মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামায় আবু ছৈয়দ (৪০) কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামী মো: আনিস (২৮) কে জোর করে অপহরণপূর্বক শারিরীক ও মানসিকভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে বেআইনীভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী মোবাইলে ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একদল দূর্বূত্তের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে, গতকাল ২২ নভেম্বর রাত ৯টা থেকে রাত সাড়ে তিনটার মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন এলাকায়। অপহরণ ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার যুবক মো: আনিস (২৮) পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের আফজলিয়া পাড়া গ্রামের আহমদ প্রকাশ অইন্যার ছেলে। এবং তিনি মগনামার কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবু ছৈয়দ হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত ৯ নং আসামী।
উল্লেখ্য যে, পেকুয়ায় আলোচিত জয়নাল হত্যা মামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ও বহু মামলার আসামি আবু ছৈয়দকে (৪০) কে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর বিকাল ৫টার দিকে মগনামা আফজলিয়া পাড়া গ্রামে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত আবু ছৈয়দ একই এলাকার মৃত বদিউর রহমানের ছেলে। ঘটনার পরদিন আবু ছৈয়দের পরিবার পেকুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আনিসকে ৯ নং আসামী করা হয়।
তবে, আনিসের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আবু ছৈয়দ হত্যার ঘটনায় আনিসের কোন সম্পৃক্ততা ছিলনা। এরপরও অন্যায়ভাবে আনিসকে আবু ছৈয়দ হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। মামলার পর থেকে আনিস চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। ঘটনার দিন গতকাল ২২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন এলাকার ওয়াফদা গেইট থেকে আনিসকে নিহত আবু ছৈয়দের ভাগিনা জসিমের নেতৃত্বে ২/৩ জনের একদল দূর্বূত্ত অপহরণ করে অক্সিজেন এলাকার একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন। এসময় জসিমের নেতৃত্বে আনিসকে ব্যাপক মারধর করে হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে বেআইনীভাবে জোরপূর্বক আবু ছৈয়দ হত্যাকান্ডে জড়িত নয় এমন নিরীহ লোকজনের নাম তার মুখ দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয়। পরে জসিমের সাথে থাকা দূর্বূত্তরা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় আনিসের কাছ থেকে জোর পূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে আনিসের পরিবার জরুরী সহায়তা সেল ৯৯৯ ফোন করে আনিসকে উদ্ধারে পুলিশের সহযোগীতা চান। পরে চট্টগ্রাম সিএমপির বায়েজিদ থানায় অপহরণকারীদের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন আনিসের পরিবার। থানায় অভিযোগ দায়ের এর খবর পেয়ে আনিসকে অপহরণের সাথে জড়িত জসিমের নেতৃত্বে দুর্বূত্তরা দূর্বৃত্তরা কৌশল অক্সিজেন এলাকায় টহলরত বায়েজিদ থানা পুলিশের একটি টীমের কাছে সোপর্দ্দ করেন। পরে পুলিশ আনিসকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, বায়েজিদ থানায় নেওয়ার পর অপহরণের শিকার আনিস পুলিশের কাছে বিস্তারিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। পুলিশকে আনিস জানায়, সে রাতে অক্সিজেন এলাকার ওয়াপদা গেইটে নাস্তা খাওয়ার জন্য বের হলে তার এলাকায় মারামারির ঘটনা নিহত আবু ছৈয়দের ভাগিনা জসিমের নেতৃত্বে আরো ২/৩ জন দূর্বূত্তের নেতৃত্বে তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং বলে তোর নামে মার্ডার কেস আছে।
এরপর তারা জোর করে একটি সিএনজিতে উঠিয়ে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে শারিরীক ও মানুষিক ব্যাপক নির্যাতন করে মগনামার সাবেক চেয়ারম্যার ওয়াসিমের বিরুদ্ধে কথা বলায়। এবং আমাকে মেরে ফেলার হত্যার হুমকি দিয়ে বলে যে, আমরা যা শিখিয়ে দিচ্ছি তা মোবাইলের ক্যামেরার সামনে বলো। মকসুদ, মাহামুদুল করিম, আবদুস সালাম, রেজাউল করিম আমাকে জোর করে ওয়াসিম চেয়ারম্যানের নাম বলতে বলে। যাতে করে ওয়াসিম চেয়ারম্যানকে মার্ডার কেইসে জড়ানো যায়! সেখানে তারা আমার মোবাইল ফোনও তারা কেড়ে নেয়। আবু ছৈয়দ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ওয়াসিম চেয়ারম্যানের কোন দোষ নেই। ঘটনার সময় ওয়াসিম চেয়ারম্যান দেশের বাইরে ছিল। এসবের পরও অপহরণকারীরা আমাকে মারধর করে বেআইনীভাবে ওয়াসিম চেয়ারম্যান আবু ছৈয়দ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত রয়েছে মর্মে অবৈধ ও বৈআইনীভাবে স্বীকারোক্তিমূলক আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। আমাকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসী জসিম ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২ মে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মগনামার ফুলতলা স্টেশনের একটি চায়ের দোকানে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনকে। এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি ছিলেন মগনামার কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবু ছৈয়দ। এ হত্যা মামলায় জেল কেটে ছয়মাস আগে জামিনে বের হন আবু ছৈয়দ। আর জামিনে বের হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন হত্যা মামলার আসামী। এর জের ধরেই হত্যাকান্ডের শিকার সন্ত্রাসী আবু ছৈয়দ।
পেকুয়ার একজন সিনিয়র আইনজীবি নাম প্রকাশ না করার শর্কে এ প্রতিনিধিকে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড ও স্বাক্ষর করার যে পদ্ধতি বলা হয়েছে, সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দী দাতার স্বাক্ষর নেবেন এবং স্বাক্ষর নেয়ার আগে তিনি কী জবানবন্দি দিয়েছেন, তা তাকে অবশ্যই পড়ে শোনাবেন।
কিন্তু ফৌজধারী কার্যবিধি লংঘন করে বেআইনীভাবে একটি হত্যা মামলার আসামীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে আটকিয়ে রেখে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষের নাম উল্লেখ করিয়ে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সাইবার সিকিউরিটি আইনে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধের শামিল। এটি আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়া হত্যা মামলার আসামীর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী রেকর্ডের ক্ষমতা কারো নাই।
পাঠকের মতামত: