ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ার মগনামায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সাগর থেকে বালি উত্তোলন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :: পেকুয়ায় সাগর থেকে চলছে বালি উত্তোলনের মহোৎসব। একটি বালি খেকো শক্তিশালী সিন্ডিকেট উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের জেটিঘাটের নিকটে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে বালি উত্তোলন কাজ শুরু করেছে।

খরস্রোতা নদী কুতুবদিয়া চ্যানেলে ড্রেজার বসিয়ে তারা এ সব বালি কুলে এনে মজুদ করছে। সাগরের তীরবর্তী মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমপ্রান্তে কুতুবদিয়া চ্যানেলের সংশ্লিষ্ট জেটিঘাটের উপকুলীয় বনবিভাগের মগনামা বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই এ বালি উত্তোলন কাজ চলমান রাখে।

গত কয়েকদিন আগে থেকে ওই চক্র সাগর থেকে বালি তোলার কাজ আরম্ভ করে। তবে প্রথম ধাপে তারা প্রশাসনের অভিযানে পড়ে তোপের মুখে। উপকুলীয় বনবিভাগ বালি উত্তোলনে নিষেধ করে। এমনকি পেকুয়ার সহকারী কমিশন (ভূমি) মীকি মারমা ওই স্থানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছেন। এ সময় বালি উত্তোলনের জন্য বসানো পাইপসহ কিছু যন্ত্রপাতিও জব্দ করা হয়। জড়িত থাকার দায়ে ড্রেজারের কর্মরত ৩ জনকে আটকও করেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বালি উত্তোলন শুরু করা হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে, সাগর থেকে বালি উত্তোলনের মহোৎসব অব্যাহত রয়েছে। মগনামা জেটিঘাটের একটু উত্তরে উপকুলীয় বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই বসানো হয়েছে পাইপ। পাউবোর বেড়িবাঁধ কেটে মাটির তলদেশ দিয়ে পাইপগুলো সাগর থেকে আনা হয়েছে লোকালয়ে।

কুতুবদিয়া চ্যানেলের নদীর অংশ থেকে উপকুলীয় বনবিভাগের সৃজিত সবুজ বেষ্টুনির বাগানের ভেতর দিয়ে পাইপগুলো সঞ্চালন করা হয়েছে। নদীর কুল থেকে এসব পাইপ প্রায় ১ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে লবণ মাঠের উপর দিয়ে মগনামা ইউনিয়নের বিসমিল্লাহ সড়কের নিকট গিয়ে পৌছে।

ফতেহআলীমার পাড়ার তমিজ আহমদের বাড়ির নিকট একটি বিশাল পুকুরে পাইপগুলো পৌছে। পুকুরের পৌছতে কাটা হয়েছে সড়ক। বালি খেকো সিন্ডিকেট গত ২ দিন আগে এ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের মালিকানাধীন বনৌজা শেখ হাসিনা নৌঘাঁটির সংযোগ মহাসড়ক কেটে ফেলে। গভীর রাতে সড়কটি কেটে মাটির তলদেশ দিয়ে পাইপ স্থাপন করে। ২০ ইঞ্চি প্রস্থের ওই পাইপ দিয়ে সাগর থেকে তোলা হচ্ছে বালি।

স্থানীয় সুত্র জানায়, উপকুলীয় বনবিভাগের মগনামা বনবিট কর্মকর্তা হোসনে মোবারক ওই কাজের বাধা প্রয়োগ করছিলেন। পাইপ বসানোর প্রথম দফায় বনবিভাগের ওই কর্মকর্তা দিয়েছিলেন বাধা। ১ সপ্তাহ আগে কিছু পাইপ জব্দও করা হয়েছে। তবে একদম গুটিয়ে ফেলা হয়নি। মাত্র ৫/৬ দিনের ব্যবধানে ১৬ মার্চ সকাল থেকে ফের বালি উত্তোলন কাজ শুরু হয়েছে। এ দিকে সাগর থেকে বালি উত্তোলন নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

বালি উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। ১৬ মার্চ বালি উত্তোলন থামাতে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ মগনামা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো: রোকন উদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পেকুয়াকে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বালি উত্তোলনের জন্য মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌং ওয়াসিমকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আর্জিতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রোকন উদ্দিন জানান, ওয়াসিম চেয়ারম্যান ও তার অনুগত বিএনপি ঘরানার গুটিকয়েক ব্যক্তি বালি তুলছে। কত বড় সাহস এ চেয়ারম্যানের। বেড়িবাঁধ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে মহাসড়ক কেটে ফেলেছেন। আমরা জানতে চাই ওই চক্রের এতবড় খুঁিটর জোর কোথায়।

উপকুলীয় মগনামা বনবিট কর্মকর্তা হোসনে মোবারক জানান, আমরা দু’বার অভিযান দিয়েছি। কিন্তু চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা বেপরোয়া হয়ে গেছে। এ ভাবে বালি তোলতে থাকলে প্যারাবনের সৃজিত বাগান উজাড় হয়ে যাবে।

সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাছেম বিল্যাহকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

.

পাঠকের মতামত: