঁকেও সাথে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শামস্, সিনিয়র সহ-সভাপতি আজাদ মনসুর, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. আবুহেনা মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম মাহমুদ, নদী প্ররিব্রাজক দল কক্সবাজারের সভাপতি আব্দুল আলীম নোবেল, সিনিয়র সহ সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শাকিল, সহ সভাপতি আজিজ রাসেল, রাশেদুল আরফাত।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার থেকে অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলোঃ বাঁকখালী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নদী। অসংখ্য বাঁক নিয়ে যে নদীর সৃষ্টি তার নাম বাঁকখালী নদী। আর বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের পর্যটন বারান্দা খ্যাত দরিয়ানগর। বাঁকখালী নদী যুগ যুগ ধরে জানমালের ক্ষতি থেকে রক্ষা এবং জীবন ও জীবিকার জন্য বিরাট অবদান রেখেছে। কালের বিবর্তনে নতুন প্রজন্মের কাছে নদীটি এখন শুধুই ইতিহাস। কক্সবাজার জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত এই তিনটি নদীই পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে গভীরতা ও প্রশস্থতা কমার পাশাপাশি কমেছে এর খরস্রোতা। এতে পানিশূন্য হয়ে নদীগুলো হারিয়ে ফেলেছে নাব্যতা।
২০১৪ সালের শেষ দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২৪২ দখলদারের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানো হলেও পরে এটি যাচাই-বাছাই করে ৯২ জন দখলবাজদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট উধর্বতন মহলে পাঠানো হয়। এরপরেও দখলদাররা আরো বেপরোয়াভাবে নদী দখল করে নিত্য নতুন স্থাপনা নির্মান করে। দুই তীর দখল করে গড়ে উঠেছে চিংড়ি ঘের, লবণমাঠ, পোল্ট্রি খামার, চাল ও ময়দার মিল, ঘরবাড়ি-দোকানপাটসহ কয়েক শত স্থাপনা। এদিকে শহরের সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে গতিপথ। পলিথিনসহ নানা আবর্জনায় ধবংস হচ্ছে প্যারাবন। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীর তীরে অন্তত দুই হাজার নলকুপের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে।
দুই তীরে কয়েক হাজার একর সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে দখলে রেখেছে দখলদাররা। উক্তরূপ দখলদারদের হাত থেকে বাঁকখালী নদীকে উদ্ধার করতে না পারলে অচিরেই লোকালয়ে হয়ে যাবে। তাই পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়নকে রক্ষায় বাঁকখালী নদীকে বাঁচাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপ একান্ত জরুরী বলে মনে করেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
পাঠকের মতামত: