ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় অবৈধ ২৫ করাতকল, গিলে খাচ্ছে বনাঞ্চল!

ইমরান হোসাইন, পেকুয়া ::
পেকুয়ায় অবৈধ ২৫টি করাত কলের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দিনদিন গাছগাছালি কমছে উপজেলার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার একর বনভূমির। যে বন রক্ষায় সরকারের এত আয়োজন, সেই বন ধ্বংস হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের শুধুমাত্র নজরদারির অভাবে।

স্থানীয় পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করাতকল। অথচ বন বিভাগের নীতিমালায় রয়েছে, সংরক্ষিত বনের দশ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। করাতকল চালাতে হলে প্রয়োজন হবে লাইসেন্স। কিন্তু এসব নিয়মনীতি বালাই মানেন না পেকুয়ায় করাতকল মালিকেরা।

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা আরও বলেন, এসব করাতকল প্রভাবশালী মালিকদের সাথে বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজস রয়েছে। তাই এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তারা টুঁ-শব্দ করেননা। তাই প্রতিনিয়ত বনভূমির গাছ নিধনের ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। একইসাথে কমে আসছে বনাঞ্চলের আয়তন, বিপন্ন হচ্ছে পশুপাখি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পেকুয়ার সংরক্ষিত বনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে অর্ধডজন করাতকল। পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে আরও ৮-১০টি করাতকল। করাতকল গুলো স্থাপন করা হয়েছে লাইসেন্স ছাড়াই। লাইসেন্স বিহীন এসব করাতকলে দিনরাত দেদারছে চলছে সংরক্ষিত বনের চোরাই কাঠ চেরাই। অবৈধ এসব করাতকলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ উপকূলীয় বাঁধ রক্ষা, সামাজিক বনায়নের গাছ অহরহ চেরাই চলছে। ফলে উপকূলীয় বনাঞ্চল এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে। গত একযুগে উপকূলের বেড়িবাঁধ রক্ষায় সৃজিত হাজার একর বনাঞ্চল উজাড় হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

উজানটিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বিল্লাল বলেন, প্যারাবন উজাড় হওয়ায় উপকূলের বেড়িবাঁধ গুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দূর্যোগকালীন ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলীয় কয়েক লাখ মানুষ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলার সড়ক সমূহে উপকূলীয় বনবিভাগের সৃজিত কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। রাতের আধারে কেটে এসব গাছ করাতকলে চেরাই করে চেহারা পাল্টে দেয়া হয়। এছাড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মূল্যবান গর্জন, সেগুন সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাদারট্রি কেটে নদীপথে পাচার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায়। পেকুয়া বাজার কেন্দ্রিক প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। এদিকে বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটি থাকলেও এর কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ইউনিয়নের হাজী বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি করাতকল রয়েছে। অথচ এসব করাতকল থেকে টইটং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। সরকারী নিয়ম কানুন তোয়াক্কা না করে এসব করাতকল স্থাপিত হয়েছে। আর অবৈধ এসব করাতকলে চলছে গাছ চেরাইয়ের মহোৎসব।

পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান, যে যার মতো যেখানে সেখানেই স্থাপন করছে করাতকল। ইতিমধ্যে আমার ইউনিয়নে প্রায় এক ডজন করাতকল স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু এসব করাতকল থেকে বনাঞ্চলের দূরত্ব খুবই কম।

রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নূর জানান, পাহাড় বেষ্টিত টইটং ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেষেই আবর শাহ বাজারে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি করাতকল। যার মাধ্যমে খুব সহজেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ চলে যাচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন উপজেলায়।

এব্যাপারে বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, বারবাকিয়া বনবিটের অধীন এলাকায় ২০টি, টইটংয়ে ২টি ও পহরচাঁদায় ৩টি অবৈধ করাতকল রয়েছে। এসব অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছ। শীঘ্রই অবৈধ করাতকল গুলো উচ্ছেদ করা হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ চৌধুরী জানান, অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: