ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটকদের হাতে সমুদ্র সৈকতের সর্বনাশ! 

শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার :: পর্যটন রাজধানী হিসেবে খ্যাত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের বিশাল এলাকা ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। যতদূর চোখ যাবে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি চোখে পড়ছে সমুদ্র সৈকতে উচ্ছিষ্ট আবর্জনার স্তুপগুলো। ধব-ধবে সাদা বালির দ্বীপে দৃশ্যমান এসব আবর্জনার স্তুপ দেখে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে বিশাল এই সমুদ্র সৈকত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকনে পুরো বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটকের সমাগম থাকে সমুদ্র সৈকতে। ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রত্যাশা একটি পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকত। দেখভালের দায়িত্বে থাকা সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকায় এ প্রত্যাশার জায়গাটি দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে।

সৈকতে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের মতে, সৈকতে অপরিকল্পিত দোকানঘর ও পর্যটকদের ব্যবহৃত চিপ, চানাচুর, বিস্কুট ও পান সিগারেট এবং দোকানপাটের চা-পাতি ও টি-প্যাকের ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। জমে থাকা বর্জ্যরে উটকো গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দম বন্ধ করে চলতে হচ্ছে পর্যটকদের। নারিকেলের ছোবড়া এখানে-সেখানে ফেলে রাখায় সৈকতের পরিবেশ আরো নোংরা হচ্ছে।

বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নিস্ক্রিয়তার কারণে যথারীতি ব্যবহার হচ্ছে না ওই ডাস্টবিনগুলো- এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক পর্যটক ও সৈকতের পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেল মোটেল মালিক সমিতির এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে কোনো ব্যবসায়ী বা জনপ্রতিনিধি নেই। যারা ওই কমিটিতে আছে তাদের কোনো তৎপরতা আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

জানা যায়, সমুদ্র সৈকতের বিশাল এলাকা জুড়ে আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ডাবের খোসা, কাগজের টুকরো, উচ্ছিষ্ট খাবারের প্যাকেট, কলার ডগা, কলার চামড়াসহ পঁচা দূর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনাগুলো যেখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে পুরো সৈকত জুড়ে। এতে সৌন্দয্যহানীর পাশাপাশি দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এসব আবর্জনা থেকে।

ধব-ধবে সাদা বালির ছোট ছোট দ্বীপের উপর যেখানে বসে পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দয্য অবলোকন করবেন সেখানেই এসব আবর্জনাগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। এতে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকরা এসব দেখে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। দৈনন্দিন এসব আবর্জনা সরানোর ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট খন্ড আকারে পুরো সৈকত জুড়ে রয়েছে এসব আবর্জনার স্তুপ। বিশেষ করে সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তরে পাশ্বে, মসজিদের পেছনে, হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের সামনের ঝাউবাগানে, উর্মি গেস্ট হাউজের সামনে, বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট, হোটেল সী-গালের সামনে, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, ইয়াছির লাইফ গার্ডের সামনেসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ময়লা-আবর্জনাগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এসব ডাবের খোসা, কাগজের টুকরো, উচ্ছিষ্ট খাবারের প্যাকেট, কলার ডগা, কলার চামড়াসহ আবর্জনায় পরিপূর্ণ। আবর্জনাগুলো থেকে বের হচ্ছে দূর্গন্ধ।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ঢাকার আয়েশা, কুমিল্লার শাহীন মাহজন, সিরাজগঞ্জের হাবিব, পাবনার জোবাইদা জানান, সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা যেখানে-সেখানে ডাব ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করায় এসব ডাবের খোসা ও আবর্জনাগুলো পড়ে রয়েছে যেখানে-সেখানে। এসব ময়লা-আবর্জনা সৈকতের সৌন্দর্য্যহানীর পাশাপাশি দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ও মশা-মাছি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাজশাহী থেকে আসা মামুন-কেয়া দম্পতি জানান, সৈকতে নিচে হকার ও ভিক্ষুকদের যন্ত্রণা ও উপরে ধব-ধবে বালুচরগুলো আবর্জনার স্তুপে পরিপূর্ণ। বসাটা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এসব আবর্জনাগুলো সৌন্দর্য্যহানীর পাশাপাশি দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বৃহৎ স্বার্থে সংশ্লিষ্ট মহলের এসব আবর্জনা সরিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।

সৈকতে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নকর্মীরা জানিয়েছেন, এসব আবর্জনা আমরা দৈনন্দিন কুঁড়িয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করি। দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্টরা এসব আবর্জনা নিয়ে না যাওয়ায় স্তুপে পরিণত হয়েছে।

সচেতন মহল জানিয়েছেন, পুরো সৈকত এলাকা অবৈধ ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের দখলে। এসব ব্যবসায়ীরা ডাব, কলাসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে যেখানে-সেখানে। বিক্রয় পরবর্তী এসব ডাবের খোসা, কলার ডগা, চামড়া, প্যাকেটসহ ময়লা-আবর্জনা ফেলা রাখা হয় অবহেলিতভাবে। তাই পরিচ্ছন্ন করার চেয়ে অপরিচ্ছন্ন যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এজন্য সৈকতের অবৈধ ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

পাঠকের মতামত: