ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটক টানতে বদলে যাবে কক্সবাজার

নিউজ ডেস্ক :: পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকতে থাকা কক্সবাজারের দুর্দশা ঘোচাতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পর্যটননগরীটির পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০১৬ সালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হলেও তেমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারছিল না। তবে এখন সব কটি উপজেলা নিয়ে হতে যাচ্ছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। ড্যাপ চূড়ান্ত হলে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন হবে কক্সবাজার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ২০১৬ সালে ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন’ অনুমোদিত হয়। এরপর একই বছরের আগস্টে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে স্থাপনার অনুমোদন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত দায়িত্ব বেশ কয়েকটি সংস্থার হাতে ছিল। ফলে উন্নয়নে সমন্বয়ের অভাব ছিল দৃশ্যমান। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে কক্সবাজারকে বিশ্বমানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে দাঁড় করাতে বেশ কয়েকটি ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কউক।
শহরটিতে পরিকল্পনামাফিক ভবন নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধন, যানজট নিরসন এবং পরিবেশগত উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় নিয়ে এসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৬৯০ বর্গকিলোমিটার জায়গা অধিক্ষেত্র করে এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এই বিশাল জায়গার ওপর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে। ‘পর্যটননগরী কক্সবাজার জেলার মহাপরিকল্পনা’ নামের প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

কউক সূত্র মতে, কক্সবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থা দায়িত্ব পালন করায় শুরুর দিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশ জটিলতা দেখা দেয়। তবে ড্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বহুতল ভবনের অনুমতি দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজারের হাজার বছরের ঐতিহ্য লালদীঘি, গোলদীঘি ও বাজারঘাটা পুকুরগুলো বর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। পুকুরগুলোর পার বাঁধানো, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বসার স্থান, আলোকসজ্জা, সবুজ বেষ্টনী, স্ন্যাকস বারসহ পর্যটকবান্ধক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব স্থান পর্যটক ও স্থানীয়দের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর বাইরে শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চারটি ভাস্কর্য নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। যানজট নিরসনে নগরীর হলিডে মোড় থেকে বাজারঘাটা হয়ে লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের প্রকল্পটি একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। গত ৯ অক্টোবর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধনও করেছেন। ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন, সবুজায়ন, ফুট ওভারব্রিজ, সড়ক বাতি স্থাপন (বিদ্যুতায়ন), ফুটপাত নির্মাণ, ড্রেন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপন ও স্যুভেনির শপ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বাঁকখালী নদীসংলগ্ন ১৫০ ফুট প্রশস্ত সবুজ বেষ্টনীসহ বিকল্প সড়ক উন্নয়ন, কালুর দোকান থেকে লাইট হাউস পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে প্রকল্প দুটির ডিজিটাল জরিপ শেষ হয়েছে। ৬০ শতাংশ খোলা জায়গা রেখে একটি আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কউক। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে ওই প্রকল্পে। আবাসন প্রকল্পটির চারপাশে ২০ ফুট চওড়া রাস্তাও থাকবে। বিভিন্ন আয়তনের ৩৫১টি ফ্ল্যাট রয়েছে আবাসন প্রকল্পটিতে। আবাসন প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

এর বাইরে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দুই পাশে এক লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। সমুদ্রসৈকতের লাল কাঁকড়া, সাগরতলা, কচ্ছপ, ডলফিনসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাঁচটি স্থান বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছে। শুরুর দিকে শুধু কক্সবাজার সদরের জমি নিয়ে ড্যাপ তৈরির চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন ড্যাপে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজারের সব কটি উপজেলা।
কউকের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের ফলে। ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হলে পুরো কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। আবাসন, পর্যটকদের থাকার স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, উন্মুক্ত জায়গা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ড্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।’

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, মূলত কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপসহ অন্যান্য এলাকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার এলাকায় ইমারত নির্মাণের জন্য এত দিন বিশেষায়িত কোনো সংস্থা ছিল না। ফলে সেখানে অনেকটাই অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। তবে বর্তমানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের পর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি আওতাধীন এলাকার ভবন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, পাহাড় কাটা, সমুদ্রসৈকতের পাশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক হোটেল, ভবন অথবা পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আইনে থাকা বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা বা বিশেষ পর্যটন অঞ্চল নিয়েও কাজ করছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, ‘কক্সবাজারকে বিশ্বমানের পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজসহ বিচ দখল ঠেকাতে ব্যাপক কাজ করা হচ্ছে। পুরো কক্সবাজার ঘিরে আমাদের মাষ্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।’সুত্র: কালেের কন্ঠ

পাঠকের মতামত: