ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রতি বছর সাড়ে ৪ হাজার নারী ও শিশু পাচার অনেকেরই ঠিকানা হয় মুম্বাইয়ের পতিতাপল্লী

স্টাফ রিপোর্টার :

জালিয়াতির মাধ্যমে ৩১ নারীকে লেবানন পাচারের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা এক মামলার ৫১ আসামীকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজীনা ইসমাইল গত বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন। ত্রুটিযুক্ত তদন্ত, মামলার আলামত উপস্থাপনে ব্যর্থতা এবং ট্রাইব্যুনালে ভিকটিমরা সাক্ষ্য না দেয়ায় ২০০৬ সালে দায়ের এই মামলার আসামীরা খালাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
কিন্তু মানবপাচার বিরোধী ও মানবাধিকার কর্মীরা এ রায়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, পাচারকারীরা এভাবে পার পেয়ে গেলে সরকারের কোন উদ্যোগই এ ভয়াবহ প্রবণতা বন্ধ করতে পারবে না। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রও একই সুরে জানায়, অসাধু পুলিশ, কোস্টগার্ডে এবং সংশ্লিষ্ট কার্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে দালালদের সহযোগিতা করা সহ ৬টি কারণে মানব পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
সূত্রটি জানায় মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের আটক বা উদ্ধারের পর তাদের ভিকটিম হিসেবে ছেড়ে দেয়ার কারণে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার বাড়ছে। আগে ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন’- এ পাচার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হতো। বর্তমানে এ আইনে পাচার হওয়ার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, যেসব ঘাট বা পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করা হয় ওই সব ঘাট বা পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের ব্যবস্থা নেই। তৃতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট ঘাট বা পয়েন্টে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য লোকজন জড়ো হয়েছে এমন গোপন সংবাদ গোয়েন্দা সংস্থা পুলিশ/বিজিবি/কোস্টগার্ডের স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রায় সময়ই জানায়। বেশির ভাগ সময় এসব সংস্থার অসাধু সদস্যরা পাচারকারীদের কাছ থেকে যাত্রী প্রতি ৩০০-১০০০ টাকা উৎকোচ নিয়ে আটক না করে যাত্রীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে থাকে।
এ ছাড়া পুলিশ/বিজিবি’র কিছু অসাধু সদস্য অভিযানে যাওয়ার আগে পাচারকারীদের (যারা মাসিক ভিত্তিতে মাসোহারা দেয়) অভিযান সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। এর ফলে তারা নিরাপদে পালিয়ে যায়। তৃতীয় ও চতুর্থ  কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পাচারকারীরা মাসিক ভিত্তিতে থানায় এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বিজিবি’র বিওপিগুলোতে মাসোহারা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে মামলাভুক্ত/মামলাবহির্ভূত পাচারকারীদের থানায় আটক করে এনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
সেই মামলার ৫১ আসামীই খালাস : জালিয়াতির মাধ্যমে ৩১ নারীকে লেবানন পাচারের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা এক মামলার ৫১ আসামীকেই বেকসুর  খালাস দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তানজীনা ইসমাইল গত বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, মো. মোশারফ হোসেন, হাফিজুর রহমান, মো. শাহজালাল, রিয়াজ উদ্দিন, মেরাজ আলী, হুমায়ুন কবির ওরফে হুমায়ুন, ফতে ওরফে ফতেমা, শহিদুল ইসলাম, জমিলা, আয়েশা, রোকেয়া, রিয়াজ উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন বাবুল, হুমায়ুন কবির, এমএ মাসুদ, মিজানুর রহমান, বেলায়েত হোসেন বাবুল, তাজুল ইসলাম তাজু, অনুফা ওরফে হনুফা, মনোয়ারা সেলি, হাশেম, নাসির উদ্দিন, মো. ফিরোজ, আলমগীর হোসেন, মনির হোসেন, বাহা উদ্দিন, রহমত উল্লাহ, মোজাফর হোসেন, মোরশেদ, তোতা চোকদার, আলাউদ্দিন, ফেরদৌস আহমেদ বাদল, আব্দুস সত্তার, তুহিন, তালেব, লুৎফর, সাথী, নুরুল ইসলাম, করিম, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল জলিল, ফরহাদ, দুদু মিয়া, তাজু, রেজা, আমিন হোসেন, জাহাঙ্গীর, জিয়া, জনু, শিরজান।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আলী আসগর স্বপন সাংবাদিকদের জানান, যে ৩১ জন নারীকে পাচারের চেষ্টা করা হয় তাদের মধ্যে মাত্র একজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া ভুয়া ছাড়পত্র জব্দ করা হয়নি। বার বার ডেকেও পাচার চেষ্টার শিকার বাকি নারীদের সাক্ষ্য দিতে আদালতে আনা যায়নি।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩১ নারীকে ২০০৬ সালের ১৭ নবেম্বর তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির করে দালাল তুহিন, রমজান এবং আজিজুল হক। সব নারীর ভিসা জাল হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ওইদিন তাদের যাত্রা বাতিল করে।
পরদিন ১৮ নবেম্বর ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিদর্শক কাজী ফজলে মাওলা দন্ডবিধি, পাসপোর্ট আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. জালাল উদ্দিন ৫১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
নারী পাচার হয় মুম্বাইয়ের পতিতালয়গুলোতে : সম্প্রতি ডয়েচে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুম্বাইয়ের পতিতালয় গুলোতে নারী পাচার বাড়ছে বলে ভারতের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে। তাদের তথ্য অনুয়ায়ী, নগরীর কামাথিপুরার প্রধান পতিতালয়ে বাংলাভাষী পতিতার সংখ্যা এখন রেকর্ড পরিমাণ। পতিতা পাচার নিয়ে কাজ করা মুম্বাইভিত্তিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির নাম ‘প্রিরানা’। সংস্থাটির কো-ফাউন্ডার প্রীতি পাটকার জানান, বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পতিতালয়ে বাংলাদেশী পতিতা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে। নারী পাচারকারীরা বেশ বেপরোয়া এবং তারা ভালো চাকরি এবং জীবনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে নারীদের পাচার করে আনে।
জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পতিতাদের ২১৩ জন সন্তানকে প্রিরানা’র নাইট কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ১২৮ জন বাংলাভাষী মায়ের সন্তান। শহরের অন্যান্য এলাকার পতিতালয় গুলোতেও নাকি ঐ একইরকম চিত্র। তবে এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পতিতাও আছেন। ভারতের সরকারি হিসেবে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আছে সেখানে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিদিন শত শত বাংলাদেশী ৪ হাজার কিলোমিটার  সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে। এরা গরিব এবং এদের বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালরা সংগ্রহ করে।
প্রীতি পাটকার জানান, বাংলাদেশ-ভারত গত বছর মানবপাচার বন্ধে একটি সহযোগিতা চুক্তি সই করে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো মানবপাচারের তথ্য বিনিময়, তদন্ত এবং পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা। এই চুক্তির ফলে মানবপচারের শিকার যারা, তাদের উদ্ধার এবং পুনর্বাসনের কাজ সহজ হয়েছে। আগে তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই বিবেচনা করার হতো।
এ নিয়ে মানবাধিকারকর্মী এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এডভোকেট এলিনা খান বলেন, পাচারকারী নানা কৌশলে নারী পাচারের কাজ করে। তারা চাকরি এবং ভালো জীবনের প্রলোভন ছাড়াও বিয়ে, প্রেম, বিয়ের প্রলোভন বা পরিবারের সবাইকে একযোগে চাকরির প্রলোভন দেয়। যারা এই ফাঁদে পড়েন তারা নিজেরাও জানেন না যে, আসলে তারা কোথায় যাচ্ছেন। পাচারকারীরা এমন কৌশলে কাজ করেন যে তাদের ধরাও সহজ হয় না। তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্যাম্পেইন হয়েছে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার এখন কমে এসেছে। আজ সকলেই জানে যে, ওখানে চাকরির নামে পাচার করা হয়। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে পাচারের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনো নেই।  সরকার সেটা করলে পাচার কমে আসবে বলেই আমার আশা।
বাংলাদেশ মানব পাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান অর্জন করেনি : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মানব পাচার সংক্রান্ত প্রতিদেন ২০১৬-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে জোরপূর্বক শ্রম ও যৌনতার জন্য মানব পাচার হয়ে থাকে। তবে তা প্রতিরোধ ও দমনে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও  মানব পাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান অর্জন না করায় এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালা চূড়ান্তকরণ ও গ্রহণ এবং তা ব্যবহারে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের জোরপূর্বক শ্রম এবং পতিতাবৃত্তির জন্য বাংলাদেশ একটি উৎস দেশ। বাংলাদেশ আবার এ ধরনের মানব পাচারের ট্রানজিট ও গন্তব্যও বটে। কিছু বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছায় মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে জোরপূর্বক শ্রমের অবস্থার মধ্যে পতিত হন। কর্মীদের কাছ থেকে বায়রার (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ) আওতাধীন বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের দালালরা অনেক বেশি অভিবাসন ব্যয় আদায় করে। অভিবাসী কর্মীদের তারা ঋণের বাঁধনে রেখে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালাল কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করে।
বাংলাদেশে ৩২ হাজার নিবন্ধিত এবং পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছেন উল্লেখ করে এতে বলা হয়, তাদের কোনো রাষ্ট্র নেই। ফলে মানব পাচারের ঝুঁকির মধ্যেই তারা আছেন। রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী অভিবাসী যারা নৌকাযোগে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোতে পাড়ি জমান তারা নানারকম নির্যাতন, নিপীড়ন, অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মতো পরিস্থিতির শিকার হন। যারা মুক্তিপণ দিতে পারেন না তাদের জোরপূর্বক শ্রমের জন্য প্রাথমিকভাবে মাছ ধরার নৌকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। যেসব নারী গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে যান তারা নির্যাতনের শিকার হন। জর্ডান ও লেবাননে গৃহকর্মের জন্য যাওয়ার পর অনেক নারীকেই শ্রম ও যৌনতার জন্য জোরপূর্বক সিরিয়ায় পাচার করা হয়। দেশের ভেতরেও শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা যৌনতার জন্য পাচারের শিকার হন। বাবা-মায়ের কাছ থেকে পণ হিসেবে শিশুদের নিয়েও যৌনতার কাজে লাগানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার মানব পাচার দূর করতে পর্যাপ্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। তবে মানব পাচারের তদন্ত উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৪ সালে মানব পাচারের যেখানে ১২টি মামলা তদন্ত করেছে সরকার, ২০১৫ সালে সেখানে ২৬৫টি ঘটনা তদন্ত করে। তবে সরকার ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের বিধি প্রণয়ন তৃতীয় বছরেও চূড়ান্ত করেনি।
মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের বিধি অবিলম্বে চূড়ান্ত করে তা অনুমোদন করতে হবে। এটা বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সির নেয়া অতিরিক্ত চার্জ বাতিল করতে হবে। মানব পাচারের বিশেষ করে শ্রমিক পাচারের বিচার ও শাস্তি বাড়াতে হবে। আইনশৃংখলা বাহিনী, শ্রম পরিদর্শক ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে শ্রমের জন্য পাচার করা হলে তাকে ১২ বছরের জেল এবং কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। যৌন কাজে পাচার করা হলে পাঁচ বছরের জেল থেকে শুরু করে মৃত্যুদন্ডের বিধান পর্যন্ত রাখা হয়েছে। ওই আইনে ২০১৫ সালে ৪৮১ জন পাচারকারীর বিচার করা হয়েছে। ২০১৪ সালে বিচার হয়েছিল ৪৪৯ জন মানব পাচারকারীর। পাশাপাশি, পাচার হওয়া ভিকটিমদের সুরক্ষার ব্যাপারে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড বিধানেও বন্ধ হচ্ছে না মানব পাচার : বাংলাদেশ থেকে কোনোভাবেই মানব পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং পাচারকারীরা নানা কৌশলে প্রতিদিনই দেশ থেকে মানব পাচার করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নারী ও শিশু পাচারের একটি উৎস ও ট্রানজিট রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আইনে মানব পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্য্যুদন্ডের বিধান রাখা হলেও পাচারকারীরা তার তোয়াক্কা করছে না। মহিলা আইনজীবী সমিতি ও একাধিক মানবাধিকার সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিদিনই এদেশ থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে অথবা বিমানযোগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে শুধু ভারত ও পাকিস্তানেই ৭ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। বর্তমানে নারী পাচারে বাংলাদেশ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। আন্তর্জাতিক এক হিসাবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে।
সূত্র জানায়, পাচার ও ধর্ষণের শিকার হওয়া বাংলাদেশের একাধিক নারী কয়েক হাত ঘুরে এখন ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এসব যাত্রীরা ভারতের একটি রেলস্টেশনে নিজেদের রক্ষার আকুতি জানিয়ে চিৎকার শুরু করলে প্লাটফরমের অপেক্ষমাণ যাত্রীরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশে তুলে দেয়। এর জের ধরে ভারতীয় পুলিশ পাচারকারী ৪ ভারতীয় নারী ও পুরুষকে আটক করেছে। ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে এসব নারীকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। পাচারকৃত এসব নারীরা ঢাকায় বিউটি পার্লার ও কাপড়ের দোকানে কাজ করতো।
সূত্র আরো জানায়, ইতিপূর্বে কয়েকজন বাংলাদেশী নারী ভারতে এক বছর কারাভোগ করে গত মে মাসে দেশে ফিরে এসেছে। গত জুন মাসে ভারতে পাচার হওয়া আরো ১০৮ নারী ও শিশুকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়েই এসব নারী ও শিশুকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি ও মানবাধিকার সংগঠন রাইটস তাদের দেশে ফিরিয়ে আনে। বাংলাদেশ থেকে শুধু ভারত-পাকিস্তানই নয়, লেবানন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসাবেও মেয়েদের পাঠানোর কথা বলে পাচার করা হচ্ছে।
কোস্টগার্ডের জন্য কেনা হচ্ছে ১৪টি নৌযান : উপকূলীয় অঞ্চলের চোরচালান, ডাকাতি, মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধ আরো গতিশীল করতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের ১৪টি নৌযান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ৪৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন প্রকার নৌযান নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান।

পাঠকের মতামত: