ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বছরজুড়ে জেলার আলোচিত: করোনায় সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদসহ ৮৩ জনের মৃত্যু

# সিনহা হত্যা নাড়া দিয়েছে খোদ রাষ্ট্রকেই
# পুলিশে গণবদলি ও শিল্পী জনি হত্যা সবার মুখে
# ২৮ বছর পরে বদির আরেক স্ত্রী-পুত্রের সন্ধান
# খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রথম জাহাজে আশার আলো
ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::
নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা, সুসংবাদ ও দুঃসংবাদে কেটেছে ২০২০ সাল। সারাবিশে^র মতো কক্সবাজারকেও স্তব্ধ করে দিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। চিরতরে হারিয়ে গেছে ৮৩ জন। যেখানে সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও চিকিৎসক রয়েছেন।
বছরের শুরুতে তেমন দুর্ঘটনা শুনতে হয় নি। কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছে এমন একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে, যা দেশের বিবেকবান প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়কে তাড়া করেছে। পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যা নাড়া দিয়েছে খোদ রাষ্ট্রকেই।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ হত্যা যেনো দুধভাতে পরিণত হয়েছে। মাদক নির্মূল ইস্যুতে ‘বন্দুকদ্ধের’ আড়ালে ’নিরীহ মানুষ হত্যা’র খবর ছিল পুরো বছরের অধিক সময়ের আলোচনা। ভক্ষকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে খোদ রক্ষকদেরকেই! এমন ঘটনা দেখতে-শোনতে প্রস্তুত ছিল না কেউই। আর একটিও হত্যা নয়, রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যেক নাগরিক পেতে চায় এমনই অভয়। ২০২০ সালে ঘটেছে সাংবাদিক ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। যা পুরো দেশে খবর হয়েছে।
বেশ কয়েকটি আলোচিত দুঃসংবাদের মাঝেও খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণকেন্দ্র একটি বড় সুসংবাদ। মাতারবাড়ি জেটিতে প্রথম মাদার ভ্যাসেল আগমনে জাগিয়েছে আশার আলো। ২০২০ সালের শেষের দিকে দুই দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর অনেকটা স্বস্তি এনেছে।
অতীতের সমস্ত ঘটনা কথা মাথায় রেখে নতুন বছর ২০২১ সালে সকলের প্রত্যাশা, যেন ভালো কাটে আগামীর বছর। প্রতিটি নাগরিকই রাষ্ট্রের কাছে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের যথাযথ ব্যবস্থা চায়।
২০২০ সালে আলোচিত কয়েকটি ঘটনা হলো-
মেজর সিনহা হত্যা:
৩১ জুলাই, দিবাগত রাত প্রায় ১০টা। টেকনাফ-কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাও পুলিশের গুলিতে। ঘটনাটি মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়।
খুনের ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতের আদেশে ঘটনার তদন্তে নামে র‌্যাব। এ ঘটনায় টেকনাফ বাহারছরা মারিশবুনিয়ার তিনজন ছাড়াও এপিবিএন এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জন গ্রেফতার হয়। তারা এখন কারাগারে। তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার, পরে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করা হয়।
আলোচিত ঘটনার পর জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজাতে একযোগে সবাইকে বদলি করা হয়। সিনহা হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শুরু থেকে তৎপর ছিল পুলিশ। সিনহার সহযোগি শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক মামলা করে। এ মামলায় তারা কারবন্দি ছিলেন। পরে জামিনে মুক্ত হন। তদন্তে ‘নিদোর্ষ’ প্রমাণিত হওয়ায় সিফাত ও শিপ্রাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। সর্বশেষ সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেছে কক্সবাজার আদালত।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, সিনহা হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। সাবেক টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এসআই লিয়াকত। ঘটনার নেপথ্যে ছিল ইয়াবা।
হত্যার ঘটনা তদন্ত নেমে র‌্যাব এখন পর্যন্ত ১৫ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। যার মধ্যে ১৪ জন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
তারা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (চট্টগ্রাম কারাগার), দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব, মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

কথিত বন্দুকযুদ্ধে বখতিয়ার মেম্বারকে হত্যা:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহতের মাত্র সাত দিন আগে (২৩ জুলাই) কথিত বন্দুযুদ্ধের ঘটনা ঘটায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার। তাদের যৌথ নেতৃত্বে ওই দিন ভোর রাতে উখিয়ার রাজাপালংয়ের ইউপি মেম্বার বখতিয়ারকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
পর দিন (২৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফের হ্নিলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জন মারা গেছে। সেখানে বখতিয়ার মেম্বারও রয়েছে।
এর আগের রাতেই একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ থানায়। আসামি করা হয় ১৫ জনকে। তারপর অস্ত্র মামলাসহ আরও একটি মামলা হয়। যাতে আসামি করা হয় বখতিয়ার মেম্বারের তিন ছেলেকে। মামলার সিজার লিস্টে উদ্ধার দেখানো হয় ১০ লাখ টাকা। মজার ব্যাপার হলো-অভিযানের নামে বখতিয়ার মেম্বারের বাসা থেকে ‘ভাংতি পয়সাও লুট’ করে নিয়ে যায় তৎকালীন ওসি মর্জিনাসহ পুলিশ সদস্যরা।

মা-মেয়েকে এক রশিতে বেঁধে নির্যাতন:
গরু চুরির অপবাদে চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে বয়স্ক মা ও তার তরুণি মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যান কার্যালয়ে। সেখানেও পেটানো হয় নির্দয়ভাবে।
মা মেয়েসহ পাঁচজনকে নির্যাতন শেষে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল। গরুর মালিক দাবিদার উত্তর হারবাং বিন্দারবানখীল এলাকার মাহবুবুল হকের দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। পরে জামিনে তারা মুক্ত হন।
২১ আগস্ট দুপুরে সংঘটিত ঘটনাটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর ভাইরাল হয়। নিন্দার ঝড় ওঠে সবখানে।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা নেয় আদালত। আলোচিত ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার হয়। তবে, মূল অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ক্ষতিপূরণের টাকায় দুর্নীতি, দুদকের অভিযান:
কক্সবাজারে ৭০টির বেশি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এগুলোর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২০ হাজার একরের বেশি জমি। জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ তুলে দেয়ার নামে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা কেন্দ্রিক কমিশন বাণিজ্যে গড়ে উঠে দালালচক্র।
এদের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিষয়টি নজরে আসার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে নামে। শুরুতেই দুদক ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামের তিন দালালকে আটক করে দুদক। দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূল নথি উদ্ধার করা হয়। ধারাবাহিক অভিযানে বিভিন্ন জনের ব্যাংক হিসাব, সম্পদ ও নগট টাকা জব্ধ করা হয়। যেখানে কক্সবাজার পৌর মেয়র, কাউন্সিলরও রয়েছেন।

পুলিশে গণবদলি:
অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে, একটি জেলার সব পুলিশ সদস্যকে গণবদলি করা হয়েছে। বাহিনীতে জেলার সর্বোচ্চ পদ পুলিশ সুপার, তিনিও নেই। সর্বনিম্ন পদ কনস্টেবল-তাঁদের সবাইকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলতঃ সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যাকাণ্ডের বদনাম ঘুচাতেই সরকারের সর্বোচ্চ মহল এমন সিদ্ধান্ত নেন। তবে, পুলিশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা।
তবে, প্রশ্ন থেকে গেছে, তাঁদের সরানোর আগে নির্মোহ পর্যালোচনা কতটা হয়েছে? পুলিশ বাহিনী কি সত্যিকার অর্থে মনে করে, সবাইকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন ছিল? তাতেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে?
আবার যদি কোনো অভিযোগের কারণে তাঁদের সরানো হয়, তাহলে বদলিটাই সমাধান নয়। সে ক্ষেত্রে তদন্ত ও শাস্তি কাম্য।

শিল্পী জনি হত্যা:
৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কক্সবাজার-ঈদগড় সড়কের বৈইজ্যাঘোনার হিমছড়ির ঢালু নামক এলাকায় ধারালো কিরিচের কোপ আর গুলিতে প্রাণ হারান তরুণ শিল্পী জনি দে রাজ (১৮)। ওই দিন জনি চট্টগ্রামের পটিয়ায় একটি অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ ঘটনায় আহত হন আরো দুজন।
নিহত জনি রামু ঈদগড় ইউনিয়নের চরপাড়া (নতুনপাড়া) এলাকার তপন দের ছেলে এবং ঈদগাঁও ফরিদ আহমদ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই গান গেয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে জনি। মৃত্যুর ঘটনাটি কেউ মেনে নিতে পারে নি। ঘটনার পরপরই সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। পালিত হয় হরতাল। অজপাড়া ঈদগড় থেকে শহরের প্রধান সড়কে কর্মসুচি পালন করে সহপাঠী, সহকর্মীসহ বিক্ষুব্ধ জনতা। হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে কলিম উল্লাহ ১জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তধীন। তবে হত্যাকাণ্ডটি কেন ঘটলো, কারা জড়িত, তার সঠিক কুলকিনারা হয় নি। জনির পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনায় ৮৩ জনের মৃত্যু:
বিশ^মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় মোট ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ করে সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল মোনায়েম খান, বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান, পর্যটন ব্যবসায়ী এম সায়েম ডালিমের মৃত্যুর খবর খুবই শোকাবহ হয়েছে। তাদের মৃতুর সংবাদে কাঁদেনি এমন মানুষ খুবই কমই ছিল। করোনায় কক্সবাজার জেলায় প্রথম মৃত্যুবরণকারীর নাম ছেনোয়ারা বেগম (৬৫)। তিনি রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহর স্ত্রী।

সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার উপর পুলিশী নির্যাতন:
দৈনিক কক্সবাজারবাণী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনতারবানী বিডি ডটকম-এর সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদুল মোস্তফা খানকে সাজানো মামলায় ঢাকার বাসা থেকে গ্রেফতার, টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের হেফাজতে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে চোখেমুখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন ছিল অলোচিত ঘটনা।
একেএকে ৬টি মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন কারাবাসের পর গত ২৭ আগস্ট জামিনে কারামুক্ত হন ফরিদ। তার মুক্তির পর থেকে স্থানীয় ও জাতীয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয় সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা।
কারামুক্ত হয়েই টেকনাফের সাবেক ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন তিনি। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইন) এর নিকট তদন্তাধীন। ফরিদের মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৬ জনই পুলিশের সদস্য, যারা বিভিন্ন থানায় কর্মরত আছেন। তবে, মামলায় সঠিক প্রতিকার পাবেন কিনা সন্দিহান পুলিশের হাতে তছনছ সাংবাদিক ফরিদ পরিবারের সদস্যরা।

২৮ বছর পরে বদিকে পিতা দাবি করে মামলা:
দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পরে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে পিতা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন মোহাম্মদ ইসহাক নামের এক যুবক। একই সঙ্গে বদিকে পিতা প্রমাণে ডিএনএ টেস্টের দাবিও করেছেন তিনি। অভিযোগ আমলে নিয়ে বদির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত। গত ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফ সহকারী জজ জিয়াউল হকের আদালতে আবেদনটি করেন ইসহাক। যার মামলা নং-১৪৯।
১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল ইসহাকের মা সুফিয়া খাতুনকে কালেমা পড়ে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। ওই সময়ে বিয়ে পড়ানোর আয়োজন হয় বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে। তখন বিয়ে পড়ান কর্মরত মৌলভী আবদুস সালাম। বিয়ের সাক্ষী ছিলেন ওই হোটেলের দারোয়ান এখলাছ। কয়েক মাস পরে গর্ভে আসে ইসহাক। তার গর্ভাবস্থায় জোর করে নুরুল ইসলাম নামের একজন রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে দেন বদি ও তার বাবা এজহার মিয়া।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরতলীর খুরুশকুলে নির্মিত জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প ২৩ জুলাই উদ্বোধন করেন।
বাঁকখালী নদীর তীরঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে নির্মিত ২০টি পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবনে ৬০০টি পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেল। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে রয়েছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। ১০০১ টাকার বিনিময়ে পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত ৪ হাজার ৪০৯টি বলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার এখানে ফ্ল্যাট পাবে।
তবে, প্রকল্প এলাকায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষাবাঁধ, ছোট সেতু, ১৪টি খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি ও দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশনের কথা থাকলেও নিশ্চিত হয় নি। বিশেষ করে খাবার ও ব্যবহারের পানি নিয়ে কষ্টে আছে আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দারা।

৯৬ জলদস্যুর জামিন:
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর মহেশখালীতে অস্ত্র, গুলাবারুদসহ ১২ বাহিনীর আত্মসমর্পণকৃত ৯৬ জন জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগরের জামিন হয়। ৮ ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপির হাতে আত্মসমর্পণ করে তারা। আত্মসমর্পণকালে তাদেরকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, পরে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ত্রাণ তহবিল থেকে এক লাখ টাকা করে ৯৬ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর:
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রিত প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কখন হচ্ছে, তা ছিল সবার চাওয়া ও আকাঙ্খার বিষয়। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা ও রহস্যের বৃত্তে জড়িয়ে রয়েছে এই প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে ৩ ডিসেম্বর ৬৪২ জন এবং ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১৮০০ জন রোহিঙ্গা নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়েছে। সরকার তাদের জন্য নিশ্চিত করেছে থাকা, খাওয়াসহ সব মৌলিক অধিকার।
তবে, প্রথম দিন রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি ছিল অতি সঙ্গোপনে। প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দেয়নি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অফিস।

গভীর সমুদ্রবন্দরে ভিড়ল প্রথম জাহাজ:
দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর মহেশখালীতে পরীক্ষামূলকভাবে ২৯ ডিসেম্বর প্রথম জাহাজ ‘ভেনাস ট্রাইয়াম্প’ ভিড়েছে। এদিন সকাল ৯টায় বন্দরের চ্যানেলে প্রবেশ করে জাহাজটি এবং সাড়ে ১০টায় বন্দরের জেটিতে নোঙর করে।
পানামার পতাকাবাহী জাহাজটি গত ২২ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার ‘পেলাভুবন সিলেগন’ বন্দর থেকে স্ট্রিম জেনারেটরের যন্ত্রাংশ নিয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়।
জাহাজটি চালিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্মিত জেটিতে নেওয়ার কাজটি করেন বন্দরের পাইলটরা। সি-শোর মেরিন প্রাইভেট লিমিটেডের জাহাজটির দেশি এজেন্ট হচ্ছে অ্যানসিয়েন্ট স্টিমশিপ লিমিটেড এবং স্টিবেটর হিসেবে কাজ করছে গ্রিন এন্টারপ্রাইজ।
জাহাজটি আসার আগে প্রস্তুত করা হয় আড়াইশ মিটার প্রস্থ ও ১৮ মিটার গভীরতার ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। বঙ্গোপসাগর থেকে এই চ্যানেল দিয়েই জাহাজ বন্দরের জেটিতে প্রবেশ করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের মেরিন বিভাগ গভীর সাগর থেকে জেটিতে প্রবেশের পথে ছয়টি পথনির্দেশক বয়া স্থাপন করেছে।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হওয়ার সময় ধরা হয়েছে ২০২৫ সাল।

পাঠকের মতামত: