রফিকুল ইসলাম, উখিয়া :: কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সরকারের কোন নির্দেশ মানছে না জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থাগুলো। এমনকি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তও উপেক্ষা করে হাতির নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র পাহাড় কেটে বনভূমির রূপ পরিবর্তন অব্যাহত রেখেছে এরা। এতে স্থানীয় লোকজনের মাঝে সরকারের দ্বৈত নীতিতে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
কুতুপালং মেগা বর্ধিত-৪ নং ক্যাম্পের সরকারি ইনচার্জ অফিসের একটু আগের অক্ষত সরকারি রিজার্ভ বনের পাহাড়গুলো গত কয়েকদিন ধরে একাধিক বোল্ডডোজার দিয়ে কেটে কুটে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা ও দেশের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত আছেন।
কিন্তু দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের বর্ধিত-৪ নংয়ে উল্লেখিত এলাকায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার অর্থায়নে বিদেশি এনজিও অক্সফাম গত সপ্তাহ ধরে পাহাড় কাটছে।
কয়েকটি এনজিওর স্থানীয় কর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের নামে বা অন্য কোন বাহনায় জাতিসংঘের শরণার্থী ও অভিবাসন সংস্থা এবং অক্সফাম, এমএসএফ, কারিতাস, ব্রাকসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড উদ্বেগের। এরা যেভাবে উখিয়া ও টেকনাফের পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে তা আর চলতে দেয়া যায় না। কারণ ওরাই তো পরিবেশ, বন, জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাদের মত দেশগুলোকে বেশি নসিহত করে থাকে। তারা জানান, কিন্তু ওদের স্বার্থের জন্য এরা কোন নিয়ম নীতি বা আইন মানে না।
উল্লেখ্য, গত ১৭ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যগণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরদিন কক্সবাজারের উক্ত কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বনজ সম্পদ উজাড় করে হাতিসহ প্রাণী জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। রোহিঙ্গার কারণে আর কোন বনাঞ্চলের ক্ষতি নয় ও হাতির নিরাপদ বিচরণ স্থল সংরক্ষণের তাগিদ দেয়া হয়েছিল বৈঠকে। কিন্তু বর্তমানে যেখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে সে স্থানটি ছিল হাতির অন্যতম বিচরণ স্থল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগ।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়ার উক্ত এলাকায় ব্যাপক আকারে বোল্ডডোজার দিয়ে পাহাড় কাটতে দেখা গেছে। ৩টি বোল্ড ডোজার দিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে ৭/৮টি ট্রাক নিয়ে ঐসব মাটি পাহাড় সংলগ্ন খাদ ও নিচু এলাকা ভরাট করেছে। এতে প্রাকৃতিক বন ছোট ছোট জলাধার ভরাট হচ্ছে। আবার পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনের শ্রেণী ও বনভূমির রূপ পরিবর্তন হয়ে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় সংক্রান্ত ইমার্জেন্সি পিরিয়ড শেষ হয়েছে অনেক আগে। সরকারের বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, দেশি বিদেশি এনজিওগুলো এখানকার বনজ সম্পদ ও স্থানীয় লোকজনের চরম ক্ষতিকর কাজ অব্যাহত রাখা মোটেও ভাল হচ্ছে না।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া ও ইনানী বন রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক কাজী তারিকুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বন বিভাগের কোন কার্যক্রম নেই। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ বা সিআইসিরা সব কিছু দেখভাল করছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ ও অন্যান্য পরিবেশ ক্ষতিকর কাজের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। ক্যাম্পের কোন কাজে বন বিভাগকে সম্পৃক্ত না রাখায় বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর চরম ক্ষতিকর আচরণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোন ধরনের নতুন স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় কাটা, বনজ সম্পদের ক্ষতিকর সব ধরনের কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধ রয়েছে। কারা কেন নতুনভাবে এসব করছে তা তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। তবে ক্যাম্পগুলোর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও দেখ ভালো করতে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন বলেও তিনি জানান।
পাঠকের মতামত: