অনলাইন ডেস্ক ::
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির মাদক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বলেন, এই অভিযানে কেউ ছাড়া পাবেন না এমনকি তিনি সংসদ সদস্য হলেও।
মন্ত্রী বলেন, ‘এবারের অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। সে সংসদ সদস্য হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আর সাংবাদিক হোক, আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’
গত ৪ মে থেকে সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযানে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে র্যাব-পুলিশের গুলিতে। এরা সবাই মাদকের কারবারি বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে গত দুই দিনে ২১ জন এবং পাঁচ দিনে নিহত হয়েছে অন্তত ৩১ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি সন্দেহভাজন কারবারি বা তার সহযোগিতা তাদের ওপর আক্রমণ করলে তারা পাল্টা গুলি ছোড়ে এবং এভাবেই নিহত হয়েছেন সন্দেহভাজনরা।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এভাবে বন্দুকের ব্যবহারের সমালোচনা করে তা বন্ধের দাবি উঠেছে।
বিএনপি মাদকের বিস্তারের জন্য কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে। আগে ‘বদিদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও করেছেন বিএনপি নেতারা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে টেকনাফ আসন থেকে জয়ী বদির বিরুদ্ধে নানা সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ নিয়ে।
২০১৪ সালের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ ৭৯ মানব পাচারকারীর তালিকায় বদির নাম আছে ১ নম্বরে ছিল বলেও ২০১৫ সালের মাঝামাঝি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে। তার আগের গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ তালিকা করা হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে আরেকটি তদন্ত হয়। তাতে বদির আট আত্মীয়কে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বদি অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন। বলেছেন, রাজনৈতিক শত্রুরা তাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। আর গণমাধ্যম যাচাই বাছাই না করেই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে মাদকবিরোধী সাম্প্রতিক অভিযান নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলাপনে আসে বদির প্রসঙ্গও।
বদির বিরুদ্ধে আপনারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যার (বদি) নাম বলেছেন তিনি একবার জেলে গেছেন, তার বিষয়ে আমরা জানার চেষ্টা করছি, জানছি। আপনারাও তথ্য আমাদের দিন। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।’
২০১৪-১৫ সালে সব গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বদির নাম থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না প্রথম কথা হলো এটি। সে বদি হোক, সংসদ সদস্য হোক, আর যেই হোক। শুধু বললেই তো হবে না, সঠিক প্রমাণটি যার বিরুদ্ধে পাচ্ছি, তাকেই অ্যারেস্ট করছি। তথ্য যেগুলো আসছে এর সঙ্গে প্রমাণাদি না যোগাড় করে আমরা কাউকে নক করছি না।’
বদির বিরুদ্ধে কি কোনো প্রমাণ নেই- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনার কাছে যদি কিছু থাকে পাঠিয়ে দেবেন। সবার কাছে আহ্বান, কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রমাণ থাকে আপনারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। আমাদের কাছে যাদের প্রমাণ আছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তবেকি বদির বিরুদ্ধে কোনো তথ্য আপনাদের কাছে নেই- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আছে। সেগুলো আমাদের আরও প্রমাণের দরকার। প্রমাণ না পেলে আমরা কারো কাছে যাচ্ছি না।’
গোয়েন্দা সংস্থার আগের তালিকায় বদির নাম ছিল কিন্তু সম্প্রতি তালিকায় তার নাম নেই- এ বিষয়ে কামাল বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন, আমরা তো দেখছি। আপনারা তো শুনে শুনে অনুমানভিত্তিক কথা বলছেন। আমরা বলছি তথ্যভিত্তিক, প্রমাণ ভিত্তিক। এই জায়গাটিতেই কথার পৃষ্ঠে কথা এসে যাচ্ছে।’
অন্য এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। আপনারা এটাও দেখেছেন আমাদের একজন সংসদ সদস্য (টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান রানা) কত বছর ধরে জেলে আছেন, সে জামিনও পাননি সেটাও আপনারা দেখেছেন। আইন সবার জন্য সমান। আমরা আইনের বাইরে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই না। আপনারা সেটা নিশ্চিত থাকুন।’
‘এক্ষেত্রে আমাদের মোবাইল কোর্টও চলছে সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। সে এমপি হউক আর যাই হোক।’
অভিযানে প্রাণহানির বিষয়ে মন্ত্রীর দাবি, মাদকের কারবারিদের হাতে অস্ত্র থাকে। তার তারা বা তার সহযোগীরা গুলি করলে পুলিশ আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি করে। একে বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার বলা যায় না।
শুধুমাত্র মাদক বাহকদের হত্যা করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র বাহক নয় বরং প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা করছি।’
পাঠকের মতামত: