ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটন শহর এখন রেড জোন, চলছে ১৪ দিনের কড়া লকডাউন

ইমাম খাইর, কক্সবাজার ::  করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরকে রেড জোনভুক্ত করেছে প্রশাসন।
শুক্রবার (৫ জুন) দিবাগত রাত ১২ টা থেকে দ্বিতীয় দফায় লক ডাউন শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২০ জুন রাত ১২ টায়। প্রাথমিকভাবে পৌরসভার ১২টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে শুক্রবার জরুরি নির্দেশনা জারি করেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।

শনিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনসাধারণ এবং যানবাহন চলাচলের উপর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিনা প্রয়োজনে জনসাধারণকে বাসার বাইরে না আসতে অনুরোধ করা হচ্ছে। মাঠে রয়েছে প্রশাসনের শক্তিশালী টিম।

দেখা গেছে, দুপুরে বিমানবন্দর সড়কের প্রবেশমুখে নিজের টিমসহ দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার।

এ সময় কথা হলে তিনি জানান, নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে এটিই সুযোগ। অজুহাত দেখানো মানে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া।

করোনা সংক্রমণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় কক্সবাজার শহরকে রেড জোন ঘোষণা করে প্রশাসন।

এই সময়ে প্রয়োজনীয় যানবাহন চলাচল, ঔষধের দোকান এবং সপ্তাহে দুই দিন কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। একান্ত জরুরী ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারবেনা।

রেড জোন এলাকার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা হলো-
ক. সকল প্রকার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। সকল জনসাধারণ আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ আবাসস্থলে অবস্থান করবে।

খ. সকল ব্যক্তিগত ও গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বহনকরী হালকা ও ভারী যানবাহন রাত ৮ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। কোভিড ১৯ মোকাবেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি গাড়ি চলাজচলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি গ্রহণ করবে। এম্বুলেন্স, রোগী পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যত্তিবর্গের (অনডিউটি) পরিবহন, কোভিড ১৯ মোকাবেলা ও জরুরী সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের গাড়ি এর আওতার বাইরে থাকবে।

গ. সকল প্রকার দোকান, মার্কেট, বাজার, হাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। কেবলমাত্র রবিবার ও বৃহস্পতিবার কাঁচা বাজার ও মুদি দোকান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। ঔষধের দোকান এর আওতার বাইরে থাকবে।

ঘ. কেবলমাত্র কোভিড ১৯ মোকাবেলা ও জরুরী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খোলা থাকবে। কেবলমাত্র রবিবার ও বৃহস্পতিবার ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা থাকবে। সকল হাসপাতাল, চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কোভিড ১৯ মোকাবেলায় পরিচালিত ব্যাংকিং সেবা প্রদান এর আওতার বাইরে থাকবে।

ঙ. জরুরি সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত সংবাদকর্মীদের রেড জোনে কাজ করার নিমিত্ত কক্সবাজার প্রেস ক্লাব কর্তৃক প্রদত্ত ছবিযুক্ত বিশেষ পরিচিতি পত্র দৃশ্যমান অবস্থায় গলায় ঝুলানো থাকা সাপেক্ষে এবং কোভিড ১৯ মোকাবেলায় রেড জোনে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কক্সবাজার সদর কর্তৃক প্রদত্ত ছবিযুক্ত বিশেষ পরিচিতিপত্র দৃশ্যমান অবস্থায় গলায় ঝুলানো থাকা সাপেক্ষে কাজ করার অনুমতি দেয়া হবে।

চ. সকল প্রকার গণপরিবহন টার্মিনাল রেড জোনের বাইরে স্থানান্তর করতে হবে।

ছ. প্রকাশ্য স্থানে বা গণজমায়েত করে কোন প্রকার ত্রাণ, খাদ্য সামগ্রী বা অন্য কোন পণ্য বিতরণ করা যাবে না।
এ লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্ড কমিটিসমূহ নির্দেশনাবলী কঠোরভাবে বাস্তবায়নে দায়িত্বপালন করবে। কোভিড ১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে জনস্বার্থে এ নির্দেশনা প্রদান করা হল।

জেলা প্রশাসনের ৫ জুনের আপডেট তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ৮৭২ জন। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২৫৮ জন। মারা গেছে ১৯ জন। আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ৫৯৫ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে ৩৫৬৬ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৮৩৭ জন। ছাড়পত্র পেয়েছে ২৫১২ জন।

এছাড়া ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে একজন রোহিঙ্গা মারা গেছে। চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩৪ জন।

পাঠকের মতামত: