ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বাঁকখালীর নাব্যতা ফেরাতে ২০৪ কোটি টাকার প্রকল্প

তুষার তুহিন, কক্সবাজার ::: bakhhali- (1)
পাহাড়ি ঢল, ড্রেজিং হীনতা ও দখলদারের দৌরাত্যে¡ বাঁকখালী নদী হারিয়েছে তার পুরানো জৌলুস। নদী শাসনের অভাবে বিলীন হয়েছে বহু গ্রাম।  পাহাড়ের মাটিতে ভরাট হয়ে এক সময়ের খর¯্রােতা নদীটি সংকীর্ণ হচ্ছে দিনে দিনে। তিন যুগেরও বেশী সময় ধরে বা ড্রেজিং না হওয়ায় নদীটি তার নাব্যতা ও গভীরতা হারিয়ে  নৌ চলাচলে হচ্ছে ঝ’কিপূর্ণ। ওই নদীর নাব্যতা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতেই কক্সবাজারে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া সদর ও রামুর বিভিন্ন নি¤œাঞ্চলের লোকজন বর্ষাকালে থাকছে পানির নিচে। এনিয়ে কক্সবাজার বাসী নানা সময়ে  আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন। দাবী তুলেছেন নদীটি ড্রেজিংসহ নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহনের। এমনি দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের  জুন মাসের একনেকের সভায় বাকখালী নদীর সাড়ে ৮ কিলোমিটার ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ১৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পটি নদীর জৌলুস ফেরাতে পর্যাপ্ত ছিল না। বিষয়টি অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ড্রেজিংয়ের নির্দেশ দিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহনের আদেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুসারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে ২৮ কিলোমিটার নদী খননের প্রস্তাব করে ২০৪ কোটি টাকার টাকার একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে  সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, ২০১৫ সালে বাকখালী নদীর নাব্যতা ফেরাতে একনেকের সভায় ১৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রকল্পটি বাকখালীর ঐতিহ্য ফেরাতে যথেষ্ট নয়। এ বিষয়টি বিচক্ষন প্রধানমন্ত্রীর চোখ এডায়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে সাড়ে ২৮ কিলোমিটার নদী খননের উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে।  প্রকল্পটি আজ পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বাকখালী নদী খননে নেওয়া আগের প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন গ্রহন করা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২০৩ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার শহরের নাজিরটেকের বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে রামুর কাউয়ারখোপ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। নদীর একপাশে ১৮ কিলোমিটার এবং অন্যপাশে ২০ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করা হবে। বাকখালীর নদীর ১.০৮ কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন কিংবা ভাঙ্গন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এরমধ্যে বাংলাবাজার, মুক্তারক’ল, উলুবনিয়া, মিঠাছড়ি, মিস্ত্রীপাড়া, হাইটুপি, মনিরঝিল ও সিকদার পাড়ার মারাত্বক ভাঙ্গন ঠেকাতে নদী শাসন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া পানি নিয়ন্ত্রনেরে জন্য ৮ টি স্লুইচ গেইট নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এগুলো নির্মিত হবে তারাবনিয়াছড়া, গোদারপাড়া, আলী কদম ব্রিকফিল্ড, কুলিয়ারছড়া, ঘাট কুলিয়ার ছড়া, জয়নাল ছড়া, খতেখারকুল ও রামুর বড়–য়া পাড়ায়।  স্লুইচ গেইট সংলগ্ন এলাকায় ১২ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। এছাড়া রামুর হাইটুপির যেসব স্থানে নদী শাসনের ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব নয় সেখানে ৮০০ মিটার ফ্লাট ওয়াল নির্মিত হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোফাজ্জেল হোসেন জানান, নতুন প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে দু একদিনের মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারপর পানি কমিশনে যাবে ফাইলটি। পানি কমিশমেন পিএসসির পর ওটি একনেকের সভায় উথ্বাপন করা হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মো. শবিবুর রহমান জানান, সেপ্টেম্বরের একনেকের সভায় নতুন প্রকল্পটি যাতে উথ্বাপন করা যায় সে লক্ষ্যেই কাজ করছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর দর্শিতায় অচিরেই বাকখালী নদী ফিরে পাবে তার অতীত ঐতিহ্য, হারানো জৌলুস। এছাড়া জেলাবাসী মুক্তিপাবে জলাবদ্ধতা ও বন্যা থেকে এমনটাই বলেছেন ওই কর্মকর্তা।

পাঠকের মতামত: