ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় সিরাদিয়ায় সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ-৩, স্কুল ছাত্রীসহ আহত-১০

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  পেকুয়ায় সদর ইউনিয়নের সিরাদিয়া গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দুইদিনে একই স্থানে পৃথক সংঘর্ষের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ সময় পৃথক ২ দিনে অন্তত ১৩ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করা হয়েছে।

এ সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৩ জন জখম হয়েছে। জখমীদের মধ্যে ১ জন স্কুল ছাত্রী, ১ জন স্কুল ছাত্রসহ ১০ জন জখম হয়েছে। ৩ জন গুলিবিদ্ধের মধ্যে ১ জন ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সভাপতিও রয়েছে। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আ’লীগ নেতা সাহাব উদ্দিন (৫০) ও তার মেয়ে জালিয়াখালী হেদায়তুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস (১২), মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে আলমগীর (৪০) কে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

ঘটনার জের ধরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিরাদিয়া গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিকট বন্দুকের আওয়াজে সদর ইউনিয়নের সিরাদিয়া, জালিয়াখালীসহ মাতামুহুরী নদীর অপর প্রান্ত চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের বাংলাবাজার, শহর আলী ষ্টেশনসহ উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্ত সুতাচোরাসহ আরও একাধিক গ্রামে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে মানুষ দিক বিদিক ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে।

১৫ জুন (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৪ টা ও ১৪ জুন বিকাল ৫ টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিরাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধরা হলেন ওই এলাকার মৃত মোহাম্মদ শরীফের ছেলে আ’লীগ সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সভাপতি সাহাব উদ্দিন (৫০), মৃত আইস্যা মিয়ার ছেলে জাবের আহমদ (৪৮), নজরুল ইসলামের ছেলে আমানুল্লাহ (১৬)। সংঘর্ষে আহতরা হলেন মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে আলমগীর (৪০), সাহাব উদ্দিনের মেয়ে জন্নাতুল ফেরদৌস (১২), মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে শফিউল আলম (৩৮), ছরওয়ার উদ্দিনের ছেলে মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র সাইফুল ইসলাম (১৪), তার পিতা ছরওয়ার উদ্দিন (৪৫), মৃত দলিলুর রহমানের পুত্র ছৈয়দ নুর (৫০), জাফর আলমের ছেলে আলী আহমদ (৪৫), মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো: সোহেল (২২), মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে শামশুল আলম (৬০), আসহাব মিয়ার ছেলে আমির হোসেন (৪০)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে শামশুল আলমের ছেলে শেকাব উদ্দিন ও বাদশাহর ছেলে রবিউল আলমের মধ্যে বনিবনা চলছিল। সুত্র জানায়, ৬ মাস আগে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এ ২ জনের মধ্যে দ্বন্ধ দেখা দেয়। সৃষ্ট দ্বন্ধ চলমান রয়েছে।

১৪ জুন বিকেল ৫ টার দিকে শেকাব উদ্দিন সিরাদিয়ায় বেড়িবাঁধে একটি দোকানে বসে গল্প গুজব করছিলেন। এ সময় রবিউল আলমের নেতৃত্বে ৭/৮ জনের অস্ত্রধারী তাকে অপহরণ চেষ্টা চালায়। এ সময় ব্যাপক টানা হ্যাঁচড়া ও ধস্তাধস্তি হয়েছে। তার আর্তচিৎকারে প্রত্যক্ষদর্শীরা এসে বহিরাগত লোকজনকে ধাওয়া দেয়। পথিমধ্যে অস্ত্রধারীরা শেকাব উদ্দিনের পিতা শামশুল আলমকে বেড়িবাঁধে ব্যাপক মারধর করে। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা শামশুল আলমকে উদ্ধার করতে ওই স্থানে যান। এ সময় স্থানীয়দের ছত্রভঙ্গ ও ভীতি ছড়াতে রবিউল আলম গং ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ইটপাটকেল ছোড়াছুড়িতে ওই দিন ৬ জন আহত হয়েছে।

১৫ জুন উভয়পক্ষের মধ্যে আবারো সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ওয়ার্ড আ’লীগ সাবেক সভাপতি শাহাব উদ্দিন পেকুয়া সদর থেকে ওই দিন বিকেলে সিরাদিয়ায় বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় সৃষ্ট ঘটনার জের ধরে রবিউল আলম গং বেড়িবাঁধে তাকে আক্রমণ চালায়। অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে তাকে অপহরণ চেষ্টা চালানো হয়। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা ফের বেড়িবাঁধে গিয়ে আ’লীগ নেতা সাহাব উদ্দিনকে উদ্ধার করছিলেন। এ সময় কালু মিয়ার ছেলে বেলাল, তার ভাই হেলাল, দুলাল, মৃত নুরুল হকের ছেলে মো: কবির, মৃত বজল আহমদের ছেলে আবদু রহিম, তার ভাই সোহেলসহ ১০/১৫ জনের অস্ত্রধারী লোকজন বেড়িবাঁধ থেকে গুলি ছোড়ে। এ সময় ৩ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৩ জন জখম হয়েছে। ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি আবদুল কাদের জানান, বিএনপির অস্ত্রধারীরা আমার কমিটির সাহাব উদ্দিনসহ ১৩ জনকে গুলিবিদ্ধ ও কুপিয়ে, পিটিয়ে আহত করেছে।

ছাত্রলীগ উপজেলার সাবেক নেতা বেলাল উদ্দিন মিয়াজী বলেন, ২ দিনের ব্যবধানে তারা ১৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী মনজুর আলম, জাবের আহমদ, বাদশাহ, আবদুল করিম, গৃহবধূ শাকেরা বেগম, আমিনা বেগম, জেয়াসমিন আক্তার, মাহাফুজা বেগম জানান, তারা অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে এসে হামলা করেছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ধারালো অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে তিন দফা হামলা হয়েছে। আমাদের চোখের সামনে তারা গুলি বর্ষণ করেছে। ভয়ে আমরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ি। ২ দিন একই সময়ে মাগরিবের আগে মোহাম্মদ কবির, বেলাল, হেলাল, দুলালসহ অস্ত্রধারীরা প্রকাশ্যে বন্দুক নিয়ে গুলি ছোড়েছে। হাজার হাজার মানুষ এদের হিংস্রতা দেখেছে। পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: