এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরুর চুরির অপবাদ দিয়ে রশিতে বেঁেধ পরিষদে এনে মা-মেয়েকে কাঠের চেয়ার ও লাঠি দিয়ে নিজহাতে পিঠিয়েছেন বির্তকিত ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম। নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রাথমিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা ও হারবাং পুলিশ ফাঁিড়র আইসি পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম আদালতে কাছে দাখিল করা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৫ আগস্ট চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের এ কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, গত ২১ আগষ্ট চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে ২৫-৩০জন যুবক গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে কোমরে রশি বেধে রাস্তায় হেটে হেটে পরিষদে নিয়ে আসেন। সেখানে দুইজন চৌকিদার দিয়ে মারধর করার পর একপর্যায়ে হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই কাঠের এবং লাঠি দিয়ে মারধর করেন।
পুলিশের প্রতিবেদনে, ঘটনারদিন পারভীন আক্তার, তাঁর দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার, ছেলে এমরান ও সিএনজি চালকে মারধর করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ওইসময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
এদিকে মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনাটি সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সর্বমহলে নিন্দার ঝড় ও অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবী উঠে। পাশাপাশি হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ থেকেও বহিস্কারের দাবী জোরালো হতে থাকে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও গণমাধ্যম গুলোতেও বির্তকিত চেয়ারম্যান মিরানের নানা অপকর্ম, ঘুষ দূর্নীতি বিচার বাণিজ্য, সরকারি ও বনবিভাগের জায়গা দখলের মতো ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৪ আগষ্ট রাতে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের লালব্রীজ এলাকার নাছির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ৫৪ ধারায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। পরদিন ২৫ আগষ্ট নির্যাতিত পারভীন আক্তার বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ইউপি চেয়ারম্যান মিরানসহ চার আসামীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
একইদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারবাং ফাঁড়ির (আইসি) পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি আবেদন করেন। আবেদনে গ্রেফতার হওয়া তিন আসামীকে ওই মামলায় আসামী দেখানো হয়।
আবেদনে আরো উল্লেখ করেন, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে চেয়ারম্যান মিরান মা-মেয়েকেসহ ৫জনকে প্রথমে কাঠের চেয়ার দিয়ে ও পরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। তদন্তে এ বিষয়টি উঠে এসেছে চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষভাবে এ ঘটনার সাথে জড়িত।
জানা গেছে, মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি ও চকরিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের সুয়োমোটো মামলায় আরো একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এক দফা সময় বাড়িয়েছে। এখনো দুইটি তদন্ত দলের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা পড়েনি। অপরদিকে গত ২৫ আগস্ট চেয়ারম্যানকে আসামি করে চকরিয়া থানায় মামলা হলেও গেল ১১দিনেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পুলিশ বলছে, মামলাটি রুজু হবার পর থেকে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাকে গ্রেফতারে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও বসতঘরে দুইদফা অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।
পাঠকের মতামত: