ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বদরখালী কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে নীতিমালা লঙ্ঘন, হাইকোর্টের স্থগিত আদেশ

বার্তা পরিবেশক :
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদ বদরখালী কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কলেজ গভর্নিং বডির আপত্তির মুখে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও সম্প্রতি মুজিবুর রহমান নামের এক প্রার্থীকে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার অফিসাদেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে অনিয়মের এ ঘটনায় কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ও বদরখালী সমিতির সাবেক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন বাদি হয়ে দায়ের করা একটি রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ মামলার শুনানী শেষে কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি পূর্বক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। বাদী পক্ষের কৌশলী হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোজাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কলেজ গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্য জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বদরখালী কলেজের জন্য অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে মোট ১৩ জন প্রার্থী আবেদনপত্র দাখিল করলেও ওই সময় ৯ জনকে বাদ দিয়ে নিয়োগ কমিটির সংশ্লিষ্টরা অপর চার প্রার্থীকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ দেন। যদিও পরীক্ষায় অংশ নেয়া চার প্রার্থীর মধ্যে মহেশখালী আলমগীর ফরিদ টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষক মুজিবুর রহমানসহ তিনজন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে যথেষ্ট যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে।
জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তী ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট কলেজ গভর্নিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও অধ্যক্ষ পদে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন কমিটির বেশিরভাগ সদস্য। এরই আলোকে কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেয়ার আশ^াস দেন।
সভার সিদ্ধান্তের আলোকে অধ্যক্ষ পদে পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়ন পূর্বক প্রতিবেদন দিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য বদরখালী সমিতির প্রয়াত সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী, জয়নাল আবেদিন খাঁন, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, মাস্টার শাহাব উদ্দিন ও কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আফছারুজ্জামান।
জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের গঠিত মূল্যায়ন কমিটি কলেজ সভাপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটির ওই প্রতিবেদন উপেক্ষা করে সাবেক সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ একক ক্ষমতাবলে কলেজের অধ্যক্ষ পদে মুজিবুর রহমানকে পরীক্ষা পরবর্তী উত্তীর্ণ দেখিয়ে নিয়োগ দিতে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে সুপারিশপত্র প্রেরণ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে কলেজ গভর্নিং কমিটির বেশিরভাগ সদস্য উল্লেখিত সুপারিশপত্রের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর উকিল নোটিস দেন। এরই মধ্যে সভাপতির পাঠানো সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ড. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে মুজিবুর রহমানকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন।
তিনি বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের জারিকৃত নিয়োগ চূড়ান্তকরণের বিরুদ্ধে কলেজ গভর্নিং কমিটির সদস্যরা ২০১৯ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত সভায় ফের অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এরই আলোকে ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট কলেজ কমিটির সভায় অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর একই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ফের আরও একটি উকিল নোটিস দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ নিয়োগে দীর্ঘসময় জটিলতার কারণে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়ায় সর্বশেষ চলতি ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত গভর্নিং বডির সভায় বিষয়টির আলোকে আলোচ্যসুচী উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে উল্লেখিত বিষয়ে বিশদ আলোচনা শেষে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ১৯ সালের জনবল কাঠামো নীতিমালা অনুযায়ী ফের অধ্যক্ষ নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে অনুমোদন দেয়া হয়।
কলেজ কমিটির সদস্য খান জয়নাল আবেদিন দাবি করেছেন, নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে অনুমোদন দেয়া হলেও উল্টো কোন ধরণের পরীক্ষা ছাড়াই ১৯ জানুয়ারী কলেজ কমিটির সভাপতি একতরফাভাবে মুজিবুর রহমানকে ফের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করে অফিসাদেশ দেন।
এরই প্রেক্ষিতে উল্লেখিত অফিসাদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ হয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য জয়নাল আবেদিন খাঁন বাদি হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (১৩৭৩/২০) দায়ের করেন। বাদিপক্ষে আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করেন  সিনিয়র আইনজীবী মোজাহিদুল ইসলাম। মামলার শুনানী শেষে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশের বিরুদ্ধে রুলনিশি জারি পূর্বক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষনা করেন।
মামলার বাদি জয়নাল আবেদিন বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম হাইর্কোট স্থগিত ঘোষনা করলেও দায়িত্বভার হস্তান্তর ছাড়াই সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে কলেজে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান অতর্কিত অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ ও পাশের একটি নামাজের স্থানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সেখান থেকে বেশ কিছু আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় কলেজের শিক্ষক, গর্ভনিং কমিটি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজ কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, হাইর্কোটের আদেশ মোতাবেক কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত সব ধরণের কার্যক্রম স্থগিত রাখা না হলে পরবর্তীতে এব্যাপারে আদালতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পাঠকের মতামত: