রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :
পাহাড় ধসের পর থেকে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি। ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙ্গামাটির সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কোন পর্যটক রাঙ্গামাটিমুখি হচ্ছেন না। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রাঙ্গামাটির সংযোগ সড়কে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করা হলে ও ঈদ উপলক্ষে রাঙ্গামাটি এখন অনেকটাই পর্যটক শূন্য। পাহাড় ধসের পরবর্তীতে ১৪ দিন ধরে রাঙ্গামাটি শহরে আশানুরূপ পর্যটক না আসায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
পাহাড় ধসের কারণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ির শালবনে ১০০ মিটার রাস্তা ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় পর্যটককের আগমন। পাহাড় ধসের ৯ দিনের মাথায় সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগ সাপছড়ি ধসে পড়া রাস্থার সেই স্থানে একটি বিকল্প সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে গত ২১ জুন হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়। কিন্তু তার পরও রাঙ্গামাটি শহরে তেমন পর্যটক নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও শহরের পাহাড় ধসের কারণে রাঙ্গামাটি শহর একেবারে পর্যটক শূন্য।
রাঙ্গামাটির স্থানীয় আবাসিক হোটেল হিল পার্কের ম্যানেজার স্বপন শীল বলেন, রাঙ্গামাটি শহরে ছোট বড় মিলে মোট ৫৭টি হোটেল রয়েছে। প্রতিবছর ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের আগমনে হোটেল মোটেলগুলো পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকলেও এবারে সম্পূর্ণই তার উল্টো। কারণ পাহাড় ধসের কারণে রাঙ্গামাটির সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হওয়াতে পর্যটন শহর রাঙ্গামাটির এখন এই অবস্থা। পাহাড় ধসের কারণে বর্তমানে স্থানীয় হোটেলগুলোর সব রুমই অনেকটাই ফাঁকা।
পাহাড় ধসের কারণে শুধুমাত্র হোটেল ব্যবসা নয় প্রতিটি সেক্টরই অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। পর্যটক না থাকায় স্থানীয় ছোট টুরিস্ট বোটগুলো বেকার বসে আছে ঘাটে। এ কারণে বোট চালকদেরও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের স্থানীয় বোট চালক মো. আলমগীর।
পর্যটন নৌ-যান বোট মালিক সমিতির ইজারাদার মো. রমজান আলী জানান, পাহাড় ধসের কারণে এবার তাদের ব্যবসা নেই বললেই চলে। পর্যটক না আসাতে তারা বসে বসে বেকার সময় কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে রাঙ্গামাটির তাঁতবস্ত্র। পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটিতে না আসায় এবার উপজাতীয় তাঁতবস্ত্র শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক মালিকরা অনেকটা ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মূখিন হবে বলে জানান রাঙ্গামাটির তাঁতবস্ত্র শিল্পের মালিকরা। ঈদ মৌসুমে পর্যটকদের আগমন ঘটলে উপজাতীয় তাঁতবস্ত্র শিল্প ব্যবসা চাঙ্গা থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, পাহাড় ধসের কারণে রাঙ্গামাটিতে পর্যটক না আসাতে এবার পর্যটনের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সড়কে পুনরায় ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করাসহ রাঙ্গামাটির সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে আবারো পর্যটকদের পদচারণায় মূখরিত হবে পাহাড়িকন্যা রাঙ্গামাটি। এমন দিনের প্রত্যাশায় আছেন রাঙ্গামাটির মানুষ।
পাঠকের মতামত: